মহল্লায় মুদিদোকান খোলার সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও কম নেই। সুবিধার মধ্যে দুপুরে বাসায় গিয়ে আরামসে খেয়ে আসা যায়, মাঝেমধ্যে শরীর ম্যাজম্যাজ করলে দোকান বন্ধ রেখে একটু জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগও হয়। তবে আক্কেল আলী সুবিধার কিছুই গ্রহণ করেনি। যা পেয়েছে সবই অসুবিধা। শ্বশুরের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে মহল্লায় দোকান খুলেছিল। মনে আশা, চাল-ডাল-তেলের সরবরাহ দোকান থেকেই বাসায় দেবে আর লাভের টাকাগুলো থাকবে সঞ্চয়ে। তৈজসপত্র, ঘটি-বাটি, চামচসহ অনেক কিছু এখন বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন প্যাকেজের সঙ্গে দিয়ে দেয়। যেমন পাউডার কিনলে মগ ফ্রি, সাবান কিনলে শ্যাম্পু, ক্রিম কিনলে বাটি আর তেল কিনলে চিরুনি। এসবে সংসার খরচ সাশ্রয় হবে, সময়মতো ঋণও পরিশোধ করতে পারবে। আক্কেল আলীর সম্বন্ধি ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিল, ধার নিচ্ছেন নেন, সেটা যেন যৌতুকে রূপান্তরিত না হয়!
যদিও ঠাট্টা, ভেতরে কি প্রচ্ছন্ন অপমান লুকায়িত ছিল না! মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আক্কেল, সব শালার পাওনাই পাই পাই করে পরিশোধ করবে। কিন্তু পারল কই? পাঁচ মাসের মধ্যেই দোকান বিরান প্রান্তরে রূপ নিল। ইতিউতি দুই একটা আগাছা কিংবা ঘাসের উপস্থিতি মেলে কেবল! চাল ডাল পেঁয়াজ রসুন মসলাপাতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তুলতে পারেনি। সব সর্বনাশের মূল বাকি বিক্রি। একমাত্র দোকানদাররাই জেনে-বুঝে নিজের পায়ে বল্লম মারে! মহল্লার মানুষ কমবেশি সবাই পরিচিত হয়ে গেছে, কাকে অবিশ্বাস করবে সরল বিশ্বাসী আক্কেল আলী! যে লোক সন্ধ্যায় পরিশোধ করবে বলে হরেক রকম সওদাপাতি নিয়েছিল, এরপর ছয় মাসেও তার চেহারার দেখা পাওয়া যায় না! কোন রাস্তা দিয়ে যে তারা হাঁটে, সেটাও ঠাহর করে উঠতে পারে না আক্কেল। এখন তো মাস্ক ব্যবহারে চেনা মানুষকেও অচেনা লাগে। ধুরন্ধরদের কেউ কেউ চোখেও মাস্ক বেঁধে নিলে সেটা মুখোশের কাজ করে।
বেআক্কেলিপনার মাশুল নিজেই দিচ্ছে আক্কেল। মালপত্রশূন্য দোকানে বসে থেকে বিক্রিই-বা করবে কী! এক চালান এনেছে বাকিতে, সেই টাকার শোধ দেওয়ার আগে নতুন মাল মিলবে না। সব ব্যবসায়ী তো তার মতো দরাজ-দিল নয়, দফায় দফায় ফাঁকির কারবার করবে। শ্বশুরের আনুকূল্য নিশ্চয়ই তারা পায়নি। এমন হতশ্রী দশার মধ্যেই খবর এলো, এক বুজুর্গ বাবা আস্তানা গেড়েছেন মুরগির ঝিলে। ঝিলপারে একসময় প্রমোদভ্রমণে মোরগ-মুরগি আসত বলে জায়গাটার নামই হয়ে গেছে মুরগির ঝিল। উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করলে ঝিল ভরাট করে গড়ে উঠেছে বড় একটি মুরগির ফার্ম। সেই ফার্মে হরেক রকম মোরগ-মুরগি ও ডিম উৎপাদিত হয়। মুরগির ঝিলে একটি টিনের বাসা ভাড়া নিয়ে নিয়ম করে ভক্ত-আশেকানদের দেখা দেন বাবা। অনেকের সমস্যার সমাধান দিয়ে দেন। এক নারীর বাচ্চা হচ্ছিল না, বাবার একান্ত প্রচেষ্টায় বাঁজা অবশেষে গর্ভবতী হলো। একজনের চাকরি হচ্ছিল না, বাবার তেলপড়া খেয়ে পরের সপ্তাহেই ভালো ব্যবসা বাগিয়ে নিল। একজন কিছুতেই পাওনা টাকা তুলতে পারছিল না, বাবার দরবারে জানানোর পরদিনই দেনাদার বজ্রপাতে মারা গেল। তাতেও পাওনাদারের খুশি ধরে না, মিষ্টি খাইয়েছে মহল্লার লোকজনকে। বাবাকে দিয়েছে তার প্রিয় রসকদম। বাবা কুদরত উল্লাহ মিষ্টির রস চাখতে চাখতে বললেন, ‘টাকা ফিরত পাইছিস?’
