কথায় আছে, হাজার কথা খরচ না করলে নাকি বিয়ে সম্পন্ন হয় না। সেখানে দু’বাড়ির মানুষ হাজার নয়, কোটি কথার ধুয়া তুলে ফেললেন। একদিন হঠাৎ কথাচ্ছলেই অনুর বিয়ে পাকা হয়ে গেল। দুই পরিবারের কিছু মানুষের অমতেই অনুর হবু শাশুড়ি আর চাচাত জায়েরা মিলে অনুর হাতে কতগুলো কাচের চুড়ি পরিয়ে দিয়ে গেলেন। ডজন দুয়েক কাচের চুড়িতে দুরন্ত অনুর জীবন বিনি সুতায় গাথা হয়ে গেল। বদলে যেতে লাগল তার নিত্যদিনের দুরন্তপনা। বাইরে ঘোরাফেরা। কখন কে দেখে ও-বাড়ি গিয়ে বলে দেয়। বাইরে দাপিয়ে বেড়ান এমন মেয়ের সঙ্গে কি কেউ ছেলে বিয়ে দেয়। নানান গুজব সকলের মুখে মুখে ফিরতে লাগল। দেখে এলাম মেয়ে গাছে চড়ে মাঠেঘাটে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়ির কাজে একফোঁটা মন নেই। এমন মেয়ে বউ হয়ে আসছে! বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। কাজকর্মের ধারে-কাছে নেই। শুধু খেলাধুলা ছাড়া আর কিছু পারে না। মেয়ে দাড়িয়াবান্ধা খেলে! এমন অনেক কথা আসতে আর বাকি রইল না। এমনিতেই বিয়ে নিয়ে কম অস্থিরতা চলছে না। মানুষ যত কথাই বলুক না কেন অপু অনড়। অনুকে ছাড়া সে আর কাউকে বিয়ে করবে না। এই নিয়ে তার বাবা মায়ের মুখে কোনো কথা নেই। কিন্তু কথা চালাচালির মানুষের অভাব নেই। ঝগড়া লাগিয়ে দিতে পারলেই হল। তারপর দাঁড়িয়ে তামাশা দেখাই তাদের কাজ। ছাইয়ের মধ্যে বাতাস করার মতো। দুই পরিবার একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে সাপে নেউলে সম্পর্ক। অনুর এতদিনের অভ্যাস এত তাড়াতাড়ি কি আর বদলাতে পারা যায়? ফসকে গিয়ে এক-আধটু এদিক ওদিক হয়েই যাচ্ছে।
অভ্যাস বদলাতে তো একটু সময় লাগবেই। বিকেলে বাহির বাড়িতে দাড়িয়াবান্ধা, ওপেন্টি বায়োস্কোপ, ছি বউ আরও কত কী খেলা খেলে যার অভ্যাস। সেই মেয়ের কি আর বসে থাকা সাজে। ছোটাছুটি করার জন্য গায়ের মধ্যে ইসপিস করতে থাকে। অনু মনে মনে ভাবে এত সবের বিনিময়ে বিয়ে করাটা কি এতই জরুরি? তবে অপু তাকে বলেছে বেশিদিন গ্রামে থাকতে হবে না। পড়াশোনা শেষ করে অনুকে শহরে নিয়ে যাবে। শহরে গিয়ে তাকে কলেজে ভর্তি করে দেবে। সেখানে শুধু তারা দুজন থাকবে। কারও কিছু বলার থাকবে না। কিন্তু যতদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকতে হয় ততদিন তাকে একটু সামলে চলতে হবে।
এই তো সেদিন দল বেঁধে চড়ুইভাতি করতে গিয়ে ধরা। গ্রামের পাগলি এসে একনজর উঁকি দিয়ে দেখেই উধাও। তারপর কিছুক্ষণ পরেই হন্তদন্ত হয়ে এক টুকরো কলাপাতা এনে হাজির। এক চামচ খিচুড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলল, ওই ছেড়ি তাগাদা বাড়ি যা। দুইদিন বাদেই যার বিয়ে হবি, তার কি এইসব সাজে!
