আজ ২৪ জানুয়ারি (সোমবার), ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস। বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক এই দিনটি। উনসত্তরের এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল গণ-অভ্যুত্থান। মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তি সনদখ্যাত ৬ দফা এবং ছাত্রসমাজের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে এই গণ-অভ্যুত্থান হয়।
ঐতিহাসিক এই দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, “উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ দিনটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা, ১১ দফা ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।”
ঐতিহাসিক ৬৯ -এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক ছিলেন শহীদ আসাদ। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তার আত্মদানের পর ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের জন্য় ঢাকায় একত্র হয় সর্বস্তরের জনগণ। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি এই অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি মহান স্বাধীনতা অর্জন করে।
এই দিনটিতে ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান, রুস্তমসহ আরও কয়েকজন শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট নামকরণ করেন। গণ-অভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পতন ঘটে আইয়ুবের স্বৈরতন্ত্রের। অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এই দিনটি আজও দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
