প্রিয় পিকাসো,
আপনি অনন্তলোকে। আর আমরা এখন পর্যন্ত টিকে আছি ক্লিষ্ট এই ধরায়। অনেক ব্যবধান। কিন্তু ভেদ নেই। কারণ মলয় রায় চৌধুরীর অনুবাদে আপনার কবিতা পড়েছি। পদ্যে লিখেছিলেন, “আশা করি যে কোনো দিন, দূরত্ব হয়ে উঠবে বন্ধন।” শেষ সম্বল এই ‘আশা’ টুকু নিয়েই প্রয়াণ দিবসে আপনাকে ছোট্ট চিরকুটে লিখতে বসা।
প্রিয় পিকাসো, আপনার জন্মভূমি স্পেনের মালাগা। সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য কখনো হবে কি না জানি না। খুব দেখতে ইচ্ছে করে এর মানুষ, গাছ, পাখি, নদী, গাঁও। শৈশব থেকে এগুলো দেখার চোখই মানুষকে শিল্পী বানায়। আপনি দেখেছেন। ধারণ করেছেন। আর হয়েছেনও তাই।
অজর শিল্পী স্রষ্টা মালাগায় যেতে না পেরে অক্ষম হয়ে যেভাবে পারি আপনার পিছু নেই। রাতে স্প্যানিশ লা লিগা দেখায় টিভিতে। মাঝে সাঝে দেখা হয় তা। অন্য অনেক দলের মতো মালাগার খেলাও দেখি। তখন খারাপ লাগে শেষে। মালাগা হারে। গোল খায়। বহু বিজিত সেখানে ফ্রাঙ্কোর রিয়াল। বুঝি আপনার খারাপ লাগে তখন। হোক তা খেলা। হোক তা খেলার খেলা। কিন্তু খেলে তো স্বভূমি খচিত জন্মভূমি। তাও টাকার গর্বে ভাসা ফ্রাঙ্কোদের হাতে। খারাপ লাগবেই।
কী না কী বলতে গিয়ে ফ্রাঙ্কোর কথা চলে এলো! এখন তো গুয়ের্নিকার কথা আসবেই। আপনার রেখে যাওয়া পৃথিবীতে গুয়ের্নিকা আছে, একই সঙ্গে নিঃচিহ্ন হয়নি যুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদ। বহাল তবুয়তে আছে। প্রশ্নহীনভাবে আছে। সমর্থনহীন ব্যালট ছাড়া আছে।
তাই আজকের ক্ষণে প্রশ্ন একটাই। কেন আপনি পিকাসো আঁকছেন না আরেকটি গোয়ের্নিকা? খুব তো দরকার আমাদের। দ্রুত এঁকে দেবদূত মারফত পাঠান। কেন গোয়ের্নিকা ট্যাপেস্ট্রি কেবল শোভিত থাকবে জাতিসংঘ সদরে? দ্রোহের শিল্পের এই গ্যালারিতে বন্দিত্ব, বন্ধ্যাত্ব আপনার ভালো লাগে?
এখনো ওরা বোমা ফেলে জমিনে। সামরিক হামলায় ছিন্নভিন্ন হয় মানুষ। গ্রাম, শহরে নরক জ্বলে। সবুজ পোড়ে। দেশহীন শিশুর লাশ সমুদ্রে ভেসে তীরে আসে।
পিকাসো বিশ্বাস করুন মানুষ এখনো একা। আপনার সেই কবিতার মতোন।
“আমি জানি না কিসের জন্য পৃথিবী লড়ছে কিংবা কেন আমাকে প্ররোচিত করা হচ্ছে। সেই জন্যই আমি এই সুনসান রাস্তায় হাঁটি কেননা আমি থাকতে চাই একা !”
কিন্তু পাবলো এখন একা থাকার সময় নয়। আমাদের অনেকের মাঝে থাকা জরুরি। আমরা আরেকটি গোয়ের্নিকা চাই। আর আপনাকেও চাই না ফ্রান্সের প্রত্যন্ত সমাধিতে একা পড়ে থাকতে দিতে। প্লিজ আরেক গোয়ার্নিকা আঁকুন। মিছিলে আসুন।
বিবেচনা করবেন পিকাসো?