যাওয়ার আগে আরও বলল, ওই তোর শ্বশুর আমারে কইল ও বাড়ি গিছিলা নাকি। আমি কইলাম হ দেখলাম তোমার বিটার বউ পোলাপান নিয়া জোলাপাতি রানতেছে। বলেই সে হনহন করে হেঁটে চলে গেল। কেমন মানুষ ওবাড়িতে কথা লাগিয়ে আবার খিচুড়ির ভাগও নিয়ে চলে গেল। এ পাগলির কথা এখানে একটু না বললেই না। তিনি আবার লেজেগোবরে পাগলি নন। একেবারে ফিটফাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সাদা ধবধবে থান কাপড় পরে সারা গ্রাম চষে বেড়াতেন। তার গায়ের রং ছিল দুধে আলতা। দুই তিন গ্রামের খবর পাওয়া যেত তার কাছে থেকে। তার মধ্যে কোনোদিন কোনোরকম পাগলামি দেখা যায়নি। কেন তাকে পাগলি খেতাব দেওয়া হয়ছিল তা সকলেরি অজানা। তার মুখে সবসময় একটি কথাই শোনা যেত ছেলের বউরা আমারে খাইতে দেয় না।
যা হোক, যথারীতি ওবাড়ি থেকে খবর এল দুই তিন মাস পরে যে মেয়ের বিয়ে তার কি এমন সব কাজ সাজে? অনুদের বাড়ি থেকে ও-বাড়িতে পাল্টা খবর গেল। আমাদের মেয়ে এখনও তাদের বাড়ির বউ হয়নি। এই নিয়ে এত কথা না বলাই ভালো। দুই পরিবারের মধ্যে আবার ঠাণ্ডা দ্বন্দ্ব শুরু হল। অপু অনুকে খবর পাঠাল, তোমার আবার এসব করার কী দরকার ছিল। অপু পড়েছে দুই পরিবারের মধ্যেখানে। এদিক ওদিক সামলাতে তার জান শেষ। বেচারা অপুর কথা ভেবে অনুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাই তো, এইসব না করলেই তো আর এতসব কথা উঠত না।
বিশেষ করে অপুর বাবা খুব বাঁকা কিসিমের মানুষ। কথায় কথায় খুঁত ধরে বসেন অন্যদিকে অনুর। চাচারা মাথা গরম মানুষ। অনুর মাকে সাফ সাফ বলে দিলেন, ও-বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দিতে হলে একাই দিতে হবে। অপুর বাবার কারণেই আরও বেশি করে বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে লাগল। মাঝখানে অপু আর অপুর মা পড়েছে বিপদে। বিয়ের প্রস্তুতি তখনও শুরু হয়নি। এর মধ্যে হঠাৎ অপুর বাবা খবর পাঠাল তার ছেলের জন্য ওবাড়ির একটি সুতাও নেবে না। মেয়েকে পঞ্চাশ ভরি সোনা দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে। এই কথা শুনে অনুর চাচারা বললেন, সোনা দেওয়া তো দূরের কথা মেয়েই বিয়ে দিই কিনা তার ঠিক নাই। শালা চশমখোর কোথাকার। খালি ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে এখনো চুপ করে আছি। ওমন বাপের এমন ভঅলো ছেলে হল কী করে। গোবরে পদ্মফুল।
