আরও একটা নতুন বছরে পা রাখলাম আমরা। দুই হাজার তেইশ। তেইশে এসে রেইসে থাকবেন নাকি কেইস খাবেন, বলা মুশকিল! বছর শেষ হলেই টের পাবেন। বাইশের শুরুতে না বুঝলেও শেষে হয়তো বুঝতে পেরেছেন, খুব একটা নাইস ছিল না বছরটা। এ যাত্রায় তেইশে এসে কেইস না খেলেই বাঁচোয়া!
বিশ্বজুড়ে নানান কায়দায় ও বেকায়দায় নতুন বছরকে স্বাগত জানায় মানুষ। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের বাসিন্দারা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রথমে চেয়ারে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ঝাঁপ দেয় নতুন বছরে। মানে ঘরের মেঝেতে! কেবল তা-ই নয়, বছরজুড়ে ঘরে যত বাতিল জিনিস জমা হয়, সব নতুন বছরে তারা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের দরজায় ছুড়ে মারে! অন্যদিকে এস্তোনিয়ায় বর্ষবরণ হয় উদরপূর্তির মাধ্যমে। মানে এদিন গুনে গুনে মোট সাতবার নানা রকম সুস্বাদু খাবার খেয়ে এস্তোনিয়ার বাসিন্দারা নতুন বছরকে অভিবাদন জানায়। এতে সারা বছর ঘরভর্তি খাবার থাকবে—এমনটাই ধারণা তাদের। রোমানিয়ার লোকজন অবশ্য আরও এক কাঠি সরেস! তারা নতুন বছরকে স্বাগত জানায় গৃহপালিত গরুর সঙ্গে কথা বলে! গরু যদি তাতে সাড়া দেয়, তবে বছরটা ভালো কাটবে বলে বিশ্বাস করে রোমানিয়ার জনগণ। অনেকে আবার গরুর কানে কানে ফিসফিস করে বলে ‘শুভ নববর্ষ’!
আয়ারল্যান্ডের অবিবাহিত তরুণীরা নববর্ষের আগের রাতে তাদের বালিশের তলায় একধরনের গাছের পাতা রেখে ঘুমাতে যায়! আইরিশ তরুণীরা বিশ্বাস করে, এ পাতা তাদের বালিশের তলায় রেখে ঘুমালে তারা নতুন বছর ভালো বর পাবে! ইকুয়েডরের নতুন বর্ষবরণের কায়দাটা আরও অভিনব। তারা নতুন বছর উপলক্ষে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে মাঝরাতে সেটা আগুনে পোড়ায়! তাদের মতে, এতে খারাপ ভাগ্য আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়! সুতরাং নতুন বছর তাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে!
নতুন বছর নিয়ে অনেকের অনেক রকম স্বপ্ন থাকে। অনেকের অনেক রকম পরিকল্পনা থাকে। আমাদের পাড়ার এক বড় ভাই একবার নতুন বছর উপলক্ষে ঘোষণা দিলেন, নতুন বছরে ধূমপান ছেড়ে দেবেন তিনি। আমরা তাকে বাহবা দিলাম। অভিনন্দন জানিয়ে বললাম, ‘ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাই। অভিনন্দন আপনাকে।’
কিন্তু কে জানত, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নতুন বছরে সিগারেট ছেড়ে তিনি পাগলা পানি ধরবেন! সে থেকে পরিচিত কেউ নতুন বছরে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা করলে আমি খুব আতঙ্কে থাকি। নতুন বছর এলেই অনেকে নিজেকে গুছিয়ে নিতে চান। কিন্তু মাসখানেক যেতেই দেখেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে শুরু করেছে প্রায় সবকিছুতে!
নিন্দুকের দল প্রায়ই বলেন, নতুন বছর মানে নতুন ক্যালেন্ডার। বাদ বাকি সব পুরনো। অথচ এই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে আমরা হাজার হাজার আতশবাজি ফাটাই। তাতে আমাদের কানের পর্দা ফাটার উপক্রম হয়। পরিকল্পনা করি কত শত। কিন্তু আমাদের জীবনে তেমন কিছুই আর নতুন করে ঘটে না। আমরা আগের মতোই নতুন বছরেও ঘরে বউয়ের আর অফিসে বসের ধমক খাই। যানজটে পড়ে বিগত বছরের মতোই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোকাল বাসে ঝুলতে থাকি। বাজারে গিয়ে অতীতের মতোই ভেজাল খাবার কিনি। রাজনীতিবিদরা নতুন বছরেও তাদের পুরনো অভ্যাস ধরে রাখেন। ঘুষখোর কর্মকর্তা যথারীতি ঘুষ খান। পকেটমার পকেট কাটে। দখলবাজ দখল করে। চাপাবাজ চাপা মারে। লেডিস মানে এডিস মশা আগের বছরের মতোই কামড়ায়। যানবাহনের চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। সড়ক দুর্ঘটনায় আগের মতোই অকালে প্রাণ হারায় মানুষ!
মোদ্দাকথা, সবকিছু আগের নিয়মেই চলে। এ যেন নতুন বোতলে পুরোনো জল। ক্যাল্ডোরটাই কেবল বদলায়। আরেকটা জিনিসও অবশ্য বদলায়। নতুন বছর এলেই এই শহরে বাড়ি ভাড়াটাও বদলে যায়। বছরের শেষ দিকে এসে বাড়িওয়ালা নতুন বছর উপলক্ষে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর আবদার নিয়ে হাজির হন বাসায়। মিষ্টি করে সালাম জানিয়ে আসল কথাটা জানিয়ে দেন। বাড়তি ভাড়া দিতে না চাইলে মুখ ব্যাজার করেন। কখনো কখনো বাড়ি ছাড়ার হুকুম জারি করেন।
পাঠক, তাই বলে হতাশ হবেন না। দুই হাজার তেইশে যদি কেইসও খান, তবে দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকুন। মনে রাখবেন, দুঃসময়ে টিকে থাকা সুসময়ে যুদ্ধ জয়ের সমান।