• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
তৃতীয় কিস্তি

সে ও নিমবিরিক্ষি যে গুপ্তকথা জানে


আকিমুন রহমান
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩, ০৪:৫৮ পিএম
সে ও নিমবিরিক্ষি যে গুপ্তকথা জানে
সে ও নিমবিরিক্ষি যে গুপ্তকথা জানে ৩

সে। 

আমি নিশ্চিত। খুবই নিশ্চিত যে আমি অবশেষে এসে যেতে পেরেছি সঠিক নগরীটিতে। অবশেষে! অযুত সহস্র বছর ধরে যেই নগরীর সন্ধান করেছি, যার সন্ধানে সন্ধানে বিরামহীন পরিব্রাজন আমার; কত দূর কাল থেকে কত দূর কালে! কত কত লোকালয়ে! লোকালয়ের পরে লোকালয়ে, অন্তহীন হেঁটে চলা! কাঙাল ভিখিরি ক্রুদ্ধ চোখ মেলে রেখে রেখে! শুধু হাঁটা শুধু অন্বেষণ! শুধু ধন্দ্ব! সঠিক নগরীটিতে পৌঁছেছি কি? পেয়েছি তো তার খোঁজ? পেলাম কি?

কত কতবার নৈরাশ্য দংশন করেছে আমাকে। তার বিষ-কামড়ে কত কতবার স্তব্ধ হয়ে গেছে আমার পদযুগল! হায়! আর বুঝি হলো না! আর বুঝি পাব না সেই নগরীর সন্ধান! হায়! আমার অন্তর তখন আর বিশ্বাস রাখতে পারেনি, আমার অনুসন্ধান শক্তির ওপর। আশা হারায়ে গেছে তখন আমার চিত্তলোক থেকে! তখন আমি টলে গেছি। থুবড়ে পড়ে গেছি ধুলোয়। না না! না! পাব না, পাওয়া হবে না—পাব না আমি সেই ভূখণ্ডের খোঁজ। কোনো দিন পাব না! তাই আমার আর পরিত্রাণও জুটবে না কোনো দিন! মুক্তি মিলবে না আমার! রয়ে যেতে হবে আমাকে এইখানে, এই মনুষ্যলোকে। এই অন্য জাতের সুখ-দুঃখ ও বাসনা ধারণকারীগণের ভূভাগে; আমাকে রয়ে যেতে হবে! রয়ে যেতে হবে বদ্ধ একা! এইখানে, এই যে ভূভাগ, পৃথিবী যার নাম, সেইখানেই তাহলে রয়ে যেতে হবে চিরকাল! রয়ে যেতে হবে মনুষ্য-সকলের বাসনা ও দুঃখের তরঙ্গ-কল্লোলের এক নির্বিকার দর্শক হয়ে! 

আমি কে এখানে? কেউ না। আমি কেউ না। এইখানে আমি কারও বান্ধব নই। কুটুম্ব নই। পিতা নই, মাতা নই, সহচর নই। আমি কারও সন্তান নই, পতি নই, প্রণয়ী নই, এমনকি একটুখানি সময়ের চেনা পরিচিত একজনও নই কারও আমি! আমি একা একজন। সদা পরিব্রাজনরত এক ভ্রমমাণ বহিরাগত আমি। আজ কত নিযুত বছর হয়ে গেছে, আমার বক্ষ অস্থির, কিন্তু আমার বাহ্য-অবয়ব অটল স্থির ভঙ্গিধারণ করে থাকা! আমি খুঁজে চলছি তাকে, সেই নগরীকে; উন্মত্ত অধীর চিত্তে। তাকে না পেলে যে আমার উদ্ধার নেই! আমার পরিত্রাণ নেই। তাকে যে আমার খুঁজে পেতেই হবে! তবেই না আমার মুক্তি তবেই না আমার উদ্ধার!

