১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী বাঙালিদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিঃস্ব করতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
নৃশংস এই হত্যার অর্ধশত বছর পেরিয়েছে। স্বাধীন হয়েছে দেশ, মুক্ত হয়েছে বাংলার মানুষ। তবু বছর ঘুরে ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের দিনটি বারবার বাংলার মাটিকে সিক্ত করে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের চোখের পানিতে।
একাত্তরের ওই দিন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মুনির চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লা কায়সারসহ আরও অনেককে। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ এই সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।এদের অনেকের লাশ পাওয়া যায় বধ্যভূমিতে আর অনেককে আর কখনো খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
যাদের জ্ঞানের ওপর ভর করে একটি জাতি মূল্যবোধ, স্বকীয়তা ও সৃষ্টিশীল চেতনা গড়ে উঠতে পারত তাদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হয় এই দিনে। দেশ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই এত বড় আঘাত হানে, যা দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে কয়েক দশক!
৫০ বছর পর একটি স্বাধীন দেশে বুদ্ধিজীবীদের পুর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করার তাগিদ দিয়েছেন শহীদ পরিবারের স্বজনরা। পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদের অবদান কমিশন গঠন বা জাতির কাছে এই ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার দাবিও করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন সময়ের লেখনী ও সৃষ্টিশীল রচনা সংরক্ষণের দাবি পরিবারের।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ৭টায় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল তা সরাসরি সম্প্রচার করবে।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন তারা। এছাড়া সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।
দিবসটি দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও পালিত হবে। বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটিতে আরও বাণী দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।