শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলা একাডেমির নবগঠিত নির্বাহী পরিষদে যুক্ত হয়েছিলেন কবি সাজ্জাদ শরিফ। কিন্তু বিতর্কের মুখে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তিনি একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
পদত্যাগের কারণ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমকে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, “প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এবং একাডেমির মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিষদের পদগুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় নৈতিক কারণে আমার পক্ষে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।”
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পরদিন ২৪ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পুরস্কারে লেখকদের তালিকায় কোনো ‘নারী লেখক’ না থাকাকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরদিন ২৫ জানুয়ারি ঘোষিত পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা নিজেই পুরস্কার স্থগিতের খবর ফেসবুক পোস্টে জানান। পুরস্কার স্থগিতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে ফেসবুকে লেখেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে পুরস্কারের জুরি সদস্যরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। জুরি সদস্য মোরশেদ শফিউল হাসান দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে।
মোরশেদ শফিউল হাসান জানান, সংস্কৃতি উপদেষ্টার পরপর দুটি ফেসবুক পোস্ট পড়ার পর তিনি ‘আত্মসম্মান বোধ থেকে এবং নিজের বিচারবুদ্ধির ওপর আস্থা রেখে’ এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছেন।”
পুরস্কার স্থগিতের বিষয়ে বাংলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন মনে করেছে একাডেমি।
এদিকে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) মধ্যরাতে বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারের জন্য সাতজনের নতুন তালিকা ঘোষণা করে। সেখানে আগের দশ জনের তালিকা থেকে কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হান্নান এবং শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজের নাম বাদ দেওয়া হয়।
নতুন তালিকা অনুযায়ী, এবার কবিতায় মাসুদ খান, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা রয়েছে।