ছেলেবেলায় ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় কেউ লেখে—ডাক্তার হতে চাই, কেউ প্রকৌশলী, কেউ বৈমানিক, কেউ শিক্ষক, কেউবা বিজ্ঞানী। কিন্তু ফেসবুক-ইউটিউবের যুগে এ প্রজন্ম কি এসব হতে চায়? জরিপ চালিয়ে দেখা যেতে পারে। জরিপে যে ফলটা বেরিয়ে আসতে পারে, তাতে অনেকে ভাষা হারিয়ে ফেলতে পারেন। অনেকে আশা হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এখন তো ছেলে-বুড়ো সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন! যার প্রয়োজন সে-ও ব্যবহার করছে, যার প্রয়োজন নেই সে-ও ব্যবহার করছে। অথবা বলা চলে স্মার্টফোনই ব্যবহার করছে আমাদের! কে যে কাকে ব্যবহার করছে, বোঝা মুশকিল!
এই প্রজন্ম এখন বোধ হয় আর ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বিজ্ঞানী—এসব হতে চায় না। তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। তারা এখন টিকটকার, ইউটিউবার, ফেসবুক সেলিব্রেটি হতেই বেশি আগ্রহী!
মুশকিল হচ্ছে, সবাই যদি টিকটকার, ইউটিউবার, ফেসবুক সেলিব্রেটি হতে চায়, তবে ভবিষ্যতে রোগী দেখবে কে! বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করবে কে! স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা শেখাবে কে! বিমান চালাবে কে! নতুন নতুন আবিষ্কার করবে কে! বিরাট মুশকিলের ব্যাপার!
‘এইম ইন লাইফ’ সবার লাইফেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছেলেবেলাতেই লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হয়। তারপর সেভাবে এগোতে হয় ধাপে ধাপে। নয়তো বড়বেলায় এসে পা পিছলে পড়তে হয়। হতে হয় টোঁ টোঁ কোম্পানির ম্যানেজার!
বনি নামের আমাদের মহল্লায় এক ছেলে ছিল। পরীক্ষার খাতায় ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় নিয়মিতই সে লিখত, বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। মানুষের সেবা করতে চায়। অনেক বছর পর জানতে পেরেছিলাম, বড় হয়ে সে ডাক্তারই হয়েছে। শুনে খুশি হলাম। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে ছেলেবেলা থেকে তার দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করে। কিছুদিন আগে শুনলাম, পুলিশের হাতে সে ধরা পড়েছে। ভুয়া ডাক্তার হিসেবে!
‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় অনেকে বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চায়। কিন্তু বিজ্ঞানী হওয়া তো আর মুখের কথা না। বিজ্ঞানী হতে গেলে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। আবিষ্কারের হাত থাকতে হয়। মাঝে মাঝে আপেলগাছের নিচে ঝিম ধরে বসে থাকতে হয়। টুপ করে আকাশ থেকে আপেল পড়বে। সেই আপেল কেন ওপরে না গিয়ে নিচে পড়ল, এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে সূত্র আবিষ্কার করতে হয়। অবশ্য সেসব না ভেবে আপেল টুপ করে খেয়ে ফেললে সাড়ে সর্বনাশ! সূত্র তখন মাথা থেকে বের না হয়ে পেটে চলে যাবে। অবশ্য অনেকে বড় হয়ে কথা রাখার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানী হন ভিন্ন কায়দায়। নকল পণ্য বা যন্ত্র আবিষ্কারে তারা বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন! রাজধানীর ধোলাইখালে নাকি এমন অনেক বিজ্ঞানীর দেখা মেলে।
সুতরাং যেনতেন পথে লক্ষ্যপূরণ করলে বিরাট ঝামেলা! লক্ষ্য পূরণের জন্য চাই সঠিক পথ। চাই সঠিক পদক্ষেপ। নয়তো কখন বেরসিক পুলিশ হাতকড়া নিয়ে দরজায় হাজির হবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল।