একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, বরেণ্য কথাশিল্পী জাহানারা ইমামের আজ (২৬ জুন) ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্টয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯২৯ সালের ৩ মে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। দেশভাগের আগেই জাহানারা ইমামের পরিবার পূর্ববাংলায় চলে আসে। তাঁর ডাক নাম ছিল জুড়ু। তার বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আর মা সৈয়দা হামিদা বেগম ছিলেন গৃহিণী।
১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন জাহানারা ইমাম। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)। সেখান থেকে বিএ পাস করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬০ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালে বাংলায় এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মময় জীবনের প্রথম সময় কাটে ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১৯৫২-১৯৬০), বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (১৯৬২-১৯৬৬) এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬-১৯৬৮) হিসেবে তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
জাহানারা ইমাম একাত্তরের দুঃসহ দিনগুলোর প্রাত্যহিক ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজের স্মৃতি ঘিরে লিখেছিলেন ‘একাত্তরের দিনগুলি’—যা ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো : অন্য জীবন, বীরশ্রেষ্ঠ, জীবন মৃত্যু, চিরায়ত সাহিত্য, বুকের ভিতরে আগুন, নাটকের অবসান, দুই মেরু, নিঃসঙ্গ পাইন, নয় এ মধুর খেলা, ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস, প্রবাসের দিনলিপি প্রভৃতি।
শহীদ জননী বিভিন্ন সময়ে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮,) কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), আজকের কাগজ থেকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার (বাংলা ১৪০১ সন), নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা (১৯৯৪), স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭), রোকেয়া পদক (১৯৯৮), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (২০০১), ইউনিভার্সাল শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার (২০০১), শাপলা ইয়ুথ ফোর্স কারমাইকেল কলেজ গুণীজন সম্মাননা প্রভৃতি।