বইটির প্রচ্ছদের শব্দবন্ধনীতেই উল্লেখ আছে ‘ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ভ্রমণের আদ্যোপান্ত”–এই কথাগুলো। এটি যে একটি ভ্রমণ কাহিনী, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই; বরং বন্ধনীতে ব্যবহৃত শব্দগুলোই এই বইটির প্রাণভোমরা ! যেমনটি ভেতরের প্রচ্ছদেও লেখা আছে যে, “অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের রাজনীতি, স্থাপত্য, স্থাপনা, শিল্প, সাহিত্য, সমাজ, রীতিনীতি, সামাজিক প্রভাব, পরিণতি ও প্রাসঙ্গিক বহুবিধ বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা এই বইটি শেষ পর্যন্ত পাঠকের মনকে একটা অদ্ভুত টানে মোহাবিষ্ট করে রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস!”
তবে, একটানে পড়ে শেষ করার মতো ‘সুখপাঠ্যের বই’ এটি নয় বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। বইটিতে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর ভাবনার অনুসঙ্গ রয়েছে। যে কারণে এটি পড়তে গিয়ে বারবার থামতে হয়েছে; মেলাতে হয়েছে অতীত–বর্তমান আর ভবিষ্যতের পরম্পরাগুলো! ভ্রমণ সাহিত্যে সাধারণত ‘আউটডোর লিটারেচার’ হিসেবে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর রূপায়ন, ভ্রমণবিষয়ক স্মৃতিকথা ও ভ্রমণ গাইড–এসব বিষয়বস্তু লেখায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বাংলাভাষার ভ্রমণ সাহিত্যে সচরাচর দেখা না গেলেও এই বইটিতে লেখক নাজিম ইসলাম পশি ভ্রমণকাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, ঐতিহ্য , রাজনীতি, মিথোলজি ও লোককাহিনী অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবে যোগ করে পুরো ভ্রমণকাহিনীকে সত্যিকার অর্থেই আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছেন।
আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায়, এই বইটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, লেখক ভ্রমণকাহিনীর পাশাপাশি ভারতবর্ষ, তথা এই উপমহাদেশের আপামর জনগণের মানসজগতের একটা ছবি তুলে ধরতে পেরেছেন! দেশভাগের সংকট ও হাহাকার, উপনিবেশিক শাসনের সুফল-কুফল, ভারতীয় সংস্কৃতির উন্নত মান আর আত্মত্যাগের মত বিস্মৃত, উৎকর্ষ মানবিক দিকগুলোকে তিনি বারবার আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বখ্যাত মানুষদের জীবনের অ্যানিকডোটগুলো অত্যন্ত কুশলতার সাথে লেখক তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে জুড়ে দিয়েছেন। এসব তথ্য-উপাখ্যান বিশেষ করে আমাদের আগামী প্রজন্মকে নিজেদের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে আরো বেশী করে জানতে আগ্রহী করে তুলবে এবং পাশাপাশি আরো আত্ম-মর্যাদাবান ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে।
বইয়ের নাম: “আগ্রা-দিল্লি-কোলকাতা”
লেখক: নাজিম ইসলাম পশি
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রকাশক: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