কতবার নিজেকে ছুড়ে দিয়েছি আমি সুউচ্চ গিরিশৃঙ্গ থেকে, ছুড়ে দিয়েছি অতল খাদে। নিজেকে লুপ্ত করে দেওয়ার বাঞ্ছায় বাঞ্ছায় কতভাবেই না নিজেকে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছি আমি। নিজেকে ফেলে রেখেছি ব্যস্ততম নগরীর জনাকীর্ণ পথে। যাক, যাক এখন আমার ওপর দিয়ে পথচারীগণ। নির্বিচার বেশুমার পদক্ষেপ আমাকে থেঁতলে-মেথলে ছিন্নক্লিন্ন মিসমার করে দিক। লুপ্ত করে দিক আমাকে, ধুলোর গহনে। 

হায়! কত পদতলে পিষ্ট হলো ভূশায়িত এই দেহ। কত না থেঁতলে গেল! কিন্তু মৃত্যু এলো কই আমার! আমি যে শাপগ্রস্ত! জরা ও মৃত্যু যে আমাকে স্পর্শ করার যোগ্যতা রাখে না! মনুষ্য পদপাতে আমার আর কোন ক্ষতি হবে! লোকগণের পদতলে পিষ্ট হতে হতে আমি দেখে চলেছি নগরের পরে নগরের উত্থান ও বিলয়। গড়ে উঠতে দেখেছি কত সব নগরীর কত রকমের বিধিবন্দোবস্তকে। দেখে চলেছি, সে-সকল নগরীর বসতকারীগণের বাসনা ও বাসনা-মৃত্যুকে, ক্লেদ ও স্বেচ্ছাচারকে, বিক্রম ও ঔদ্ধত্যের নিভে যাওয়াকে। দেখে চলেছি, আর কঠিন হিসেব কষেছি! এই কি সেই নগরী, যাকে আমার খুঁজে পেতে হবেই? এই কি সেটা? এটাই কি পাপে ও অনাচারে পরিপূর্ণ সেই নগরীখানা, যার সন্ধান পেলে, তবেই আমার দণ্ডভোগের কাল শেষ হবে? এই-ই কি সে? 

আমার নির্বাসন দণ্ড ঘোষণার কালে আমার ঊর্ধ্বতন দুজন আমাকে জানিয়েছিলেন; যদি নিখাদ কলুষ, সীমাহীন ক্লেদ, অবাধ নির্লজ্জ অজাচার ও পাণ্ডতার তাণ্ডবে ভরপুর নগরীটিকে খুঁজে পেয়ে তাকে ধ্বংস করতে পারি আমি, তবেই আমার মুক্তি আসবে। তবেই শেষ হবে আমার দণ্ডভোগ করার কাল।

চলতে চলতে চলতে হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়েছে, আছে আছে। পেয়ে গেছি আমি! পেয়ে গেছি সেই নগরটাকে! এই তো কলুষ এই তো পচন এইখানে! যেমত ভ্রষ্টাচার, কদর্যতা-থিকথিকে থাকার বিবরণখানা দিয়ে গিয়েছিলেন আমার প্রভুদ্বয়, সেসবের সাথে এই তো মিলে যাচ্ছে! মনে হয়েছে, তাহলে এটাই হচ্ছে সেই পাপ-নগর। একে ধ্বংস করলেই তবে আমার পরিত্রাণ! আহ! নিজের দণ্ডমুক্তির বাঞ্ছায় আমার দেহখানা হয়ে উঠেছে তখন ঊর্ধ্বমুখী অগ্নিশিখা! আহ! পরিত্রাণ! পাচ্ছি তবে তোমাকে! 