উৎফুল্ল দেনাদার বলল, ‘টাকা না পাইলে কী অইছে? শত্রু তো মরছে! সব আপনের দোয়া।’
‘আইচ্ছা, যা। আর কোনো সমস্যা অইলে কইস।’
চোখ মুদলেন বাবা। সবাই বুঝে গেল, এখন আর ডিসটার্ব করা যাবে না। গভীর ধ্যানে চলে গেলে কুদরত উল্লাহ তদবির দেন না। সবাই চলে গেলেও বসে থাকে ঠায় আ আ ওরফে আক্কেল আলী। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বাবা চোখ খুলে দেখতে পেলেন। বললেন, ‘ আক্কেল, তুই বড় সমস্যায় আছিস?’
আক্কেল জড়িয়ে ধরল বাবার কদম মোবারক’ ‘অনেক সমস্যা। ব্যবসায় ধরা খাইছি। বাকির টাকা তুলতে পারি না। সব কয়টারে আপনে ঠাডার মাধ্যমে মাইরা ফালান বাবা!’
‘ওরা যদি বাজ পইড়া মইরা যায়, লাভ কী? টাকা তো পাবি না তুই।’
আক্কেল ভেবে দেখল, কথা সত্য। বাবার পরামর্শ অনুযায়ী, পরদিন কথাখেলাপিদের তালিকা পৌঁছে দিল দরবারে। এরপরের ম্যাজিকের জন্য প্রস্তুত ছিল না। পনেরো দিনের মধ্যেই সব টাকা উঠে গেল তার। ব্যবসায়ও ফিরল রমরমা অবস্থা। তিন মাসের মধ্যে শ্বশুরের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করতে পারল। সব হয়েছে বাবার দোয়ায়। এখন আক্কেল বাবার খাস লোক। যতক্ষণ না দোকানদারি করে, তার চেয়ে বেশি সময় খেদমত করে, ফুট-ফরমাশ খাটে। ইতোমধ্যে জেনেছে, তার সব দেনাদারকে একে একে ডেকে নিয়েছেন বাবা। নসিহত করেছেন টাকা পরিশোধ না করার ভয়াবহ পরিণতি সম্বন্ধে। এরপর সবাই টাকা পরিশোধ করলই, এক মাস পর কার কী সওদা লাগবে, সেই টাকাও আগাম দেওয়া শুরু করল। গত সপ্তাহে একজনের সঙ্গে দেখা হলো বাজারে। সে বলল, ‘ভাই, তিন বছর পর আমার ছোড মাইয়ার বিয়া। চাইর বস্তা চাইল, বিশ কেজি ডাইল, তেল, মসলা আরও কিছু জিনিস লাগব। এই নেন পঞ্চাশ হাজার টাকা অ্যাডভান্স রাখেন।’
‘তিন বছর তো ম্যালা দূর!’
আক্কেলের কোনো আপত্তিই ধোপে টিকল না। এভাবেই বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন ভাসিয়ে দিতে থাকল তাকে। আক্কেলের বুঝল, এসবের পেছনে আছে বাবার অবদান। আজকাল দোকানদারি বেশি সময় না করলেও চলে। বাবার পেছনে সময় বাড়ানোই অধিক লাভজনক। বাবার একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে ভীষণ তাজ্জব বনে গেল আক্কেল। সকালে ভক্ত-মুরিদদের দেখা দেওয়ার পর বাবা আক্কেলকে বাজারে পাঠালেন। বললেন, ‘এক কেজি পাকা পেঁপে নিয়ে আয়। ফরমালিন মেশানো হলেও সমস্যা নেই।’
অবাক আক্কেল বলল, ‘হক্কল মানুষ চায় কেমিক্যালমুক্ত খাইদ্য, আর আপনে এইডা কী কইলেন, বাবা!’