কয়দিন পরপরই অপুর বাবা ঝামেলা করতে লাগল। অনুর বাবা-চাচারা এমনিতেই সহজ সরল মানুষ। তাদের ক্ষেপিয়ে তোলাই যেন অপুর বাবার কাজ। সারা গ্রামে এই নিয়ে কানাঘুঁষা চলতে লাগল। যাদের বিয়ে তাদের কোনো খবর নেই ওদিকে পাড়াপড়শির ঘুম নেই। তবে এই বিয়েতে যে আয়োজন অনেক বড় হবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। অপুর বাবা অনুর পরিবারে খবর ছুঁড়ে দিয়েছেন। অনুদের বাড়িতে যদি ছয়টি খাসি জবেহ দেওয়া হয় তিনি নাকি বারোটি দেবেন। শুরু হল আরও এক ধাপ গুঞ্জন। তবে গ্রামবাসীর জন্য ভালোই হল। জমজমাট আয়োজন, বড় খানাপিনার জন্য তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষয় রইল।
বাজার রান্নার ধুম পড়ে গেল। নাইওরিরা আসতে শুরু করেছেন। যে যার রুম ঘর দখল করে নিলেন তারা। কতক মেঝেতে বিছানা পাতলেন। যা আজকালকার দিনে ভাবাই যায় না। বিয়ের সাতদিন আগে থেকে নাইওরিরা এসে বাড়ি ভরে যেত। আবার বিয়ের সাতদিন পর তারা এক এক করে বিদায় নিত ওই সময়ে ওটাই ছিল রেওয়াজ।
আশ্বিন মাস আকাশ ভরা সাদা আর নীলের ছোপ চারিদিক রাঙিয়ে তুলেছে। ফুরফুরে বাতাস কাশফুলে ফুটে ঝলমল। নারিকেল লেবু ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। পুরো গ্রামে শরৎঋতুর উঁকিঝুঁকি। ঝলমলে দিন আর তারাভরা আকাশ অনুকে হাতছানি দিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। পাড়াপড়শির আনাগোনায় জমজমাট বাড়ি, কীসের জানি আভাস। বিয়ের ঢাকঢোল বেজে উঠছে। দুজনেই কম বয়স। চালচুলাবিহীন টোনাটুনি। কোনোকিছু না ভেবে না বুঝেই নতুন জীবনে পা দিতে প্রস্তুত। পুতুল বিয়ে দেওয়ার মতো বাবা মায়েরাও মেতে উঠেছে। কয়েক মাস ধরে চলছে প্রস্তুতি। গানবাজনা, হাসিঠাট্টা, পান-সুপারির ছড়াছড়ি। বিশেষ করে বিকেল নামতেই দুই বাড়িতে মানুষের শোরগোল। প্রতিদিন নানান রকমের বাজার আসছে, মানুষ ঝেঁপে পড়ে দেখতে আসছে। নাইওরিরা পালকি করে বাড়ির উঠনে নামছেন। সঙ্গে দুই-তিনটি করে মাটির নকশি আঁকা হাঁড়িতে নানান রকমের পিঠা নিয়ে। চাচি-ভাবিরা সাজানো ডালা কুলায় ধান দুর্বা দিয়ে অতিথি বরণ করছেন। এক ফুটফুটে জোছনা রাতে উঠানে পালকি এসে থামল। মানুষের শোরগোলে পড়ে গেল। সেই পালকিতে অনুর বাবার ফুপাত বোন এলেন। তিনি অনেক সামগ্রী সঙ্গে এনেছেন। মেয়ের ফুপু বলে কথা মানসম্মানের ব্যাপার এখানে অনেক বড়। তাই জামাইয়ের জন্য সোনার আংটি এনেছেন।
