বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাঁকে ‘জাতীয় কবি’র মর্যাদা দেওয়া হয়। ধানমন্ডির ২৮ নম্বর সড়কের ৩৩০-বি ভবনে তাঁকে স্থায়ীভাবে বসবাসের বাড়ি দেওয়া হয়। ওই বাড়িতে একসময় নজরুল সংগীতশিল্পী, নজরুল গবেষকসহ সাধারণ মানুষের আনাগোনা ছিল। সেই ‘কবি ভবন’ নামে পরিচিত বাড়িটি এখন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট।
১৯৮৪ সালে একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্ম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে কবির স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িকে নজরুল ইনস্টিটিউট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
তবে নজরুল ইনস্টিটিউটে গেলে নজরুলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুনসান সরকারি কোনো অফিস ছাড়া কিছুই মনে হবে না। ঢুকলে ইনস্টিটিউটের এক কোণে নজরুলের ভাস্কর্য দেখা যায়, সেই ভাস্কর্যে নজরুলকে খুব একটা চেনা যায় না, বিকৃত অবয়বে তার ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটে ঢুকতেই নজরুলের গান শোনা যায়, তবে অস্পষ্ট সাউন্ডে। সিঁড়ির ওপরের দিকে গেলে তা আর শুনতে পাওয়া যায় না।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে নজরুল যে বাড়িটিতে কাটিয়েছেন, সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ৯ তলা ভবন। এর ফলে কবি ভবনের শেষ চিহ্নটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। এখন যে ভবনটিতে প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজকর্ম চলছে, সেটিও ভেঙে ফেলা হবে। কবি ভবনের সঙ্গে সংযোগ করে সেখানে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হবে।
সুতরাং ভবিষ্যতে যারা কবি ভবনের ভেতর কবিকে অনুভব করতে চাইবেন, তারা সে সুযোগ আর পাবেন না। কবিকে খুঁজতে হবে নতুন ভবনে স্থাপিত হওয়া জাদুঘরে। সেখানে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে কবির খাট, গ্রামোফোন, দুর্লভ আলোকচিত্র ইত্যাদি।
প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ জুলাই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা শেষ হয়নি। পরে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করতে পারেনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
কাজের দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. রায়হান কাওছার বলেন, “২০১৮ সালে প্রকল্পের অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু করতে দেরি হয়। নকশা পরিবর্তন, ঠিকাদার নিয়োগে আইনি জটিলতা, করোনা পরিস্থিতির কারণে শেষ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৩০ জুনের আগেই ভবনের কাজ শেষ হবে। তিন দফা মেয়াদ বাড়লেও পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।”
এ সময়ে স্মরণ করে দেন, তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে যোগ দেন। কাজ শুরু হয় ওই অক্টোবরেই।
নতুন নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী কাজ শেষ হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৯০ ভাগ কাজ শেষ। আমরা আশা করছি সঠিক সময়ে কাজ শেষ হবে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, শত শ্রমিক সেখানে শেষ দিকের কাজ করছেন। তারা টাইলস, থাইসহ বিভিন্ন ফিটিংসের কাজ করছেন। নির্মাণকাজের প্রতিষ্ঠান এম জামাল কোম্পানির প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল রাকিব জানালেন, ১৬ জুনের আগে এ ভবনটি হস্তান্তর করতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন।
আমরা যখন প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে কথা বলছিলাম, ওই সময়ে এসেছিলেন গবেষক ড. ইসরাইল খান। আমাদের পরিচয় জানার পর তিনি অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, “পারলে সাংবিধানিকভাবে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতির জন্য লিখুন। দেখি পারেন কি না।”
এ সময়ে ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. রায়হান কাওছার বললেন, “ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেই বিশ্ববিদ্যালয় আছে, জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হয়েছে, গেজেট করা হয়েছে, তাই আলাদা করে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে আইন করার প্রয়োজন নেই।”
এদিকে, প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) জাবেদ হোসেন জানালেন, ভবনে দুটি বেজমেন্ট থাকবে। ওই বেজমেন্ট এখন স্টোররুম হিসেবে থাকবে। নতুন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় জাদুঘর স্থাপিত হবে। সেখানে রাখা হবে নজরুলের ব্যবহৃত কিছু জিনিস। এ ছাড়া থাকবে অন্যান্য তলায় হলরুম, শ্রেণিকক্ষ, ইনস্টিটিউটের অফিস কক্ষ, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকের কক্ষ, সমাবেশ কক্ষ, আর্কাইভ, লাইব্রেরি, ও ডরমেটরি।
দেশে শত শত বছর পুরোনো স্থাপনা আছে, যেগুলো না ভেঙে সংস্কার করে রেখে দেওয়া হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এছাড়া কলকাতার জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, আসানসোলের নজরুলের বাড়িটা সংস্কার করা হয়েছে, মূল স্থাপনাকে অবিকৃত রেখে। তাহলে নজরুলের ধানমন্ডির বাড়িটির ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ নেওয়া যেত না? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় নজরুল ইনস্টিটিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. রায়হান কাওছারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এ প্রশ্ন আমারও জেগেছে।”
নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কবি-লেখক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, “ওই বাড়ি যখন ভাঙা হয়, তখন আমি ওখানেই ছিলাম। বাড়িটি অনেক পুরাতন হয়ে গেছিল। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারত। ফলে গণপূর্ত থেকে পর্যটক ও কবি-অনুরাগী যারা এই বাড়িটি দেখতে আসবেন, তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মিনিস্ট্রিতে একটি মিটিং হয়েছিল। এরপর বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়।”
মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক আরও বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সূচনালগ্ন থেকেই যদি বাড়িটি সংস্কার করে রেখে, ইনস্টিটিউট অন্য কোনো বড় স্থানে করা হতো, তবে মনে হয় খুবই ভালো হতো। এতে ইনস্টিটিউটের পরিধিটাও বড় হতো। এখন যেখানে ইনস্টিটিউট তার স্থান খুবই ছোট।”
এ প্রসঙ্গে কবির নাতিন খিলখিল কাজী বলেন, “আমার খুব আফসোস হয়। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কাঠামো ঠিক রেখে সংস্কার করবে। কিন্তু না, ভেঙেই ফেলা হলো। এত বড় একজন কবির স্মৃতি, আমাদের ঐতিহ্য ভেঙে ফেলার আগে কেউ একটিবার ভাবল না। বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংস্কার করতে গেলে আগে তাদের বলা হয় অবকাঠামো ঠিক রাখতে। অবকাঠামোর সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা হয় না। কিন্তু ধানমন্ডির বাড়িটি নিয়ে এভাবে ভাবা হলো না। সবচেয়ে বড় কথা ওই বাড়ি তো বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন কবিকে। তার কথাও ভাবল না কেউ। সেখানে আমাদের জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ছিলেন। তিনিও কিছু বললেন না। আমিও সেখানে ছিলাম। তারা আমাকেও একটিবার কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলেন না। খুব আশ্চর্য হই এটা ভেবে।”
কবি ভবন ভেঙে ফেলা হলো। এখন নজরুলকে বাঁচিয়ে রাখতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাকে নিয়ে বেশি বেশি গবেষণা করা। নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুল গবেষণায় কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) এ এফ এম হায়াতুল্লাহ গড়পড়তা উত্তর দিলেন।
গবেষকের পদচারণ কেমন এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বলেন, “এই পরিসংখ্যান দেওয়া আসলে কঠিন। কারণ আমাদের কাছে কেউ গবেষণাপত্র নিয়ে আসেন না। কেউ হয়ত এসে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে চান, তখন তাকে যতটা সহযোগিতা করা যায় ততটা করা হয়। তা ছাড়া লাইব্রেরিতে কে আসছে, কতজন আসছে, তা লিপিবদ্ধ করা থাকে। সেখান থেকে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যাবে।”
নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) এ এফ এম হায়াতুল্লাহ আরও বলেন, “সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি গবেষণা নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। নীতিমালার আওতায় আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তা ছাড়া গবেষণার জন্য আমাদের কাছে কেউ আবেদনই করেন নাই।”
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্ম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে কাজ করছে। ১৯৮৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৪৩ জনকে পুরস্কৃত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যারা জাতীয় কবিকে নিয়ে গবেষণা ও নজরুল সংগীত সাধনায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। সাহিত্য ও সংগীতসহ তাঁর সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে চার শতাধিক গ্রন্থ এবং ৪৯টি সিডি প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে নজরুল-সংগীত স্বরলিপি ৫৫ খণ্ডে (প্রতি খণ্ডে ২৫টি করে) ১৩৭৫টি শুদ্ধ সংগীতের স্বরলিপি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইনস্টিটিউটের দাবি, নজরুলের গান যথাযথভাবে পরিবেশন, প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে নজরুল সংগীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুর অনুসরণে তাদের তত্ত্বাবধান ও প্রকাশিত প্রামাণ্য স্বরলিপিগ্রন্থ সহযোগে ১৯৮৯ সাল থেকে নজরুল সংগীতের শিল্পী ও শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আর নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সবচাইতে প্রতিনিধিত্বশীল ইংরেজি অনুবাদ নির্বাচনপূর্বক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ এফ এম হায়াতুল্লাহ আরও বলেন, “নজরুলকে নিয়ে একেকজনের আগ্রহ একেক রকম। নজরুলকে নিয়ে যে ধরনের মানসম্পন্ন পড়াশোনা আমাদের প্রয়োজন, তা নেই। নজরুল বিশ্বে কী বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, কেন আমাদের জাতীয় কবি- এমন সব গভীর বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন খুবই কম। এটা কিছুক্ষণ আলোচনা করলে বোঝা যায়, কে তাকে কতটা অধ্যয়ন করেছে। কবির বাল্য ও কিশোরজীবন নিয়ে কিছু আলোচনা রয়েছে, যেমন তার ছোট বয়সে রুটির দোকানে কাজ করা, ইমামতি করা বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে ভুল। কারণ, ওইটুকু বয়সে কবির পেছনে মানুষ কি নামাজ পড়বেন। এগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। এমন ভুল তথ্য প্রকাশ করার দায়ভার সবার। কবিকে নিয়ে কখনই কোনো গভীর গবেষণা হয়নি। বর্তমানে দু-একজন গবেষণা করছেন।”
একই কথা বললেন ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. রায়হান কাওছার। তার মতে, এত বছর ধরে নজরুলকে অত্যন্ত নিম্নভাবে দেখানো হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে নজরুলকে গরীব দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, নজরুল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি আড়াই টাকা করে বৃত্তি পেয়েছেন। একই সমান বেতন পেতেন শিক্ষকও। তাহলে নজরুলকে কেন রুটির দোকানে কাজ করতে হবে?
