বেগমপাড়ার যাতায়াতকারীদের অর্থ পাচারের জন্য কানাডার ফ্লাইট চালু করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই ঢাকা থেকে টরন্টো (কানাডা) সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে। একটা ট্রায়াল ফ্লাইট হয়েছে, এখন চালু করবে। গতকালই বিমানের যারা কর্মকর্তা আছেন তারা বলছেন যে, এই ফ্লাইটটা কেন করা হলো আমরা জানি না। কারণ এটা কোনোমতেই লাভজনক ফ্লাইট নয়। করা হয়েছে একটা কারণেই। বেগমপাড়াতে যারা যাতায়াত করেন তাদের সুবিধার জন্য অথবা সরাসরি এখান (বাংলাদেশ) থেকে টাকা পাচার করার জন্য। সুটকেসে ভরে, ট্রাংকে ভরে টাকা পাচার করার জন্য।”
এর আগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের রাতে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যায় কানাডার টরন্টোয়।
এ সময় দেশের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা একটা ভয়াবহ অবস্থায় আছি। আজকে দ্রব্যমূল্যের যে হিসাবটা আপনারা এখানে দিয়েছেন, দুর্নীতির যে হিসাবটা আপনারা দিয়েছেন- এগুলো যদি সঠিকভাবে লক্ষ্য করা হয় তাহলে শিউরে উঠবেন। যে দেশের মানুষ এতো কষ্ট করে, দিনারাত পরিশ্রম করে উপার্জন করছে- সেই দেশের লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।”
ফখরুল বলেন, “এটার কোনো জবাবদিহিতা নেই। সংসদে এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। কারণ এই সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নাই।”
দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “আপনারা পেশাজীবীরা নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করেন, উজ্জীবিত করেন। দেশকে বাঁচানোর দায়িত্ব একা রাজনৈতিক দলের না, সবার। সেখানে পেশাজীবীদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। পেশাজীবীরাই ভ্যানগার্ডের কাজটা করেন। অতীতে করেছেন আপনারা। এই সরকারের আমলেও ২০১৩ সালে যে আন্দোলন আপনারা করেছেন সেটা আমরা সবসময় মনে রাখি। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালেও করেছেন। এই আন্দোলনগুলোতে আপনাদের ওপর নির্যাতন আসবে, মামলা হবে। আপনারা পেশাজীবীরা অনেকে যারা বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সবার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে..। নির্যাতনের ভয়ে চুপ থাকলে আমরা বাঁচতে পারবো না, আমাদেরকে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সময় খুব কম। আমাদের দ্রুত সংগঠিত হতে হবে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তাকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসিত হয়ে আছেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।”
ফখরুল আরও বলেন, “এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে একটাই মাত্র পথ, সেটা হচ্ছে এদেরকে জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরাতে হবে, এদেরকে পরাজিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে সব মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে। সেই জাগিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে অবশ্যই আমরা অতীতে পেরেছি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবো। এদেরকে সরিয়ে অবশ্যই জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।”
এ সময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনহ আখতার হোসেন। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় পেশাজীবী নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, কাদের গনি চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন বকুল, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম, ফখরুল আলম, এ্যাবের সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, সাধারণ সম্পাদক হাছিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।