বিয়ের দিন ধার্য হওয়ায় রাতের পর রাত গ্রামের বিটিরা গলায় গলা মিলিয়ে গীত গাইতে শুরু করেছেন। অনুর ফুপু-চাচিরা পাশে বসে নানান রকম গীত গাইতে উপদেশ দিচ্ছেন। তারাও মনের আনন্দে গলা মিলিয়ে চলেছেন। উৎসব শুরু হয়ে গেছে তিন মাস ধরে এমনটি চলছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় মহা গীতউৎসব। তার সঙ্গে চলে বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে নানান রকমের কাজ আর পরিকল্পনা। গীত করতে করতে অনেকের গলা ভেঙে গেছে। তারপরও বিরামহীন গেয়ে চলেছেন। নাইওরি আসতে শুরু করেছে। অত মানুষের রান্নাবান্না ছোট চুলায় সম্ভব নয়। তাই রান্নাবান্নার জন্য একজন ছোট বাবুর্চি মানে বাবুর্চির হেলপার আনা হয়েছে। দু’বেলা ডেগভর্তি করে নাইওরিদের জন্য রান্নাবান্না করবেন। বিয়ের দিনে রান্না করতে শহর থেকে আসবেন নাম করা বাবুর্চি।
বিয়ের কার্ড এসেছে। বাড়িতে হ্যাজাগ বাতি এসেছে অনেকগুলো। বাঁশ কিনে আনা হয়েছে প্যান্ডেল করার জন্য। লাল নীল হলুদ সবুজ কাগজ এসেছে। ও-বাড়ি থেকে পেটিকোট ব্লাউজের মাপ নিয়ে গেছে। তবে অনুদের বাড়ির মানুষ ও-বাড়ির কোনোকিছুর উপর নির্ভর করে নেই। তারা তাদের মেয়ের গয়না থেকে শুরু করে সবকিছু কিনেছেন। ওরা আবার কী আনতে কী আনেন তাই।
বিয়ের মাসখানেক আগে অনুর উর্দু ভাইটি একদিন বলল, তুই শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকবি কী করে? একদণ্ড বাড়িতে মন টেকে না। তুই তো দম বন্ধ হয়ে মারা পড়বি। অনু বলল, তাই তো ভাবছি। বিয়েটা ভেঙে দিলে কেমন হয় রে?
ও বলল, তুই ভাঙতে চাইলেই হল? তবে এই কথা কিছুদিন আগে ভাবলেও হত। এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
বিয়ে ঘনিয়ে এসেছে। অনুর মনটা খুব খারাপ। অনেক নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে। তাই তার ভাইটিকে বলল, চল, আমি আর তুই চুরি করে শহরে যাই। লুকিয়ে সিনেমা দেখে আসি। আমি কোনোদিন সিনেমা দেখিনি। বিয়ের পর যদি আর কোনোদিন সিনেমা দেখা না হয়?
ভাইটি লাফ দিয়ে দু’হাত পিছিয়ে গিয়ে বলল, ওরে বাবা! তোর হবু বর শুনলে আমার কল্লা কেটে ফেলবে। বিশেষ করে তোর হবু শ্বশুরকে আমি খুব ভয় পাই। দেখা গেল তোর বিয়েই ভেঙে গেছে। বিয়ের পরে বরকে নিয়ে সিনেমা দেখিস।
অনু বলল, বিয়ে ভেঙে যায় যাবে তবুও তো বরকে বলতে পারব বিয়ের আগেই সিনেমা দেখেছি।
ও হাসতে হাসতে বলল, বিয়ে ভেঙে গেলে বরকে বলবি কী করে?
