মুক্তিযুদ্ধের সময় মহকুমা শহর নওগাঁ থেকে প্রকাশ হতো ‘জয়বাংলা’ নামে একটি দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকাটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধের এক ঐতিহাসিক দলিল।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ থেকে পত্রিকাটি নিয়মিত ছাপা হতে থাকে।
সর্বাত্মক সংকট ও প্রতিকূলতার মাঝেও ভয়াবহ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি পত্রিকা প্রকাশ করা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। সেই কাজটিই শুরু করলেন এমজি হায়দার নামে এক ব্যাংকার। ছদ্মনাম ব্যবহার করলেন মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ্।
রহমতুল্লাহ সম্পাদিত ‘দৈনিক জয়বাংলা’ দুই পৃষ্ঠার ট্যাবলয়েড পত্রিকা। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রাণ সঞ্চারের জন্য এটি প্রকাশ হতো প্রতিদিন সন্ধেবেলায়। তরুণ স্বেচ্ছাকর্মীরা তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতো। গ্রামে-গঞ্জে যেত নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়িতে।
স্বাধীনতার এই মুখপত্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব হোসেন। পত্রিকাটি প্রকাশের পূর্বাপর তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত নানা ঘটনা নিয়ে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জয়বাংলা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। বইটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের এক অনন্য দলিল।
আইয়ুব হোসেন একজন সাংবাদিক। একই সঙ্গে গবেষক। বাংলাদেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯০। তার প্রত্যেকটি বই-ই গবেষণাধর্মী। গবেষকদের কাছে তার বই খুব জনপ্রিয়। বাম রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। রাজনীতির জন্য দুইবার জেলও খেটেছেন।
আলোচ্য বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘জয়বাংলা’ পত্রিকার প্রকাশকাল খুব দীর্ঘ নয়। কিন্তু প্রকাশের দিন থেকেই এটি স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে বেশ সাড়া জাগায়। ছাপার অক্ষরে একটা সংকটকালে নিজেদের প্রাণের কথাগুলো পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী পাঠক-জনতা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের খবর, সাহসী প্রতিরোধের খবর, উদ্দীপনামূলক নিবন্ধ, বাণী, গান, কবিতা ও নানা বিষয় নিয়ে প্রকাশ হতো দুইপৃষ্ঠার পত্রিকাটি।
নওগাঁর মতো একটি মহকুমা শহর থেকে মুক্তিযুদ্ধের এমন একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের ঘটনা অভিনবত্বের দাবিদার নিঃসন্দেহে এবং ঐতিহাসিক ঘটনাও বটে।
দলীয় রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না সম্পাদক রহমতুল্লাহর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকতে ঊনসত্তরের ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ছিল তার। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকালীন সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গেও তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়নি। স্বাধীন উদ্যোগে ও প্রাণের তাগিদেই তিনি প্রত্রিকাটি প্রকাশ করেন। পত্রিকা প্রকাশে কেউ তাকে অর্থ সহায়তাও করেনি।
বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বইটি প্রকাশ করেছে শিলালিপি। দাম রাখা হয়েছে, ৫৪০ টাকা।