• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ওতো রেনে কাস্তিয়োর দুটি কবিতা


আলম খোরশেদ
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
ওতো রেনে কাস্তিয়োর দুটি কবিতা

দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যাঞ্চলের দেশ গুয়াতেমালার সাহিত্য ও সাহিত্যিকের প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের সকল মনোযোগের কেন্দ্রে উঠে আসে মিগেল আনহেল আস্তুরিয়াস (১৮৯৯ - ১৯৭৪) এর নাম, যিনি ১৯৬৭ সালে প্রথম লাতিন আমেরিকান কথাসাহিত্যিক হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন; যেবছর একইসঙ্গে মার্কেসের বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস One Hundred Years of Solitude প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা বিস্মৃত হই আউগুস্তো মন্তেররোসো (১৯২১ - ২০০৩)র মতো স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত কথাসাহিত্যিক কিংবা ওতো রেনে কাস্তিয়ো (১৯৩৪-১৯৬৭) র মতো তুমুল জনপ্রিয় বিপ্লবী কবির কথা। অত্যন্ত অল্প বয়সে সামরিক জান্তার হাতে নির্মমভাবে নিহত এই গেরিলা কবি কাস্তিয়ো জন্মেছিলেন গুয়াতেমালার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছাত্রজীবন থেকেই বিপ্লবী রাজনীতি ও সমাজবদলের স্বপ্নে বিভোর ওতো রেনেকে অবধারিতভাবেই একপর্যায়ে নির্বাসিতের জীবন বেছে নিতে হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের সিআইএ সংঘটিত কুখ্যাত অভ্যুত্থানের পর তিনি দেশত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ এল সালবাদোরে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় আরেক বিখ্যাত ও জনপ্রিয় বিপ্লবী কবি রোকে দালতোনের (১৯৩৫ - ১৯৭৫) সঙ্গে, মূলত যাঁর প্রভাবেই তিনি বিপ্লবের পাশাপাশি সাহিত্যরচনাতেও নিজেকে আমর্ম সমর্পণ করেন। মাঝখানে কিছুদিন তিনি পূর্ব জার্মানিতেও কাটান এবং লাইপৎসিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে থাকা অবস্থাতেই তাঁর দুটো কাব্যগ্রন্থ যথাক্রমে Poema Tecún Umán ও Vámonos Patria a Caminar  (Let’s Go Home for a Walk) প্রকাশিত হয়। ১৯৬৬ সালে তিনি সত্যি সত্যি গোপনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে সামরিক জান্তার হাতে প্রেমিকা নোরা পাইস কারকামো সমেত ধরা পড়েন। বন্দি অবস্থায় তাদেরকে নিমর্মভাবে অত্যাচার করে ১৯৬৭ সালের ২৩শে মার্চ তারিখে আগুনে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। - অনুবাদক 

-----------------------------------------------------------------------


শক্তির চেয়েও বেশি কিছু
তোমাকে, যাকে এই অনুপস্থিতির অনুপস্থিতিটুকু অনুভব করতেই হবে

 

১.
এ এক তীক্ষ্ণ সুন্দর সন্ধ্যা
এবং আমি তোমাদের সবাইকে বলি,
এই মুহূর্তে আমি সবচেয়ে বিষণ্ন।
হয়তো কেউ জানে না এখন
যেমনটি তুমি জানো, প্রিয়তমা,
যে, আমি কেবল এক 
দীর্ঘ ধারাবাহিক কান্না
তোমার অভ্যন্তরে।

বহু দূরে 
জোরালো আঘাতে তারা তোমার ভেতরে
আমার আনন্দকে চুরমার করে দিয়েছে,
তারপরও তারা আমার এই হাতদুটোকে বুঝতে পারে না
যারা অমন অকস্মাৎ তোমার মুখ থেকে 
কৃষ্ণবর্ণ বাতাসকে ছিঁড়ে নিয়েছে।

 

২.
তারা চায় না আমার নদী 
বয়ে যাক
তোমার গভীরে
তারা পছন্দ করে না তোমার পাখারা
উড়ে আসুক
আমার দিকে।

তারা তোমার ঠোঁটের মুদ্রাকে
উপেক্ষা করতে চায়
তারা একখানা কালো ক্রুশচিহ্ন
সেঁটে দিয়েছে, এই গ্রহে তুমি
যে নামটি উচ্চারণ করতে পছন্দ কর
সবচেয়ে বেশি, তার ওপর।

তবে, প্রিয়তমা,
তারা তোমার বুকের গহনে লুকনো যে হৃৎপিণ্ড,
যেখানে স্পন্দিত হচ্ছে আমার মমতা
তাকে কখনও থামিয়ে দিতে পারবে না।

প্রিয়তমা, তারা কখনোই, আমার চোখের 
যে উচ্চতায় তোমার বাস সেখান থেকে 
তোমাকে টেনে নামাতে পারবে না।
তারা আমার জীবন থেকে
তোমাকে ছিঁড়ে নিতে পারবে না, প্রিয়তমা,
কেননা সমুদ্রের মতো
আমিও তোমার নামের কিছুটা হলেও
রেখে দিই আমার ভেতর।

 


তৃপ্তি


একটা জীবন যারা যুদ্ধ করেছে
তাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর বিষয়টা হল
যুদ্ধশেষে এটা বলতে পারা;
আমরা জীবন ও মানুষকে বিশ্বাস করেছি,
মানুষ ও জীবনও
কখনোই আমাদের হতাশ করেনি।

আর একমাত্র এভাবেই পুরুষ হয়ে ওঠে পুরুষ,
নারী হয়ে ওঠে নারী,
দিবারাত্র জীবন ও মানুষের জন্য
যুদ্ধ করে।

আর এইসব জীবন যখন শেষের সীমানায় এসে দাঁড়ায়
মানুষেরা তখন তাদের গভীরতর নদী খুলে দেয়
আর তারা সেই জলে চিরকালের জন্য অবগাহন করে।
এবং এভাবেই তারা হয়ে ওঠে, দূরের আগুন, 
যা বাঁচে ও বাঁচবার সুন্দরতম দৃষ্টান্ত তৈরি করে।

একটা জীবন যারা যুদ্ধ করেছে
তাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর বিষয়টা হল
যুদ্ধশেষে এটা বলতে পারা;
আমরা জীবন ও মানুষকে বিশ্বাস করেছি,
মানুষ ও জীবনও
কখনোই আমাদের হতাশ করেনি।

 

 

অনুবাদ: আলম খোরশেদ

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!