ইনস্টিটিউটের নিচে বই প্রদশর্নী ও বিক্রয়কেন্দ্রে নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত ‘কাজী নজরুল ইসলাম : দ্য রেবেল পয়েট’ নামে একটি বইয়ে নজরুল গবেষক জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের লেখা ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ প্রবন্ধে পাওয়া যায়, ১০ বছর বয়সে নজরুল গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, ওই বয়সের মক্তবে শিক্ষকতা, হাজী পালোয়ানের কবরে খাদেম ও মসজিদে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত হন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কবি নজরুল ইনস্টিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নজরুল সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, “এগুলো বলা খুব মুশকিল। তবে আমি মনে করি, তিনি কোথায় কাজ করেছেন, কী করেননি তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ তিনি প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন। তিনি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। তার প্রতিভার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি অসাধারণ প্রতিভার মানুষ। এগুলো গবেষণার বিষয়। কবিকে নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা হচ্ছে। আগে যে তথ্য পেয়েছি, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করে আরও নতুন তথ্য পাচ্ছি।”
এদিকে প্রকল্প পরিচালক মো. রায়হান কাওছার বলেন, “এ বিষয়ে আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন। নজরুল ইনস্টিটিউট এ নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি বই শিগগিরই প্রকাশিত হবে। তখন অনেক বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে।”
এ সময় নজরুলের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে, সেটা নিয়ে ‘নজরুলের অসুখ ও অন্তিম নির্বাসন’ নামে ইনস্টিটিউট একটি বই প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।
সাধারণ মানুষের কাছে নজরুলকে পৌঁছে দিতে নজরুল ইনস্টিটিউট কী কাজ করছে, এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বলেন, “কবিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। সীমিত বাজেটের মধ্যে যা যা করা দরকার তা এই প্রতিষ্ঠান করছে। যেমন কবির জন্মদিন পালনের পাশাপাশি কবির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের জন্মদিন পালন করা, জার্নাল ও কিছু বই পুস্তক প্রকাশ করে থাকে। পৃথিবীর কোনো স্থানে সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠান কবিকে বা সাহিত্যিক বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। কমিউনিটির মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। কবি জনগণের, তাই কবিকে বাঁচিয়ে রাখার যে তাড়না তা জনগণের থেকেই আসতে হবে। কিন্তু তা আসে না। এই প্রতিষ্ঠান কবির জীবন এবং কবির অপ্রকাশিত কিছু যদি থেকে থাকে, তা সংগ্রহ করে, সংকলন করে, সংরক্ষণ করবে এবং করছে।”
নজরুলসংগীত শুদ্ধভাবে গাইছেন না অনেকে, সুরের বিকৃতি করা হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধে ইনস্টিটিউটের ভূমিকা জানতে চাইলে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, “অনেকেই নয়, কিছুসংখ্যক মানুষ গাইছেন না। আমরা তাদের কখনই ডাকি না। আমার মনে হয়, তারা কোনো সরকারি প্রোগ্রামেও ডাক পান না। অন্যের সুরে অনেকেই কবির গান করেছেন, সেটি কবি যখন বেঁচে ছিলেন কবির অনুমতি নিয়ে। কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়।”
এদিকে, ইনস্টিটিউটের গ্রন্থাগারে অন্তত ১৮ হাজার বই আছে। সারিবদ্ধ তাকে বই সাজানো থাকলেও নেই কোনো পাঠক। তবে সহকারী গ্রন্থাগারিক তামান্না আনোয়ার জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষকরা মূলত এখানে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দিন খালিই পড়ে থাকে গ্রন্থাগার। মানুষ জানেন না যে, সেখানে এত বড় একটি গ্রন্থাগার আছে। বাইরে বেরিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেল। আমরা যখন বাইক থেকে নামছিলাম, তখন ওই চালক বিস্মিত। তিনি বললেন, “এটা নজরুল ইনস্টিটিউট!”