ছেলেবেলায় ওটাকে ‘গণ্ডগোলের বছর’ হিসেবে জেনেছি;
কেউ বলতেন ‘হুড়ো-তাড়া’র একাত্তর; সেকথাও মেনেছি।
‘রাজাকার’ শব্দটা কখনও শুনেছি বটে, কারো কারো মুখে
কিন্তু, ঘৃণার থুতু’রা তখনও জমতে শেখেনি কোনো দুখে,
তবু, মা যখন ‘মুক্তিফৌজ’ বলতেন; পিঠে মাটির দেয়াল
সেই ছেলেবেলাতেই, ছোট্ট চোখে করেছি কতকটা খেয়াল
‘মুক্তি’ শব্দটা উচ্চারণের মুহূর্তেই তাঁর মুখের গোলাপে
সেই মেঘকালো আষাঢ়েই, অচেনা কোন ভালোবাসার ভাপে
সোনার কুসুম হয়ে ধরা দিতো অঘ্রানের রোদ
রুপোলি দাঁতের চূড়োয় খেলে যেতো, সে কী আমোদ!
মনে হতো— শান্তি এখানে, সুখেরা এখানেই নামে।
তখনও শব্দার্থটা বাঁধা ছিলো অচেনা বোতামে
পরে জেনেছি: মুক্তি মানে স্বাধীন, মুক্ত;
খাঁচার পাখিটি, খাঁচায় র’বে না যুক্ত।
বলবে না কেউ, ওড়াটা থামাও; করবে না গুলি
কেউ দ্যাখাবে না জিঘাংসু ভয়, ক্ষমতার অঙ্গুলি!
যার যা পাওনা, সেই পাবে; কেউ করবে না দাবি,
গৃহ যার, তার হাতেই রবে বন্ধ-খোলার চাবি
শুধু শ্রমের নয়, ওরাও মালিক হবে লাভের
মাছ ধরবে জামির, আর মাথাটা খাবে জাবের!
কখনো হবে না তা; চলবে না শঠতার অঞ্জলি।
রানাদের পাপে বার বার জরিনারা হবে বলী!
চলবে না আর তা-ও; গলবে না সহস্র প্রলোভে
মুক্তির দেবতারা; যারা বঞ্চনার তামাম ক্ষোভে
পথে নেমেছিল দুর্বার; প্রাপ্য সম্মান তারা পাবে।
দুর্যোধনের কোলের থেকে শকুনিরা চলে যাবে।
যাবে না মালতি-মোহনেরা, সোনার ভূমিটা ছেড়ে
একের বৃক্ষ, অন্যে খাবে না ফল-মূল সব কেড়ে।
—এইতো জেনেছি বুদ্ধি-জ্ঞানে, ‘মুক্তি’ কথাটার মানে
তবে এমন ক্রন্দনধ্বনি ক্যানো বাজে সবখানে ?
ক্যানো এ্যাতো রক্ত-সাগর বয়? বৃদ্ধ, শিশু ও নারী
চারদিকে ক্যানো এমন নিথর দেহেরই সারি?
অগণিত গৃহহারা, উদ্বাস্তু; সাগরে তিমির মতো ভাসছে
সভ্যতা বলছে, ‘ওই, অবৈধ অভিবাসী’ আসছে!
গুরুরা গিলছে লঘুকে; অন্ধরা গিলে খাচ্ছে আলো
দুনিয়াটা কালোয় যাচ্ছে ঢেকে, ঢাকা পড়ছে— ‘ভালো’!
তবে কি মুক্তি কোথাও নেই ? আসবে না কোনো কালে?
আকাশ ! নাকি খাঁচা! কী দেখবে সে! সামনে তাকালে?