• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী আজ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৪, ০২:৪৯ এএম
কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী আজ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ছবি: সংগৃহীত

মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল ২৫ বৈশাখ। বাংলা ১২৬৮ সালের এই দিনে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম এক নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটে। যে নক্ষত্রের আলোয় বাঙালি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে। যাঁর হাত ধরে নতুনরূপ পেয়েছে বাংলাসাহিত্য। যিনি বাঙালির কবি, বিশ্বের কবি, বাংলা সাহিত্যের মহীরুহ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। যাঁর কাছ থেকে ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটি নেয়া। মুক্তিযুদ্ধে তার অনেক কবিতা ও গান ছিল সীমাহীন প্রেরণার উৎস।

বিশ্বকবি তাঁর ৮০ বছরের জীবনকালে ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোনো দিক নেই, যা নিয়ে লেখালেখি করেননি। রবি ঠাকুরই বাংলাসাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

কবিগুরুর কবিতা, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক- সবই অপার প্রেরণার উৎস। হাসি, কান্না, আশা-নিরাশা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা, দুঃখ, বেদনায় বাঙালি যার কাছে বার বার ছুটে যান তিনিই রবীন্দ্রনাথ। তাঁর ধর্মীয় ও দার্শনিক চেতনা ছিল- শুধু নিজের শান্তি বা নিজের আত্মার মুক্তির জন্য ধর্ম নয়; মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তাঁর ধর্ম। তাঁর দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন।  

পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে কাটাতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন।

ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আট বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডে যান। সেখানে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।

প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। এর মধ্যেই চলতে থাকে তাঁর সাহিত্যচর্চা।

১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা ও রাজশাহী জেলা ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে।

রবীন্দ্রনাথের রচনায় যাবতীয় মানবিক আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা, অভিব্যক্তির অতুলনীয় প্রকাশ ঘটেছে। বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামে, সমস্যা–সংকটে তাঁর গান, কবিতা জুগিয়েছে সাহস ও প্রেরণা। সবকিছু ছাপিয়ে আছে তাঁর শান্তি, মানবকল্যাণ ও শ্রেয়োবোধের প্রতি সুগভীর প্রত্যয় ও নিরন্তর কামনা। একেই তিনি নানা রূপে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর বহুমাত্রিক সৃজনকর্মে।

নিমগ্ন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সাহিত্যে কবিগুরুর নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য বয়ে এনেছিল বিশ্বের গৌরব। যে গীতাঞ্জলির জন্য তাঁর এই নোবেল পুরস্কার অর্জন, সেই গীতাঞ্জলি এবং আরও অনেক বিখ্যাত রচনা বর্তমান বাংলাদেশের মাটিতেই। তাঁর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে শ্রাবণের বাদলঝরা দিনে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন কবিগুরু।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বাঙালির পরম আরাধ্য এই মহাত্মার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন বলেছেন, “মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয়। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতা বোধ ও মানুষের মিলন। তাকে জীবনমুখী শিক্ষাদর্শনের পথপ্রদর্শক বলা যায়। তিনি শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সব সময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন।”

কর্মসূচি
কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ছায়ানট দুইদিন ব্যাপী রবীন্দ্র-উৎসবের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে বুধবার (৮ মে) সন্ধ্যা ৭টায়। এই উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবে। উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত। 
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তাদের মিলনায়তনে বিকেল ৪টায় আয়োজন করেছে ‘আত্মশক্তির উদ্বোধনেই নিহিত মানবমুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি, বেলা ১১টায় তিনদিনের এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। এছাড়া থাকছে চ্যানেল আইয়ের ‘পর্দাজুড়ে ২৪ ঘণ্টা বরীন্দ্রমেলা’।

Link copied!