বাবা হেসে বললেন, ‘ওরে না-লায়েক, ওই সব ফরমালিনের কি সাইধ্য আছে এই কুদরত উল্লাহর গায়ে সামান্য একটু আঁচড় কাটে? বরং আমি ফরমালিনযুক্ত ফল কিনলে আরেকজন খাঁটি ফল কিনার সুযোগ পাইব।’
‘তাইলে তো বাসি-পচা খানা খাইলেও আপনের কিছু অইব না!’
‘না। তবে দুনিয়ায় খানা-খাইদ্য গুরুত্বপূর্ণ কিচ্ছু না। তুই তাড়াতাড়ি বাজারে যা। আমি আবার আরেক জাগায় যামু। কত মাইনসের কত সমস্যা। বাইরে থেকে তালাডা মাইরা যাস। আধা ঘণ্টা মধ্যেই ফিরিস।’
বাসার বাইরে থেকে তালা মারতে হবে কেন, এটা নিয়ে আক্কেলের মনে খোঁচাখুঁচি করলেও প্রশ্ন করার সাহস পেল না। বাবা রেগে যেতে পারেন। বেশি কথা তার না-পছন্দ।
বাজার থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ফিরতে পারল না আক্কেল। গ্রহণপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় আজকাল দূরদূরান্তের গ্রাহকরাও বায়না দিতে শুরু করেছে। গ্রাহকদের অনেক টাকা গুনে পকেটস্থ করে যখন সে ফিরছিল, পথে দেখা হয়ে গেল বাবার সঙ্গে। এ কী করে সম্ভব! দ্রুত পায়ে এগিয়ে বাবার কাছে ক্ষমা চাইল। দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে বলল, ‘আমি তো তালা মাইরা আইছিলাম। বাইর হইলেন কেমনে?’
বাবা হাসলেন। বললেন, ‘ওরে বেকুব, তোগো এই সব তালা-চাবির সাইধ্য আছে, আমারে আটকাইয়া রাখনের?’
এরপর এমনও হতে লাগল, বাবা এক ঘণ্টার কথা বলে দশ মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে যান। বাইরে তালা মারা থাকে, অথচ ফুড়ুত করে বেরিয়ে যান। বাবা কি তবে চড়ুই পাখিও সাজতে পারেন!
পঞ্চম দিনেও একই ঘটনা ঘটলে বাবাকে বলল, ‘এই সব ক্যামনে পারেন? আপনে কি সিনামার সুপারম্যান!’
বাবা স্নেহের হাসি হাসলেন। বললেন, ‘জীবদ্দশায় তুই আমার মূল্য বুঝবি না। কেউ বুঝব না। বুঝবার পারবি মিরিত্যুর পরে। আমার মাজারের মূল খাদেম হবি তুই। বুজুর্গানি আর গদি তোরেই দিয়া যামু।’
ইতোমধ্যে বাবার অসীম ক্ষমতার কথা লোকমুখে ছড়িয়ে দিল আক্কেল। যত বড় তালাই হোক, কোনো সমস্যাই নয়। বাবা চোখের দৃষ্টি দিয়ে তাকালে পৃথিবীর সব বদ্ধ তালাই খুলে যাবে ফটফট করে! এমন প্রচারের বিরূপ প্রভাবও লক্ষ করা গেল। একধরনের বিপদেই পড়লেন কুদরত উল্লাহ ও তার খাস শিষ্য আ আ। শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিপক্ষ দলের রাজনীতিক, চোর-ছ্যাঁচড় ও তাবত অপরাধীর গডফাদাররা দলে দলে ভিড় জমাল দরবারে। সবারই অভিন্ন আওয়াজ : আমাদের অমুককে মুক্তি করে দিন। জেলখানার বাইরে নিয়ে আসুন। জেলের তালা ভাঙেন, ওদেরকে আনেন!
বাবা সবাইকে অপেক্ষা করতে বলেন। কথা দেন, দেখবেন। কিন্তু তার দেখা আর শেষ হয় না। বড় নেতা গোছের একজনের ধমক খেয়ে বাবা থতমত হয়ে বললেন, ‘চিন্তা লইয়েন না। একশ বছরের মধ্যেই আপনার ওই লোকরে মুক্ত কইরা আনমু।’
‘একশ বছর মানে? ও বাঁচবে কত বছর! ইয়ার্কি মারান?’
