• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিলান কুন্দেরা থেকে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৩, ০৮:৩১ এএম
মিলান কুন্দেরা থেকে
মিলান কুন্দেরা

দ্য কনশাসনেস অব কন্টিনিউটি

তারা মাঝেমধ্যে আমার বাবাকে নিয়ে একটি গল্প বলতো; তিনি সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে কোন এক জায়গায় গেলে, হঠাৎ রেডিও বা ফোনোগ্রাফে তারা একটি সিম্ফনির বিস্তার শুনতে পেলেন। সেই বন্ধুরা, প্রত্যেকেই সঙ্গীতশিল্পী বা সঙ্গীতপিপাসু ছিলেন, সহজেই ধরে ফেললেন এটি বেটোফেনের নবম সিম্ফনি। তারা বাবাকে বললেন, ‘বলোতো, এটি কোন বাজনা?’’ বেশ ভেবেচিন্তে তিনি বলেন ‘বেটোফেনের মতোই’। তারা হেসে খুন, বাবা নবম সিম্ফনি ধরতে পারেনি! ‘তুমি নিশ্চিত?’ ‘হ্যা’ বাবা বললেন, ‘প্রবীন বেটোফেন’। ‘প্রবীন’ মনে হলো কেন?’ তিনি একটি হারমোনিক শিফট্ চিহ্নিত করেন, যা নিয়ে তরুণ বেটোফেন কখনোই কাজ করেননি।

হতে পারে এই ঘটনা, এটি একটি ফালতু আবিষ্কার কিন্তু স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী একজন ব্যক্তির সচেতন ধারাবাহিকতার কথা বলে, যিনি একটি সভ্যতার অংশ, যা আমাদের আছে বা ছিল। আমরা সবকিছুর মূল্যায়ন একটি ইতিহাসের প্রেক্ষিতে করি, মনে হয় আচরণ বা কাজের অল্প অথবা খুব যৌক্তিক প্রবাহ। আমি তরুণ বয়স থেকেই আমার প্রিয় লেখকদের কাজের পর্যায়ক্রম ভালোমতো জানতাম। আপোলিনেয়ার ক্যালিগ্রামের পরে এলকোল লিখেছেন এটা ভাবাই যায় না, কারন, ঘটনা যদি সত্যিই তেমন হতো, তাহলে তিনি অনরকম কবি হতেন, তার কাজের অন্যরকম মানে দাড়াতো। পিকাসোর প্রত্যেকটি কাজ আমার আলাদা আলাদা ভাবেই ভালো লাগে। আমি তার সামগ্রিক কাজেরও ভক্ত, এক দীর্ঘ সফর, যার প্রত্যেকটি পর্যায় আমি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করি। শিল্পে, ধ্রুপদী অধিবিদ্যিক জিজ্ঞাসা- ‘আমরা কোথা থেকে এলাম? কোথায় বা যাচ্ছি?’ -এর একটি পরিষ্কার, সংগঠিত উত্তর আছে, মোটেও উত্তরবিহীন নয়।

ভ্যালু অ্যান্ড হিস্ট্রি

ধরা যাক, এই সময়ের একজন কম্পোজার একটি সোনাটা লিখলো এবং সোনাটার ফর্ম, হারমোনি ও মেলোডি হুবহু বেটোফেনের মতোই। আরও ধরা যাক, এটিতে এমনি মুন্সিয়ানা আছে , যদি এটি বেটোফেনের কাজ হতো, তাহলে এটিকে তার সেরা কাজগুলোর একটি ধরা হতো এবং তা কোন মানের হয়েছে সেটি কোনো ব্যাপার নয়, আমাদের সমসাময়িক একজন কম্পোজারের হবার কারনে এটি হাসির খোরাক হবে। এর স্রষ্টা বড়জোর একজন মেধাবী অনুকারক হিসাবে হাততালি পেতে পারে। আশ্চর্য! আমরা বেটোফেনের একটি সোনাটা থেকে যে নান্দনিক প্রশান্তি পাই, ঠিক একই ধাচের, সমান শক্তিশালী অন্য একটি থেকে পাই না, যদি এটি আমাদের সমসাময়িকদের কারো কাছ থেকে আসে? এ কি বিশাল ভন্ডামী হয়ে গেলো না? সুতরাং, সৌন্দর্যের অনুভূতি স্বত:স্ফূর্ত নয় বরং আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু মেধার পরিবর্তে রচনাকাল জানার শর্তসাপেক্ষে। এর বাইরে কোনো রাস্তা নেই: ইতিহাসসংক্রান্ত সচেতনতা আমাদের শিল্পসম্বন্ধীয় ধারণায় এমনভাবে মিশে গেছে, ফলে, এই এনার্কিজম(আজকে রচিত সোনাটা) স্বত:স্ফূর্ত হলেও (নূন্যতম ভন্ডামী ব্যাতিরেকে) এটি বিদ্রুপাত্নক, ভূয়া, বেখাপ্পা এমনকি সাংঘাতিক হয়ে ধরা দিতে পারে। ধারাবাহিকতার ব্যাপারে আমাদের অনুভূতি এতোই শক্তিশালী, তা যে কোনো শিল্পকর্ম সম্পর্কে আমাদের ধারণায় নাক গলায়।

ভাষান্তর : আল-ইমরান সিদ্দিকী, কবি।

Link copied!