• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা 


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২, ০৯:৫৪ পিএম
করোনা সংক্রমণ বাড়ায় শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা 

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে আবারো সশরীরে ক্লাস বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুই বছর ধরে চলমান বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় পুরো বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় মন্দা সময় পার করছে। এর আগে দেশে দীর্ঘ প্রায় ৫৪৪ দিন বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসময় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস চললেও প্রায় প্রতিষ্ঠানে বন্ধ ছিল নিয়মিত পাঠদান। নতুন বছরের আবারও শুরুতে হঠাৎ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সশরীরে ক্লাস বন্ধের শঙ্কা করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। 

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অনলাইনে ক্লাস চলবে। তার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মে চলবে পাঠদান কর্মসূচি। পাশাপাশি চলবে ১২ বছরের উপরে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকাদান কর্মসূচি।

এদিকে আজও (বুধবার) দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫০০ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে। করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের শঙ্কা নিয়ে কথা হয় রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। প্রত্যকে একরকম শঙ্কিত বর্তমান করোনার এমন সংক্রমণ নিয়ে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চান যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকুক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে সরকারকে আরেকটু সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন তারা।

ঢাকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফৈরদাউস লামিয়া সংবাদ প্রকাশকে জানান, ‘গত বছর এইচএসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনলাইনে ভর্তি হয়। তারপর অনলাইনে ক্লাস চলতে থাকে। সরাসরি ক্লাস করতে না পারায় কলেজে জীবনের অনেক আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি সে। তেমনি নতুন সিলেবাসের অনেক কিছু বুঝতে পারেনি। এখন আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী তাজীব ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘‘করোনায় যদি আবারও কলেজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পুনরায় অনলাইনে ক্লাস করতে হবে। কিন্তু অনলাইনে ক্লাসে আমাদের বিষয় বুঝতে অনেকটাই সমস্যা হয়। বিশেষ করে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো ঠিকমতো করা যায় না।’’

তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘‘এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে সন্তানদের ওপর খুব প্রভাব পড়বে। কারণ তারা কলেজে আসতে ও সশরীরে ক্লাস করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। সশরীরে ক্লাসের যে পরিবেশ, তা অনলাইনে গড়ে উঠে না। ফলে মানসিক বিকাশে এক ধরনের প্রভাব পড়ে।’’

ঢাকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘‘আবার অনলাইনে ক্লাস হলে বাচ্চাদের মন অনেক ছোট হয়ে যাবে। কারণ সশরীরে ক্লাসে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারে, যা তাদের মানসিক বিকাশে অনেক বেশি সাহায্য করে। আর অনলাইনে ক্লাস শুরু হলে আবার তারা এক ধরনের বন্দি-জীবন শুরু হবে।’’ 

অন্যদিকে সন্তানদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার কথাও ভাবছে তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রাবেয়া শামস সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কিছুটা ব্যহত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হলেও প্রায় শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের বাইরে থাকে। এদিকে করোনা যেভাবে বাড়ছে তাতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাও ভাবতে হবে আমাদের। ফলে সরকার যেমন সিদ্ধান্ত নেবে, সেভাবে কাজ করতে হবে।’’ 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদদের মতে, কোনো দেশে করোনা সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়। দেশে প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়ে দুই শতাংশের নিচে নেমে আসে। তবে গত ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। নতুন বছর শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার দ্বিগুণের বেশি হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘‘সরকারের উচিত করোনার বর্তমান ঢেউ মোকাবিলায় একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা। আর এই পরিকল্পনাগুলো জনগণের সামনে পরিষ্কার করতে হবে।’’

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘‘এই মহামারি সরকারের একার পক্ষে মোকাবিলা সম্ভব নয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে তা মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা করে দেখতে হবে টিকা শিশুদের শরীরে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। সে বিবেচনায় কীভাবে দ্রুত শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’’
 

Link copied!