বহুদিন তোমাকে চিঠি লিখি না ভেবে মনে হলো পৃথিবী একটা ঝড়ের আকর। ঝড়কে ঘূর্ণি মনে করলে মানে পছন্দ হলেই কেবল প্রকট করা যাবে। ভুল না হলে পালটে দেওয়া যাবে। আর সংশ্লেষে যেহেতু কিছু ভোগের সঙ্গে অভোগ যাচ্ছে, তাহলে কয়েকটা মাছের অলঙ্করণ ভালো দেখাবে না। মানে মাছের পাশাপাশি কাঁটা বেমানান লাগবে না। নৌকাটা টানাজলে লেখা হয়, তাই শুরুতেই একজন মাঝি কিংবা বৈঠা দিলে দেখতে ভালো লাগে। আর নদীর সঙ্গে আমি কোনো শ্যাওলা দেওয়ার পক্ষে না। দিলে চোখ ওইদিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে স্রোতের প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়। তুমি তো জানোই স্রোতই আমাদের জননী ও অজননী।
ঝড়ের পর চরটা একপ্রকার বিরানই হয়ে গেল। যারা গাছপালা আকড়ে ধরে ছিল, তারা খোলা আকাশের নিচে। গোটাকয়েক কলাবতী ঝুলে আছে গাছে। সুরসঙ্গ যেমন ঝুলে থাকে। যারা এগিয়ে আসার কথা ছিল এলো না। ফলে একটু উলটপালট করতে হলো। এবার বানাবো একটা ঘর। আমাদের প্রত্যেকেরই ঘরের স্মৃতি আছে। মনে মনে নিজেই উনিশটি ঘর বানানোর পর ভাবলাম একটা টিনের চালায় ঢেকে দিই সব ঘর, ঘরগুলি একসঙ্গে ঢেকে দিতেই হয়ে গেল বাড়ি। টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি নেমে এলে ভাবলাম পরের ঘরের কথা। যে একবিংশ ঘরটি বানাবে এখন সে বানাবে বিংশ। এই রূপে শেষ হবে শতক। ইতোমধ্যে অনেক নেমে এসেছি আমরা। আরও নামতেই পারি। পশুপাখি, কাক, তক্ষক, মাছ, মৎস্য, মীন সকলের অংশগ্রহণ করবে আমি জানি।
আমরা আমাদের বাড়ির জন্যে কিছু নাম এবং নামের শেষে ধামও ভাবি। দেখা যাক কেমনতর করতাল ওঠে? দর্শক অথবা অতিথি, কিংবা মৎস্যগণ নাম পছন্দ করবে। বলেছি বানানোর কোনো নিয়ম নাই। তবু না-নিয়মের কিছু নিয়ম তো থাকেই। একটি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর, ওটা মনোযোগ সহকারে দেখে পরের ঘর বানাবে, যেন স্থান, কাল আর পাত্রে ধারাবাহিকতা ও ভারসাম্য থাকে। প্রতিটি ঘর বানানোর সময়কাল নিরানব্বই দিন। চাইলে তুমি নিরানব্বই দিনে নয়টি ঘরও বানাতে পারো, কিংবা একটি ঘরও বানাতে পারো।
কারো মুখ শবের নিস্পৃহতা নিয়ে ঝুলে থাকে বাতাসের তারে। জানালা দিয়ে দেখা যায় রাস্তা-ঘাট। রাস্তায় বৃষ্টি কম, ঘাটে বাঁধা নদী। আর অদূরে বা দূরে কোথাও হংসমিথুন সঙ্গমের পর মরে পড়ে থাকে অসঙ্গমের দিকে। তারও আগে তারা মধ্যাহ্নভোজের তোরঙ্গ আহরণ করে, এবং একই সময়ে অনুভব করতে পারে অবতরণ। তাদের জন্যে মসৃণ কাঠের দুইটি সম্পূর্ণভাবে আলাদা বিছানা তৈরি করা হয় এবং কেদারায় রাখা হয় ধূপ ধূম্রবতী। তখন পতঙ্গের মধ্যে ফুল দৃশ্যমান। একটি শান্তির সঙ্গে ভর্তি আর্দ্র রাস্তা নিযুক্ত হয়। বাড়ির দেয়ালের বিরুদ্ধে একটি টিনপাত্র পায়ের ভিতরে বপন করে দেওয়ার অর্থ অজ্ঞাত থেকে যায়।
এইসব পড়ে তোমার কী মনে হলো, তা তুমি শঙ্খের খাতায় লিখলে উত্তর, তার থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে তো আমাকে দিতেই পারো। না হয় চিঠির ভিতর বলে ফেললাম কঠিন কথার বাড়িঘর, নদীঝড় আর ঘূর্ণিবন্ধ রাতের বেদন। হোক না কঠিন। তোমার কাছেই তো লেখা। লেখার ভিতর থাকতেও তো পারে প্রকাণ্ড সূর্যমুখীর বন। খুঁজে নিও।