‘বিস্মৃত ঘুম পাড়ানি গান’ শিরোনামে কানাডা প্রবাসী চারুশিল্পী আসমা সুলতানার ভিন্নধর্মী একক শিল্পকলা প্রদর্শনী শনিবার (২২ জুলাই) উদ্বোধন হবে। শিল্পকলা প্রদর্শনীটি জেরারড আর্ট স্পেস, টরোন্টো, কানাডায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । আগামি ১৯ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।
‘বিস্মৃত ঘুম পাড়ানি গান’ প্রসঙ্গে আসমা সুলতানা বলেন, “১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল যুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম সংক্ষিপ্ত এবং ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । সেই ভয়াবহ ৯ মাস ছিল কোনো ছোটগল্পের মতো, সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর। সেই যুদ্ধে বা্ংলাদেশীরা আমরা সবাই কিছু না কিছু হারিয়েছি। আমরা শুধু আমাদের প্রিয়জনকেই হারায়নি, বরং হারিয়েছি, সেই যুদ্ধ শিশুদের যারা মায়ের মুখ দেখবার আগেই মৃত্যু বরণ করেছে ।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধ শিশুদের মায়েরা হারিয়েছে তাদের সম্ভ্রম এবং সন্তান, তাদের নিজেরই জঠরে। যেখানে মায়ের কোল নিরাপদ আশ্রয় হবার কথা ছিল, অথচ তাদের মায়েদের জঠর হয়েছে তাদের সমাধিস্থান। আর যারা এই ভয়াবহ গণহত্যার মাঝেও বেঁচে ছিল তাদের পাড়ি দিতে হয়েছিল ভিন দেশে কোনো বিদেশী মা-বাবার ঘরে পালিত সন্তান হয়ে। সেই যুদ্ধ শিশুদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের মানচিত্র, পতাকা, মাটি এব্ং আত্মপরিচয়। কিন্তু তারপরে কী হল? আমরা ভুলে গেছি তাদের বিসর্জনের কথা, আমরা আত্মপরিচিয়ের গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি বিস্মৃতির পথে হারিয়ে গিয়ে। আমাদের স্মৃতি, দৃষ্টি, সব কিছু ঘোলাটে হয়ে গেছে রাজনীতি, এবং জীবন দর্শন দ্বারা।”
এই শিল্পী বলেন, “আমরা আগের মতো শিশুদের ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে আর ঘুম পাড়াই না। আমরা ঘুমন্ত এক জাতি হিসেবে নিজেদের আত্মপরিচয়কে ভুলে যেতে বসেছি, ভুলে যেতে বসেছি যুদ্ধশিশুদের আত্মবলিদান। সেকারণে আমাদের ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে নয়, ঘুম ভাঙাতে হবে। আজ সময় এসেছে আমাদের পিছনে ফিরে দেখার, ইতিহাসকে আরো একবার বিশ্লেষণ করে দেখার, যেনো আমরা আমাদের ইতিহাসকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।”
আসমা সুলতানা জন্মসূত্রে বাংলাদেশি বংশদ্ভুত একজন ব্রিটিশ শিল্পী, বর্তমানে কানাডায় বসবাস ও স্বাধীনভাবে দৃশ্য শিল্পের চর্চা করছেন। বাংলাদেশে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি লন্ডন ও টরেনটো শহরে চারুকলা ও শিল্পকলার ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনা করেন। স্বাধীন শিল্পী হিসেবে তিনি কানাডা, যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশে কিছু একক ও বেশ কিছু যৌথ শিল্প প্রদর্শনীতে অংশ নেন। তার কাজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্যক্তির সংগ্রহে সংগৃহীত রয়েছে।