লগলগে উল্লাসে ছত্রখান হতে হতে আমি তখন গিয়ে দাঁড়িয়েছি সেই নগরের চৌরাস্তার মোহনায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি প্রসারিত করেছি আমার বাম বাহু! পাতাল থেকে পলকে লম্ফ দিয়ে জাগনা দিয়েছে আগুন। সে-আগুন নিমেষে আকাশ ছুঁয়েছে। আমি অতি ধীরে অতঃপর বিস্তার করেছি আমার ডান বাহু। নগরে গলগল রকমে মড়ক নেমেছে। বহু রকম মড়ক। হা হা হা! আমার একপাশে লেলিহান হয়ে উঠেছে অগ্নির নির্দয় ঝাপটা। অন্য পাশ দিয়ে তুমুল বয়ে যাওয়া শুরু করেছে মারি ও মড়ক। তারপর সে দংশন দেওয়া শুরু করেছে নগরটাকে। সেই নগর মৃত্যুময়, দগ্ধ, বিরান হয়েছে এক দণ্ড না ফুরাতেই। সেই ধ্বংসের ভেতরে থির দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, মৃত্যু-কাতরানী-থকথকে নগরীর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে, হঠাৎই বুঝে উঠতে পেরেছি, না না না! 

ভুল হলো ভুল! বড় ভুল! এটি সেই পাপ-নগরী নয়! হায়! এ কী অন্যায়! এ যে ভুল নগরীতে অকারণ প্রলয় আনা! এটা সে নয়, সেই নগর নয়, যাকে ধ্বংস করাই আমার নিয়তি! তখন, যে আমি অন্তঃকরণশূন্য, যে আমি শুধুই তেজ ও আলোকগঠিত, যে আমি সৃজিতই হয়েছি শুধু আজ্ঞাবহ হবার জন্য; সেই আমি, দেখো সন্তাপ আর শোচনায় কী দগ্ধ হয়েছি। বিলাপে বিলাপে ছন্নভন্ন হয়েছি। হায়! হায়! এ কী অপরাধ করে উঠলাম আমি! বিনা অপরাধে কিনা শাস্তি দিলাম নিপাট সাধারণকে! আহা, এদের কী অপরাধ! এটা কী করলাম আমি।

গ্লানি আর অপরাধবোধে তছনছ হতে হতে তখন আমি কী করে চলেছি! নিজের ওপর ঘৃণা আর ক্রোধ নিয়ে আমি তখন ছুটে গেছি নিজেকেই নিজে দণ্ড দিতে। হ্যাঁ, আমাকে শাস্তি পেতে হবে। কঠোর দণ্ডই আমার প্রাপ্য! আমি তখন নিজেকে নিয়ে গেছি পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গে। তীক্ষ্ণ সেই পর্বতশৃঙ্গ থেকে আমি নিজেকে তখন ছুড়ে ফেলে দিয়েছি অতল খাদে। কখনো ফেলে দিয়েছি ভয়াল জলরাশিতে। যাও হে দেহ, ধ্বংস হও তুমি। চিরতরে ধ্বংস হও। পামর, দুর্ভাগা, পাপিষ্ঠ!

যে নগর জীবিত ও প্রাণময় থাকার অধিকার রাখে, তাকে আমি হত্যা করেছি! কীভাবে এমনটা করতে পারলাম আমি! আমার ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল হিসেব দিয়ে কিনা আমি নিরপরাধ নগরটাকে হত্যা করে নিলাম! আমি—আমি তবে বেঁচে থাকি কোন স্পর্ধায়! ধিক, ধিক আমাকে। বেঁচে থাকার একটুও কোনো অধিকার আর কি আমার আছে! না। আমি নিজেকে রেহাই দেওয়ার অধিকার রাখি না। তখন, আমার এই দেহটাকে মৃত্যুগ্রস্ত করে দেওয়ার জন্য, যত যত উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব; নিয়েছি আমি। নিজেকে হনন করার বন্দোবস্ত করে করে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। হা-ক্লান্ত হয়ে গেছি। আহ! কিন্তু নিজেকে মৃত্যু দেওয়া সম্ভব হয়নি আমার। মৃত্যু আসেনি। আমার মরণ হয়নি!

