বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক সুবিমল মিশ্র মারা গেছেন। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০।
ভারতীয় গণমাধ্যম আজতাক জানায়, সুবিমল মিশ্র দীর্ঘ দিন ধরেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যে একটি যুগের শেষ হলো।
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মহীরুহ ছিলেন সুবিমল মিশ্র। তাঁর প্রয়াণ সার্বিকভাবে বাংলা সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলেই মনে করছেন অনেকে।
পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র তাঁর এক ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, “আজ ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সাল, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে সুবিমল মিশ্র চলে গেলেন। বাংলা ভাষার সত্যিকারের সকল প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক চলে গেলেন। এক্ষেত্রে তিনি (সুবিমল মিশ্র) একজন। আর কেউ নেই। ছিলেন না। এই পথ তাঁর নিজের পথ ছিল। বিশ্বাসে আর যাত্রাপথে কোনো তফাৎ ছিল না। অন্যদের ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা দেখেছি। সুবিমল এক্ষেত্রে নিজেই এই পথের প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে দূর থেকে নমস্কার করি।”
নিজের লেখা গল্প, উপন্যাসকে অ্যান্টি-গল্প ও অ্যান্টি-উপন্যাস বলতেন সুবিমল মিশ্র। ১৯৬৭ সালে ‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি’ গল্পটি লিখে সাড়া জাগান তিনি। বাংলা সাহিত্যে তখন স্বর্ণযুগ। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সুবিমল নিজের লেখাকে আলাদা করে চিনিয়ে দিতে পেরেছিলেন।
তাঁর প্রয়াণের সংবাদে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্য জগৎ। শত অপ্রাপ্তির মধ্যেও পুরো জীবনে নিজের মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি সুবিমল মিশ্র। তাঁর ৫০ বছরের সাহিত্যজীবনে কোনোদিন কোনো বাণিজ্যিক পত্রিকায় একটি অক্ষরও লেখেননি। সুবিমল মিশ্রের নিজের ও পাঠকদের ভাষায় তাঁর লেখা ছোটগল্পগুলো অ্যান্টি-গল্প এবং উপন্যাসকে অ্যান্টি উপন্যাস বলা হয়।
‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি’ গল্পটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়। তাঁর প্রায় সমস্ত লেখাতেই রাজনৈতিক, সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতি দ্বিধাহীন বিশ্লেষণ ও মধ্যবিত্ত সমাজের যৌনতা নিয়ে অচ্ছুতপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ লক্ষ করা যায়। রাষ্ট্রব্যবস্থা, তার শোষণ, সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি ব্যঙ্গ, অবক্ষয়, দ্বন্দ্ব, লেখার কোলাজ এবং বিশেষভাবে নৈরাজ্য ইত্যাদি সুবিমলের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে আছে : প্রেমের মড়া জলে ডোবে না, ওয়ান পাইস ফাদার মাদার, নাঙা হাড় জেগে উঠছে, দু-তিনটে উদোম বাচ্চা ছুটোছুটি করচে লেবেলক্রসিং বরাবর, হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে শেষ-বিষ্যির মালসাভোগ—, আর, এবং, হাসতে হাসতে খড়কুটোর মত ভেসে যাওয়ার আনন্দ-গৌরবে