একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাবিজ্ঞানী, কবি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান আর নেই। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৫টায় রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এসময় তার সময় বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
ড. মনিরুজ্জামান ২০১২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। নিয়মিত চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও গেল বছরের ডিসেম্বরে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর থেকে রাজধানী ঢাকার নিজ বাসভবনে চিকিৎসা নিতে থাকেন।
তবে বিগত কয়েক দিনে তার শরীরে ইন্টারনাল ব্লিডিং হওয়ার ফলে তিনি এনিমিক হার্ট ফেলিওর অবস্থায় চলে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রাজধানীর ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে বাদ এশা তার প্রথম জানাজা এবং তার নিজের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার আদিয়াবাদের প্রফেসর মনিরুজ্জামান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বুধবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ড. মনিরুজ্জামান রায়পুরার আদিয়াবাদে ১৯৪০ সালের ১৫ ফ্রেরুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো. নাদিরুজ্জামান, মা মোসাম্মৎ ফরিদান্নেছা। পুলিশ অফিসার বাবার কর্মস্থল ব্রিটিশ ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার ঝিনাইদহে। তিনি প্রথমে নৈহাটি, পরে বরানগর, এরপর চব্বিশ পরগনা স্কুল ডায়মন্ড হারবারে পড়াশোনা করেন।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় চলে আসেন পৈতৃক নিবাস আদিয়াবাদে। সেখানে গ্রামের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বাংলা সাহিত্যে ভর্তি হয়ে ১৯৬০ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ভারতের মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান একাধারে ভাষাবিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, গ্রন্থাকার ও নজরুল গবেষক। ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন। দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন নিজ বিভাগে সভাপতির দায়িত্ব। এছাড়াও চবির নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন আদিয়াবাদ সাহিত্য ভবন, ভাষাতত্ত্ব কেন্দ্র ও নিসর্গ বার্তা (আন্তর্জাতিক সাহিত্য পত্রিকা)। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও সেবা মুলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন দেশ বরেণ্য এই অধ্যাপক।
ড. মনিরুজ্জামান ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, চট্টগ্রাম একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ২০২৩ সালে একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ভাষা, সাহিত্য ও ফোকলোর বিষয়ে তার ৩৫টির মতো বই ও শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।