• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
বিক্রেতাদের নানা অজুহাত

ব্রয়লার মুরগি এক মাসে কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা


আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২, ০৮:৩৭ এএম
ব্রয়লার মুরগি এক মাসে কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা

চলছে শীতের মৌসুম। তাই এই সময়ে ভোক্তাদের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি থাকে। কিন্তু উৎপাদন কম থাকায় বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। এক মাসের ব্যবধানে আমিষজাতীয় খাদ্যপণ্যটির দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশান ডিএনসিসি কাঁচাবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। এক মাস আগেও এটি পাওয়া যেত ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।

ভোক্তারা অভিযোগ করেন, কয়েক দিন পরপরই ব্যবসায়ীরা নানা কারণ দেখিয়ে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ান। দাম বাড়ানোর কারণের কোনো অভাব থাকে না। দাম বাড়লে সহজে আর কমে না।

গুলশান ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে মুরগি ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, “আগে মুরগি সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু এখন উৎপাদন বাড়াতে মুরগি ভালো আসছে। শীতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি থাকে। তাই একদিকে করোনা এবং অন্যদিকে শীতের জন্য দাম বেড়ে যায়। গত মাসেও আমরা ব্রয়লার ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা বিক্রি করেছি। বর্তমানে এই বাজারে ১৮০ টাকা ব্রয়লার মুরগি আর সোনালি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আশা করি, শীত কমলে দামও কমবে।” 

মহাখালী কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগির দোকানে মো. শহীদ নামের একজন ক্রেতা বলেন, “ব্রয়লার মুরগির এত দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এর আগে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায়ও ব্রয়লার কিনেছি। কিন্তু হঠাৎ করে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা হয়েছিল। কিছুটা দর কমাতে এখন ১৯০ টাকা করে কিনলাম।”

আরেক ক্রেতা মো. আসাদুল্লাহ অভিযোগের স্বরে জানান, উৎপাদন পর্যায়ে দাম পাঁচ টাকা বাড়ালে খুচরা পর্যায়ে আসতে আসতে সেই পাঁচ টাকা পরিণত হয় ৫০ টাকায়। এতে সব সময় ঠকছেন সাধারণ মানুষ। এলাকা অনুযায়ী পণ্যের দামও ভিন্ন বা কমবেশি হয়ে থাকে।

পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে তাই বাজারে নিয়মিত তদারকি বাড়ানোর আহ্বান জানান এই ক্রেতা।

এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজার দরের তথ্যেও দেখা গেছে মুরগির দাম বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ছিল ১৭০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এক মাস আগেও প্রতি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা ছিল। এমনকি এক বছর আগেও ব্রয়লারের কেজি ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। সেই হিসাবে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে পণ্যটির।

মহাখালী টিবি গেটসংলগ্ন কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগির দোকানদার মো. নিজাম বলেন, “শীতকালে বিয়ে, পিকনিক এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে এ সময় ব্রয়লারের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সেই তুলনায় ব্রয়লারের সরবরাহ বাড়ছে না। আবার অনেক পোলট্রি ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। তাই দামে প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কম হওয়াতে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার কিনতে আসা মো. সাইফুদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ। তাই দাম বাড়লেও আমাদের কিছু করার নেই। যেকোনো পণ্যের হঠাৎ করেই দাম বেড়ে যায়। কারণ ভালোভাবে বাজার মনিটরিং না করলে একেক জায়গাতে ভিন্ন রকম দর হয়ে থাকে।”

কারওয়ান বাজারে মুরগি বিক্রেতা মো. জিয়াউল হক বলেন, “গ্রামে ব্রয়লার উৎপাদন কম হওয়াতে ঢাকায় আসার পর দাম বেড়ে যায়। গত একমাস আগেও ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করেছি।”

তবে শীতে এমনিতেও একটু দর বেশি থাকে বলে দাবি করেন এই বিক্রেতা।

আরেক মুরগি ব্যবসায়ী মো. হারুন বলেন, “দর বৃদ্ধির কারণ হলো বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম। উৎপাদন কম হওয়ার কারণেই সরবরাহ কম, আর এজন্য দাম বেশি।”

এদিকে ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি জাতের মুরগির। ব্যবসায়ীরা এই ধরনের মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। মাসখানেক আগে ক্রেতারা এ জাতের মুরগি কিনতে পারতেন ২৫০ থেকে ২৭০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে প্রতি কেজি লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা।

সবজি বাজারের দরদাম

বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে বেশির ভাগ সবজির দাম। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটোল ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, লম্বা বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকায়, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, ঢেঁড়স ৫০ টাকায়, টমেটো ৫০ টাকায়, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, করলা (দেশি) ৮০ টাকায়। এছাড়া ফুলকপি পিসপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, লাউ ৪৫ থেকে ৬০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ৬০ টাকায়। বাজারে আলুর দাম মানভেদে ৫ টাকা পযর্ন্ত কমেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি আদা ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। শুকনো মরিচ প্রতি কেজি (দেশি) ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা এবং আমদানি করা শুকনো মরিচ কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা।

দেশি হাঁস-মুরগি ও মাংসের বাজার

দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। হাঁস কেজিপ্রতি ২৮০ টাকা এবং পিসপ্রতি ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।

fish

মাছের দাম

এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল কেজিপ্রতি ১২০০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে রুই ২৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৪০ টাকা। চিংড়ি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর দেশি শিং মাছ ৭০০ টাকা কেজি, কৈ কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, টাকি মাছ কেজিপ্রতি ২৫০-৩৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা।

চালের দামের হালচাল

অপরিবর্তিত রয়েছে চালের দাম। বাজারে প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা, প্যাকেটজাত বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা এবং প্যাকেটজাত বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।

তেলের বাজারে তেলেসমাতি

বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৩৮ থেকে ১৪৫ টাকা, বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। খোলা পাম অয়েল ১৩০ থেকে ১৩৫, গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা এবং পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৮ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে ছিল ১৩৪ থেকে ১৩৮ টাকা।

Link copied!