“আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর/ থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর/ পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই/ এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।” শিশুতোষ এই কবিতাটার কথা মনে আছে নিশ্চয়। ‘আমাদের গ্রাম’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে একজন শিশু প্রথম তার গ্রামের দৃশ্য কল্পনা করতে শেখে। বিখ্যাত এই কবিতার কবি বন্দে আলী মিয়া। আজ তার ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন আজকের এই দিনে রাজশাহীতে কবির মৃত্যু হয়।
বন্দে আলী মিয়া একাধারে স্বনামধন্য কবি, ঔপন্যাসিক, শিশু-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রকর। তিনি ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলার রাধানগর গ্রামে এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মুন্সী উমেদ আলী ছিলেন পাবনা জজকোর্টের একজন নিম্ন পদের কর্মচারী।
বন্দে আলী মিয়া পাবনার মজুমদার একাডেমি থেকে ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে কলকাতা আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন এবং ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫-এ ইসলাম দর্শন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি কলকাতা জীবনে রবীন্দ্র-নজরুলের সান্নিধ্য লাভ করেন। তখন তার প্রায় ২০০ খানা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সে সময় বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানিতে তার রচিত পালাগান ও নাটিকা রের্কড আকারে কলকাতার বাজারে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৬৪-র পর প্রথমে ঢাকা বেতারে ও পরে রাজশাহী বেতারে চাকরি করেন।
তিনি তার কবিতায় পল্লী প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনায় নৈপুন্যের পরিচয় প্রদান করেছেন। প্রকৃতির রূপ বর্ণনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার রচিত শিশুতোষ গ্রন্থ আজও অমর হয়ে আছে। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘকুমারী, মৃগপরী, বোকা জামাই, কামাল আতাতুর্ক, ডাইনি বউ, রূপকথা, কুঁচবরণ কন্যা, ছোটদের নজরুল, শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা।
শিশু সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৭৮ সালে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিস পদক লাভ করেন। তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