এবার বাবার দিশ ফিরলে মিলমিশ করার চেষ্টা করেন। আর যাহোক, নেতাদের রাগানো যাবে না। এরা শিষ্য হিসেবে ভালো কাজ দেয় কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে ভয়ংকর। নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে একটা মজলিশি আসর করার সিদ্ধান্ত নিলেন বাবা। রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান যেখানে জড়িত সেখানে যে তার কিছু করা উচিত নয়, এসব বিষয়ে বয়ান দেবেন। পরামর্শ দেবেন সবাইকে সুপথে আসার। যেন কারাগার কারও ঠিকানা না হয়। বয়ানের দিন-তারিখ ঠিক হলে প্রচারপত্রও ছাপা হলো। সুগন্ধি কাগজে মুদ্রিত সুফি সম্মেলনের খবর ছড়িয়ে পড়ল নানা দিকে, নানাভাবে।
ভক্তরা নাক দিয়ে টেনে সুগন্ধ টেনে নেয় বুকে-মনে। আক্কেল বাবার ক্ষমতা বোঝানোর জন্য লোকজনকে বলা শুরু করল, ‘দ্যাখছস, বাবা যেইখানেই হাত দেয়, হেইডাই সুগন্ধিতে ভইরা যায়!’ লোকজন ধন্য ধন্য করতে লাগল। শুধু আক্কেল আলীর এক খদ্দেরের ছেলে মানল না বিষয়টা। ছোকরাটা নাকি বিজ্ঞানবিষয়ক কী সব বইপত্র পড়ে। সুগন্ধি প্রচারপত্রের গুণগান শুনে আক্কেলকে বলল, ‘চলেন। আপনাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব।’
জরুরি কাজ না থাকায় আক্কেল রাজি হলো। দোকান এখন তার অনুগত লোকরাই চালায়। রাতের বেলায় বিক্রিলব্ধ ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে আক্কেল বাসায় ফেরে। ঝর্ণাধারা প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার বিজ্ঞানবাদী না হলেও বাস্তববাদী। তরুণের কাছ থেকে সব শুনে তিনি বললেন, ‘তাহলে এই ঘটনা আক্কেল ভাই! আমাকেও বুজুর্গ ব্যক্তি বলতে হবে আপনার!’
আরও সুগন্ধি প্রচারপত্র, কালি, মেশিনপত্র ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন তিনি আক্কেলকে। আক্কেল একপ্রকার বেআক্কেলই হয়ে গেল। এটা কীভাবে সম্ভব; বাবার শানশওকত কেন বাইরের লোকজনের নাগালেও থাকবে!
মন-মরা আক্কেল সেখান থেকে মুরগির ঝিলে গেল। বাবা আজ তার এক ভিআইপি ভক্তের বাসায় যেতে বললেন আক্কেলকে। একটা খবর পৌঁছাতে হবে। শেষে এ-ও বললেন, ‘তালা দিয়া যা। আধা ঘণ্টার মইধ্যে ফিরিস। আমি বাজারে যাব।’
এই প্রথম আক্কেলের মনে হলো, বাবা বাজারে গিয়ে কী করেন! বাজার-সওদা যা-ই লাগুক, সে নিজেই কেনে। ভক্তদের দেওয়া কত নজরানা নষ্ট হয়ে যায়। ভোগ করার মানুষ নেই। দ্বিধান্বিত অবস্থায় বাবার বাসার বাইরের বেঞ্চে বসে রইল আক্কাস। আস্তে-ধীরেই যাবে। সে না এলে বাবা যে বেরোতে পারবেন না, এমনও নয়। মুরগির ঝিলের এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত পাকা বেঞ্চ বানিয়ে দেওয়া। সাহায্যপ্রার্থীরা এসব জায়গায় বসে অপেক্ষা করে। কখনোই বসেনি, আজ বসল আক্কেল। ভালো বাতাসও পাওয়া যাচ্ছে। শরীর জুড়িয়ে যায়। হঠাৎ চোখ গেল বাবার বাসার পেছনের অংশে। এ কী দেখল আক্কেল! পেছনে টিন ফাঁক করে আলগোছে বেরোচ্ছেন কুদরত উল্লাহ। বেরিয়ে প্রথমে পোশাকের ময়লা ঝাড়লেন। তারপর একটা চিকন তার দুই দিকের টিনের ফুটো পেঁচিয়ে ‘লক’ও করলেন। এই বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করেই তাহলে বাবা নাম কামিয়েছেন!
চোখাচোখি হলে উভয়ের জন্যই লজ্জার হবে, দ্রুত স্থান ত্যাগ করল দীর্ঘদিন বেআক্কেল থাকা মুদিদোকানি আক্কেল আলী।