• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্ক


বিনোদ ঘোষাল
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩, ০৬:২২ পিএম
রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্ক

বাংলা সাহিত্যের দুই মহান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যে যে গভীর সুসম্পর্ক ছিল, তা আমাদের অনেকেরই অজানা। রবীন্দ্রনাথ যেমন অনুজ নজরুলের প্রতি আশীর্বাণী প্রদান করে প্রীত হয়েছেন, তেমনি নজরুলও অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে হয়েছেন ধন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রচিত ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি কাজী নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন। সেটি ছিল রবীন্দ্র পরিবারের বাইরে প্রথম কাউকে একটি বই উৎসর্গ করার ঘটনা। সেসময় কারাগারে ছিলেন নজরুল। বইটি পেয়েই নজরুল বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে নজরুল লিখেছেন, “এ সময়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ নাটক আমায় উৎসর্গ করেন। তাঁর এই আশীর্বাদ-মালা পেয়ে আমি জেলের সর্বজ্বালা, যন্ত্রণা ক্লেশ ভুলে যাই।” নজরুল ইসলাম তাঁর ‘সঞ্চিতা’ কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন তাঁর রবীন্দ্রনাথকে।

 

মাঝেমাঝে কিছু বিশেষজ্ঞকে বলতে শুনি, কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভাকে রবীন্দ্রনাথ খর্ব করেছেন। নজরুল রবীন্দ্রনাথের থেকেও অনেক বড় কবি এবং গীতিকার। আরও অনেক কথা। তো এই প্রসঙ্গে দুটি ছোট ঘটনার কথা আজ বলি—

একদিন গ্রামোফোন কোম্পানির গানের রিহার্সাল রুমে কাজী নজরুল ইসলামের কাছে এসেছেন একটি পত্রিকার সম্পাদক। উদ্দেশ্য নজরুলের কাছ থেকে কয়েকটি কবিতা নেওয়ার। সেই সম্পাদক নজরুলকে একটু তেল দেওয়ার জন্য বললেন, “লোকে যে যাই বলুক আপনার গান কিন্তু রবিঠাকুরের গানের থেকেও অধিক সুন্দর।”
নজরুল চোখ লাল করে সেই সম্পাদকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “দেখুন আমরা যদি কেউ না জন্মাতাম বাংলা সাহিত্যের কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান বেদমন্ত্র, তাঁর গান ও কবিতা আমাদের সাত রাজার ধন মানিক। লেখা নিতে এসেছেন নিয়ে যান। আর কোনোদিন আমার সামনে এমন আমড়াগাছি করবেন না।” এই বলে নজরুল তাঁর কবিতা লেখার কাগজের বান্ডিলটি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন সেই সম্পাদকের দিকে।

আরেকটি ঘটনা বলি।
এক রাত্রে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর সঙ্গে ফাঁকা ট্রামে চেপে বাড়ি ফিরছেন নজরুল। কথায় কথায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণকে বললেন, “ভালো ভালো কবিতা লেখার ইচ্ছা হয় মাঝে মাঝে। আজকেই একটা প্রেমের কবিতা লিখছিলাম। হঠাৎ তারপর কী মনে হলো ভাবলাম, একবার রবীন্দ্রনাথের দুই চারটে এই ধরনের কবিতা উল্টে দেখি তো। দেখলাম, ঠিক তাঁর লেখার ভাবধারা আমার কবিতায় চলে এসেছে। আমি আমার লেখাটা ফেলে দিলাম। এখন বুঝি, ওই দাড়িওলা ভদ্রলোকটি যতদিন মাথার ওপর থাকবেন, ততদিন আমরা ওকে ডিঙোতে পারব না।”

আজ যারা অতিভক্তির কারণে নজরুল ইসলামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের তুলনা টানেন তারা প্রতিবার কাজী নজরুল ইসলামকে, তাঁর ভাবনাকে অপমান করেন।

Link copied!