“বাংলা ভাষার মধ্যে যে স্মৃতি, হাস্যরস ও রসিকতাবোধ আছে তা অনন্য। দেশভাগের দুঃখ থাকলেও, একাত্তর না এলে, বাংলাদেশের জন্ম না হলে, বাংলা ভাষা চর্চার এ জায়গা তৈরি হতো না। এই ভাষার সাথে আমার একটা গভীরতাবোধ আছে।”
ইউপিএল প্রকাশিত ‘সময়ের কুয়াশায়: দীপেশ চক্রবর্তীর সম্মানে প্রবন্ধগুচ্ছ’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী এসব কথা বলেন। শুক্রবার (৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিকেল ৫টায় এ প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় দীপেশ চক্রবর্তী বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার সাথে তাঁর নৈকট্য ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এদেশে তাঁর পিতা-মাতার আবাসস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফর, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, আড্ডার আবেগমাখা স্মৃতির আন্তরিক বিবরণ দেন।
আলোচনায় দীপেশ চক্রবর্তীর লেখা থেকে উদ্ধৃত করে সময়োপযোগী আলাপ করেন আলোচকেরা। তাঁরা বলেন, দীপেশ চক্রবর্তীর ৭০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সময়ের কুয়াশায় : দীপেশ চক্রবর্তীর সম্মানে প্রবন্ধগুচ্ছ সংকলন গুরুত্ব বহন করে। ইতোমধ্যে ইংরেজি ভাষার দৌরাত্ম্যে খোদ কলকাতায়ও বাংলা ভাষা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। দীপেশ চক্রবর্তীকে নিয়ে আগে ইংরেজিতে বই প্রকাশিত হয়েছে, তবে বাংলায় প্রকাশিত এ গ্রন্থটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।
ইতিহাসের যে পাঠ এই উপমহাদেশে হয়, তা নিছক গল্প ছাড়া আর কিছু নয়। সে ইতিহাস পুরানো ও উপনিবেশী বয়ান। দীপেশ চক্রবর্তীর ইতিহাস পাঠে এ অঞ্চলের প্রকৃত ইতিহাস জানা যায়, মত দেন এ বইয়ের সম্পাদকদের অন্যতম, ইতিহাসবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আহমেদ কামাল।
দীপেশ চক্রবর্তীর সব বই এবং সম্মানে প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শোষণের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সংঘবদ্ধ শক্তির গণঅভ্যুত্থানের ঘটনার ব্যাখ্যায় ব্যবহার করা যায় বলে মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
আলোচকেরা বলেন, দীপেশের লেখায় উঠে আসা সাব-অলটার্ন স্টাডিজের লক্ষ হলো বিদ্যমান সমাজ-ইতিহাসের ব্যাখ্যাকে প্রশ্ন করা এবং নতুন মত তৈরি করা। তাঁরা ইউরোপের উন্নয়ন ও মানবতাবাদের ধারণাকে উত্তর-উপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা ও মত তৈরি করার কথা বলেন। এ ছাড়াও জলবায়ুর পরিবর্তনের আলোচনায় দীপেশ চক্রবর্তী তুলে ধরেছেন কীভাবে মানুষ আধুনিক সময়ে পরিবেশ ও আবহাওয়ার নিয়ন্ত্রক হয়ে যাচ্ছে। করোনাকালে সে বিষয়টিই সবার সামনে আবারও স্পষ্ট হয়।
গ্রন্থ প্রকাশনায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বইটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাব্বির আজম। অনুষ্ঠানে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।