বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয় নতুন বছরের প্রথম দিনে, যা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের তৃতীয় দিনেও এক্সিবিশন সেন্টারে বরাদ্দ পাওয়া বেশ কয়েকটি স্টলের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, এ এবং বি ব্লকের অনেক স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। মেলা শুরুর তৃতীয় দিনেও স্টলগুলোর কাজ চলায় মেলা প্রাঙ্গণে একধরনের অব্যবস্থাপনা লক্ষ করা গেছে।
‘ড্রেসলাইন’ স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি আরমান হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এবারের মেলা ঢাকার বাইরে হওয়ায় অনেক শ্রমিক কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে শ্রমিকস্বল্পতায় আমাদের দোকান শুরু করতে সময় লাগছে। আশা করি আগামীকাল থেকে দোকানের বেচাকেনা শুরু হবে।”
সুলতান গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী রাজীব হোসেন বলেন, “আমাদের দোকানের ডেকোরেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু সমস্যার কারণে কাজ শুরু করতে সমস্যা হয়। আশা করি আজকালের কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
এদিকে স্থায়ী এবং আধুনিক এক্সিবিশন সেন্টারে এবারের ২৬তম বাণিজ্য মেলা শুরু হলেও দর্শনার্থী ও দোকান মালিকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পরিবার নিয়ে মেলা দেখতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “প্রতিবার ঢাকার ভেতর মেলা হলে একধরনের ভিড় ও ঝামেলা দেখা যেত। কিন্তু এত আধুনিক সেন্টারে মেলা শুরু হলেও ভেতরের পরিবেশ বেশ অগোছালো।”
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, “মেলার তৃতীয় দিনে এখনো অনেক স্টলের কাজ চলায় পরিবেশ বেশ নোংরা। অনেকে যেখানে-সেখানে টিস্যু ও বিভিন্ন ময়লা ফেলে রাখছে।”
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আফজাল এসেছেন মাকে নিয়ে প্রথম মেলা দেখতে। তিনি বলেন, “মেলা দেখতে এসে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঢাকার কুড়িল থেকে বাসে আসতে এক ঘণ্টা লেগেছে। পূর্বাচল সড়কের কাজ চলায় সড়কে ধুলাবালু আর ভাঙা সড়কে মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
আফজাল আরও বলেন, “অনেক কষ্ট করে এসে ভেতরে অগোছালো পরিবেশে দেখে হতাশ হয়েছি। একটা আন্তর্জাতিক মেলায় পরিবেশ আরও উন্নত হওয়া দরকার ছিল। মেলার শুরুর তিন দিনেও এখন স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। মেলা কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার ঘাটতি মনে হচ্ছে এখানে।”
যথাসময়ে দোকান চালু হওয়ার পরও বেশির ভাগ স্টল মালিক একধরনের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। দোকানিরা বলছেন, ঢাকার বাইরে হওয়ায় অনেক দর্শনার্থী আসবে না। তার ওপর সড়কের এমন বেহাল দশা দেখে অনেকে আসার সাহস করবেন না।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে হরেক রকমের শাল আর শীতের বিভিন্ন পোশাক নিয়ে এসেছেন ওয়েস আহমেদ। বি ব্লকের ১৬১ নাম্বার স্টলে তাদের দোকান। ওয়েস সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাংলাদেশিরা আমাদের শাল খুব পছন্দ করে। প্রতিবার মেলার প্রথম দিন থেকে আমাদের বিক্রি খুব ভালো হতো। কিন্তু এবার ঢাকার বাইরের হওয়ায় আমরা খুব চিন্তিত।”
ওয়েস আরও বলেন, “ঢাকার বাইরে মেলা হওয়া অনেক দর্শনার্থী আসতে পারছে না এবার। জম্মু কাশ্মীর থেকে আমাদের যারা আসছে তারা এবার এখানে স্টল বরাদ্দ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের খরচ কীভাবে উঠবে, তা নিয়ে খুব চিন্তিত।”
মেলার সার্বিক বিষয় বিষয়ে কথা হয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ডেপুটি সেক্রেটারি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “হঠাৎ করে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এবং ঢাকার বাইরে মেলা হওয়ায় অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান দোকান বরাদ্দ নেয়নি। পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক কোম্পানিও এবার বরাদ্দ নেয়নি। ফলে আমাদের এবার স্টলের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এবার মেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২২৭টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছি আমরা।”