আহ! সেই না কবে থেকে, আমার এমন উদ্বাস্তু উন্মূল দশা চলছে। সেই যখন পরিত্যক্ত হলাম আমি, যখন নিজেকে দেখলাম দণ্ডগ্রস্ত; যখন নিজেকে দেখলাম নির্বাসিত; যখন নিজেকে পেলাম নিজ স্বদেশভূমে—আমার নিজলোকে ফিরে যাবার অধিকারহীন রূপে; তখন তখনই; সেই ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া দণ্ড থেকেই তো আমি মৃত্যুকে যাঞ্চা করছি। সেই তখন থেকেই না আমি তিক্ত বেদনা ও ক্রুদ্ধ ঘৃণায় মৃত্যুকে বাঞ্ছা করা ধরেছি। তখন থেকেই তো আমি মরণকে ডাকা শুরু করেছি। কত কত নামে! কত কত প্রকারেই না তার স্তোত্র রচনা করে চলেছি আমি। ‘ওহে করাল তিমির! ওহে ত্রাণ! ওহে উদ্ধার! ওহে নির্লিপ্ত নির্বিকার! আসো! দয়া দাও আমাকে! আসো। আমাকে মুক্তি দাও। মুক্তি দাও এই দণ্ডশৃঙ্খলিত দেহধারণের পাপ থেকে। পরিত্রাণ হয়ে আসো তুমি, ওহে—’

না! আমার জন্য মরণ আসেনি। বরং মৃত্যু যোজন যোজন দূর থেকে আমাকে উপহাস করে গেছে শুধু, আমার নিকট সে হয়নি কদাপি। কী নির্বন্ধ। কী নিদারুণ নির্বন্ধ! আমি মৃত্যুহীন! আমি যে আলোয় গড়া, আমি যে শুধু তেজরাশির স্তূপ! আমার মুক্তি হয়ে, মরণ তো কখনো আসতে পারে না আমার কাছে। 

আমি মর্ত্যজন নই। আমি যে ঊর্ধ্বলোকবাসী দেবদূত।

আমি দেবদূতই বটে। কিন্তু এমনই আমার ভাগ্য, ঊর্ধ্বলোকের অমরাবতীতে দেবদূতের জীবন আমার যাপন করা হয়নি কোনো দিন। এক দণ্ডের জন্যও না। একটা নিমেষের জন্যও আমি দেবলোকের জীবনকে আস্বাদ করার ভাগ্য পাইনি। কী করেই-বা পাব! আমার জন্মে ওঠার মুহূর্ত থেকেই তো আমি এখানে, এই মর্ত্যধামে। 

জন্ম-নেওয়া কথাটা কি আমাদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে? পারে না। বরং যদি বলি যে আমরা একেকজনে এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠি, নির্মিত হই; তাহলেই হয়তো সঠিকটা বলা হয়। এই যে আমি, এই যে আমার এই দেহটা, এটা সেই বহুদিন আগে, তখন কিনা মাত্রই গড়ে উঠছিল। সেই সদ্য-গঠিত হওয়া দেহখানা নিয়েই, তখনই আমাকে পরিব্রাজন শুরু করতে হয়েছিল। এইখানে চলে আসতে হয়েছিল আমাকে। এইখানে, এই ভূলোকে। তারপর থেকে এখানেই আছি আমি। নিযুত সহস্র বছর ধরে আছি। 

অদৃষ্টের ক্রিয়া কী দারুণ। কী পরিহাস! আমি এই ভূলোকের কেউ নই। অথচ ভূলোকবাসী আমি চিরদিন ধরে। আমি দেবলোকের সন্তান। অথচ সেখানে বাসের অধিকারবঞ্চিত আমি। চির অধিকারহীন। আমাদের আকাশমণ্ডলীতে আছে সাত সাতটি মণ্ডল। সেখানকার পঞ্চম মণ্ডলে; আলোমেঘ, তড়িৎশক্তি, বর্ণময় ও বর্ণহীন তপ্ত বাষ্পরাশি আর হিম দুরন্ত গতিশীল পদার্থকণারা, ত্রিসহস্র বৎসর ধরে পরস্পর একীভূত হওয়ার বিপুল আয়োজনে ব্যাপৃত থাকে। ঘর্ষণ, বিলোড়ন, মিশ্রণ প্রক্রিয়া ক্রমে গড়ে তুলতে থাকে পুঞ্জ পুঞ্জ দীপ্তি ও দ্যুতি। ওই দীপ্তিই ক্রমে গড়ে তোলে দেবদূতের শরীর। 