অনু থামিয়ে দিয়ে বলল, আগে বল সেখানে কী করে যেতে হয়। আর সিনেমা হল চিনিস কিনা।
ভাইটি বলল, চিনি। আমি দুটো সিনেমা দেখেছি। তবে চল বাড়িতে কাউকে বলার দরকার নাই। স্কুলে যাওয়ার নাম করে অনু আর তার ভাইটি ভয়ে ভয়ে ট্রেনে চেপে বসল। পাছে আবার কেউ দেখে ফেলে। তারা দুজনই ছোট কেবল নাইন ক্লাসে পড়াশোনা করে। ডাকবাবু সিনেমা দেখে বিকেল পাঁচটার ট্রেনে তারা বাড়ি ফিরল। এরই মধ্যে অনুর মা জেনে গেছেন। তিনি গজগজ করতে লাগলেন। এত বড় মেয়ের যদি কোনো আক্কেল-পছন্দ থাকত। ও-বাড়ির মানুষ জানতে পারলে কী হবে একবার ভেবে দেখেছে! জানার কি আর বাকি থাকে কথায় আছে না? বাতাসের আগে কথা উড়তে থাকে। এই নিয়ে দু’বাড়ির মধ্যে আবার তোলপাড় শুরু হল। মাঝখানে বিপদ হল অপুর। সে তার পরিবারকে কোনোমতে সামলে নিল।
মনোমুগ্ধকর গোধূলি বেলা। চারিদিকে রংয়ের আভা গ্রামের আনাচেকানাচে রাঙিয়ে তুলেছে। আজ অনুর গায়ে হলুদ। ও-বাড়ি থেকে হলুদের তত্ত¡ নিয়ে দল বেঁধে মেয়েরা এল। অনেক হাসি-ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে হলুদ মেহেদি মাখামাখি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। গোসলের জন্য বিশাল আয়োজন করা হল। ঘাটলা বাঁধা পুকুর থেকে পানি তুলে অনুকে গোসল করানো হবে। তাই পাঁচটি নতুন মাটির কলসি রং তুলিতে সাজানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ছেলেদের বেলায় সাতটি আর মেয়েদের বেলায় পাঁচটি। মেয়েরা সেজেগুজে কলসি কাঁখে নিল। কারও হাতে ডালা, কারও হাতে কুলা। দল বেঁধে তৈরি হল। মাইকের গান কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দেওয়া হল। পেছনে দল ধরে বেটিরা মাধব রাজার গীত ধরল। খুব সুন্দর আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পুকুর থেকে গোসলের পানি তুলে আনলেন অনুর ভাবি-চাচিরা। গেট তৈরির কাজ শেষ করল ছেলেরা। ফুল নকশা কেটে রাস্তা থেকে বাড়ির কাছারি ঘরের সামনের প্যান্ডেল পর্যন্ত রঙিন কাগজে রাঙিয়ে তুলল, আজকে বর আসবে। বাইর বাড়িতে বড় বড় ডেগভরে রান্নাবান্না চলেছে। সারারাত ধরে গাঁয়ের বেটিরা মসলা, আদা, রসুন বেটে রেখেছিল। ধামা ভরে ভরে পেঁয়াজ কাটল। মাইকের গানে তাদের গীত গাওয়া বাধা পড়েছে। তাই তাদের অনেকের মন খারাপ। কেউ কেউ বলছেন, তাদের গীতের কাছে মাইকের গান কিছুই না।
বাড়িতে মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে। ভেতর বাড়িতে মেয়েরা আর বাহির বাড়িতে ছেলেরা বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে। কয়েকদিন হল দু’বাড়িতে বেটিদের গীত গাওয়ার মাতম কিছুটা কমেছে। মাইকে পালটাপাল্টি গান বেজে চলেছে। দু’চার গ্রাম জেনে গেছে অনু আর অপুর বিয়ে।
অনুর বয়স কম হওয়ায় কয়েক বছর বাড়িয়ে বিয়ে পড়ানো হল। লাল টুকটুকে শাড়ি গা ভরে গয়না পড়ে রাঙা বউ সাজল। ছয় বেহারার পালকি চরে অনু শ্বশুরবাড়িতে গেল। তবে অনুর জীবনের মানুষটি শুধু স্বামী পেল না খুব ভালো একজন বন্ধুও পেল। বিদায়কালে পরিবারের সকলে কেঁদেকেটে ফিট। অনু বুঝতে না পেরে অবাক হল। এত আয়োজন এত আনন্দের পরও এত কান্নাকাটি কেন! আজ শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছে; কালকেই তো সে আবার বাড়ি ফিরে আসবে। ওই ফিরে আসা যে আগের মতো আর কোনোদিন হবে না। সেটা সে তখন বুঝতে পারল না। অনেক বাধা বিপত্তি, রাগ অনুরাগের এর মধ্যে দিয়ে অনুর জীবন সত্যি অনেক পাল্টে গেল। শুরু হল অপু আর অনুর নতুন জীবন।