খুব ভোরে শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে
তুমি একরাশ শিউলি ফুলের ডালা হাতে
আমার ঘরের কড়া নেড়ে বলতে,
‘দাদাবাবু তোমার জন্য শিউলী ফুল এনেছি গো’।
তারপর আঁচল বিছিয়ে আমার দাওয়ায় বসে
রঙ্গিন সুতোয় শিউলির ফুলের মালা গাঁথায় লেগে যেতে।
সুতোয় ফুল জড়াতে জড়াতে
কি এক পাখির গানের সাথে সুর মিলিয়ে
তুমি গুণগুণ করে কি যে গাইতে,
তার মাথা মুণ্ডু কিছুই যেত না বুঝা।
শুধু সেই হিমহিম ভোরের বাতাসে
কি এক উষ্ণতা ছড়িয়ে যেত শুধু।
মালা গাঁথা হয়ে গেলে তুমি
আমার কবিতার খাতার পাশে
শিউলি ফুলের মালা সাজিয়ে দিয়ে যেতে।
সারাদিন ধরে কি এক অপরুপ গন্ধ
আমার কবিতার খাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
সারা ঘরময় ছড়িয়ে যেত।
আমার এক একটি কবিতা এক একটি
শিউলি হয়ে ফুটে উঠতো খাতার পাতায়।
তুমি বলতে, “আচ্ছা দাদাবাবু, সারা রাত
ফুল গুলো তোমার জন্য ফোটে বুঝি!
তাইতো আমি শিউলি কুড়িয়ে
তোমার জন্য নিয়ে আসি,
আমিও শিউলি ফুল গো”।
হেসে কুটিকুটি লুটিয়ে পড়ে বললে,
“তোমার জন্য প্রতিদিন আমিও ফুটিগো”।
তোমার কণ্ঠস্বর পাখিদের সুর ছাড়িয়ে ভেসে গেল দূরে।
শিউলির সুবাস ছড়ালো বাতাসে।
তোমার কৃষ্ণকুন্তল পরিযায়ী পাখির ডানা হয়ে
উড়লো আকাশে।
তখন, মাথার খোঁপাটি এলিয়ে দিয়ে বলেছিলে,
“একটি মালা খোঁপায় পরিয়ে দাওনাগো দাদাবাবু”।
হঠাৎ একদিন কি জানি কি হ`লো,
এক শিউলি ফোটার ভোরে
কষ্টের আঙিনায়
ভেজা চোখে চেয়ে দেখলাম,
শিউলি হয়েই তুমি ঝরে গেলে কখন।
তারপর কতকাল গেছে চলে,
কত শিউলি ঝরেছে আঙিনায়,
কত ফুল শুকায়ে গেছে অনাদরে,
শিউলির মালা গাঁথা হয়নিকো আর।
কবিতার শুন্য পাতায় শুধু
দীর্ঘশ্বাসের মালা গাঁথা হয়েছে আমার।
শরতে শিউলি ফোটার দিন এলে
কষ্টের কুয়াশা মেখে
শিউলি ফুলের মালা হাতে দাঁড়াই শিয়রে।
বেদনার অর্ঘ্য হয়ে
শিউলির মালা আমার
শুকায় নীরবে।
বেদনার মালা অনন্ত মৃত্তিকা পাড়ি দিয়ে
কেমন করে আজ খোঁপায় পরাবো বল।