তেমন এক মিশ্রণ প্রক্রিয়া, ঠিক সেই সময়, আমার দেহখানাকে আকৃতি দিয়ে চলছিল। দেবদূতগণের দেহ এমত প্রক্রিয়ায় গঠিত হয় বটে, কিন্ত সেই দেহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জাগর দশাকে পায় না। সেই দেহকাঠামোর ভেতরে চেতনা সঞ্চার করে দিতে হয়। সেই কর্মের জন্য, সেইখানে, নিয়োগপ্রাপ্ত আছে এক অতি প্রাচীন দেবদূত। সেদিন, আমার দেহখানা তখন সদ্যই আকারপ্রাপ্ত হয়েছে শুধু। চেতনা সে পায়নি। 

সেই দেহে চেতনার স্ফুলিঙ্গ যে সঞ্চার করে দেবে, সেই দেবদূত, ঠিক ওই ক্ষণেই, অন্যত্র অন্য কর্মে ব্যাপৃত হয়ে পড়েছিল। সেই কারণে, সেই দিন, আমার দেহে চেতনদশা আসতে বিলম্ব ঘটছিল। সেই তখন; যখন আমার সেই অসাড়, অপেক্ষমাণ, শীতল দেহখানা ছিল বাষ্পমণ্ডলে ভাসমান; সেই রাক্ষসীবেলায়ই কিনা অচেতন আমার পাশ দিয়ে দ্রুত ছুটে চলছিলেন দুই জ্যেষ্ঠ ও পদস্থ দেবদূত। চলতে চলতে অকস্মাৎ কিনা তাদের, আমাকে চোখে পড়ে।

তারা পথ অতিক্রমণরত ছিলেন, কিন্তু তেমন কোনো ব্যস্ততা-ত্রস্ততা ছিল না তাদের। তাঁরা তখন ছিলেন চলন্ত, কিন্তু ছিলেন ধীরগতিধারী। ছিলেন কিঞ্চিৎ বিরক্ত ও অনিশ্চিত। যেই ভুবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ছিলেন তারা, সেখানে তাদের দুইজনের পাশে থাকার জন্য আরও একজন সঙ্গীর দরকার ছিল তাঁদের। আরেকজন সহযোগী না থাকলে, শুধু তাঁদের দুজনের পক্ষে, আরাধ্যকর্মখানা সুচারুরূপে সম্পন্ন করা হয়ে উঠবে বিপুল রকমে কঠিন। যাত্রা শুরু পূর্বেই তাঁরা কিন্তু আরেকজন সহযোগী দেবদূত পেয়ে ওঠার জন্য বিস্তর চেষ্টা চালান। কিন্তু এমনই দুর্দৈব! সেই কালে দেবলোকের সকল দেবদূতই ছিল পূর্বনির্ধারিত নানা কর্মে নিয়োজিত। ফলে তারা দুজন অন্য কাউকেই নিজেদের সঙ্গী করে নিতে পারেননি।

অগত্যা কী করা। তাঁরা দুজনে যাত্রা শুরু করেছিলেন ঠিকই; কিন্তু তাদের চিত্তে তাদের ছিল বিচলনগ্রস্ত, উন্মনা, অস্থির। নিজেদের তেমন বিপুল অধৈর্য-চিত্ততার কালে; তারা যখন দেবলোকের পঞ্চম মণ্ডল পেরোচ্ছিলেন, তখনই তাদের নজরে আসে যে, এই তো এক দেবদূত দেহ! একে তো সঙ্গে নেওয়া যায়! 

এর দেহে চেতনা সঞ্চারকরণ! এ আর এমন কী দুরূহ কর্ম। 

(চলবে)

সে ও নিমবিরিক্ষি যে গুপ্তকথা জানে (দ্বিতীয় কিস্তি)

সে ও নিমবিরিক্ষি যে গুপ্তকথা জানে (প্রথম কিস্তি)

Link copied!