পুঁজিবাদ ও ব্যক্তি মালিকানাকে সাহিত্যের প্রধান শত্রু বলে উল্লেখ করেছেন লেখক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, “সাহিত্য মানুষের জন্য, আর পুঁজিবাদ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে। আজকের পুঁজিবাদী সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘অ্যাটম বোমার’ চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।”
বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) কালি ও কলম পত্রিকার দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সাহিত্যের মধ্যে দর্শন আছে, ইতিহাস আছে। সাহিত্যে দার্শনিকতা ও সংবেদনশীলতা একসঙ্গে থাকে। সাহিত্যের দর্শন অংকের মতো নয়, যুক্তি মেনে চলে। সাহিত্যের সঙ্গে মতাদর্শের সম্পর্ক অনিবার্য। সাহিত্য থেকে মতাদর্শকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। রবীন্দ্রনাথের লেখাতে দর্শন আছে। নজরুল ইসলামের সাহিত্যেও দার্শনিকতা ছিল। তার ভেতর বৈপ্লবিক ব্যাপারও ছিল।”
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিশ্বাস করেন, আজকের পৃথিবীকে মুক্ত করতে হলে পুঁজিবাদকে বিতাড়িত করতে হবে। সামাজিক মালিকানা হওয়া উচিত সাহিত্যের লক্ষ্য।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক চিন্ময় গুহ বলেন, “কালি ও কলম ছাড়া বাকিসব সাহিত্য পত্রিকার ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়।’ দীর্ঘদিন টিকে আছে কালি ও কলম। নয়তো চারদিকে শুধু ‘দেশ’। কালি ও কলম একটা প্রতিবাদ।”
প্রথম দিন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী সম্মেলনে কালি ও কলমের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ও লেখক, কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
চিত্রশিল্পী ও ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, কালি ও কলমের প্রকাশক আবুল খায়ের। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কালি ও কলমের সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া।
পরবর্তী দুই দিন সাহিত্য সম্মেলনের মোট ৭টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এসব অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক, শিল্পী ও বিশিষ্টজনরা। সবার জন্য উন্মুক্ত এ অনুষ্ঠান কালি ও কলমের ফেসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ‘কবিতা ও সাহিত্য–এসেছি কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক চিন্ময় গুহ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও নাটকবিষয়ক আলোচনা সেগমেন্টে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক মতিন রহমান।
দ্বিতীয় দিনের সম্মেলনে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত থাকবেন, কবি ও কথাশিল্পী মাহবুব সাদিক, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও গবেষক সালেক খোকন, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ পথিক, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক রুমা মোদক, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ।
শেষ দিন শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেবেন শিক্ষাবিদ, নারী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মাহবুবা নাসরীন, লোকসংস্কৃতি গবেষক ও নাট্যকার সাইমন জাকারিয়া, শিল্পী ও শিল্প-লেখক মুস্তাফা জামান, কথাশিল্পী মানস চৌধুরী, চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীসহ আরও অনেকে।