• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিল্টন বিশ্বাসের একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা


মিল্টন বিশ্বাস
প্রকাশিত: মে ২, ২০২২, ০৬:১৩ পিএম
মিল্টন বিশ্বাসের একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা

নদী ও বুনোহাঁসের চিঠি

 

১.

নদী ও বুনোহাঁসের গল্প

 

বুনোহাঁস ডেকেছে তাকে দুঃখ নদী-

বলেছে সে দরকার নেই তার দুঃখ কোনো-

তবু হৃৎপিণ্ডের ভেতর হাতড়ে ফিরছে নদী-

কোথায় তার বুনোহাঁস?

এক গোছা ঘাসের পেলবতা?

নীল আকাশ বড্ড ভারাক্রান্ত-

বুনোহাঁস ভেবে দেখেছে নদীর কাছে যেতে তার কি কি দরকার?

অসম্ভব সব ভাবনার খেলা চলে আকাশ জুড়ে।

এয়ারপোর্ট রোডে জ্যোৎস্না রাতে খুব কাছে আসে চলে নদী,

ফিস ফিস করে জানায় তার ছটফটানি হৃৎপিণ্ডের কথা।

বুনোহাঁস মুখ গোজে নদীর কোমল বুকে।

আকাশজুড়ে চাঁদের রঙিন বাতি, নিচে তার রজত রেখার অযুত কষ্ট-

নদী হাত বাড়িয়ে দেয়। বুনোহাঁস বাতাসে ভেসে আলিঙ্গনে জড়ায়।

জংলাহাঁস মুখ গোজে নদীর গভীর চুলে।

হাসি মুখে নদী তাকে ছুঁয়ে দেখে-

কত সহজ হৃদয়।

সব দুঃখ পিছনে পড়ে থাকে।

বুনোহাঁস আর নদীর গল্প আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ঝকমকে রোদে।

 

২.

 বুনোহাঁসের অবিরত ভেতরে থাকা

 

চলেছে নদী আপন মনে-

আবেগে কম্পিত অদ্ভুত পথ তার-

কোন শাখায় ফিরবে তার চোখ?

কোন মোহনায় আটকে যাবে ঢেউ?

যাচ্ছে চলে বুনোহাঁসের আঙিনা ফেলে-

যাচ্ছে চলে বেগবতী প্রাণ হয়ে-

নদীর টানে হাঁটছে সারস,

ঝড়ছে পালক অনিঃশেষ-

রক্তনদী নও তো তুমি-

প্রেমযমুনায় ভাসছে উত্তল প্রতীক্ষা-

প্রতীক্ষা কেবল কান্না মেদুর আলিঙ্গন।

প্রতীক্ষা তার সবুজ জীবন স্বপ্ন রঙিন।

শেষ হয় প্রতীক্ষা যাপন

ঘুরে ফিরে আসে নদী

বুনোহাঁস জানে এ আসা নিরন্তর

এ আসা অবিরত ভেতরে থাকা। 

 

৩. 

 নদীর বুকে ভালোবাসার জীবন

 

নদী ভাবে তার অদৃষ্ট কি?

ভাবে অদৃষ্টে আছে ভালোবাসা।

একদিন বুনোহাঁস নিজের দীঘি ছেড়ে নদীর ঠিকানায় যায়,

একদিন সে মুখ লুকায় নদীর কপালে,

চুলে তার ইলিবিলি কাটে।

নদী তার ঢেউ দিয়ে পিছনে ফেলে-

আছড়ে পড়ে বুনো স্মৃতি নদীর পাড়ে।

নদী যায় কেবল যায় ফিরে না চায়-

বুনো ভালোবাসা ডুব দিয়ে সাঁতরে ক্লান্ত হয়।

ভালোবাসলে পাখা গজায় বুনোহাঁস তা জানে-

ভালোবাসলে সাহস বাড়ে বুনোহাঁস তা মানে-

ভালোবাসলে দায়িত্ব আসে বুনোহাঁস তা বলে-

বুনোহাঁস জানে ভালোবাসলে সব দরোজা খোলে।

কোথায় ভালোবাসা জানে সে নদী,

বুনোহাঁসের পালক ঝরে-

নদীর বুকে ভালোবাসা জীবন হয়ে আসে ফিরে।

 

৪. 

নদী, আমার পাখি

 

ছল-চাতুরি শিখিনি কখনো।

স্রোত ভেঙে যেতে চায় মন।

গির্জায় তুমি প্রার্থনারত, রাঙা হাত নিশ্চুপ-

দূরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমি।

ভক্তির আরতি ঢেলে যিশুর দিকে নম্র নেত্র।

বুকে জাগে আশা-

প্রভুর প্রণাম শেষে একটু করুণা দৃষ্টি!

আশির্বাদ জাগে, দেবী হয়ে দেখা দেয় সবুজ নদী-

দৃষ্টিতে লেগে থাকে অভিমানী গ্রীবা।

বাক্যালাপে ছন্দের খেলা? নাকি আসল পরশ?

দৃষ্টি ছুড়ে বলে যায়-

যদি জাগে ঢেউ এসো তবে আমার সাথে।

তবু প্রতারণার প্রেম তুচ্ছ জেনেছি দুজনে।

নদী চলে যায়। ঢেউ ফেলে রাখে তীরে।

আকাশের আলো কেঁদে ফেরে।

আর প্রার্থনা শেষে ধাবমান সেই আঁখি-

প্রেম পথে হাঁটবে বলে বারতা জানায়।

পথ তার খুঁজে পায় ঠিকানা-

বুলিয়ে দেয় ঠোঁটের আদর।

মিলনের গানে গানে-

গির্জার ঘণ্টা ধ্বনি জেগে থাকে বাতাসে-

মোহনার দিকে নদী, পাখি হয়ে ঢেউ ভাঙে আকাশ।

সৃষ্টির বীজ বুনে উজাড় করি আমি এক বুনোহাঁস।

 

৫. 

নদীর মন খারাপ, বুনোহাঁসের জ্বর, তবু তাঁরা...

 

নদী, শুধু যদি বুনোহাঁসের চোখের জল দেখতে পারতে-

পৃথিবীতে তুমি একা নও ভাবতে,

হারিয়ে গেছে যা, ফেলে এসেছ যা,

ভাবতে না তার অভাব বিস্তর।

যদি তুমি আমার হৃদয়কে সুস্থ করতে পারো-

তুমিই হবে জয়ী।

মাত্র একবার নয় সহস্রবার-

এমনকি যখন আমি চোখ বন্ধ করি-

তোমার মুখের ভেসে ওঠে একটা ছবি-

আমি উপলব্ধি করি-বিশ্বজুড়ে তুমি আছো।

তুমি হারালে এমন একটা ক্ষতি হবে যাতে আমি ধ্বংস হবো-

লক্ষ্মী আমার, তোমার জীবন হোক অনন্তকালের।

নিঃসঙ্গ মানুষের জন্য কি আছে বলো?

যেদিন তুমি আমার হলে, সেদিন থেকে ভাবনা অনেক।

তুমি কেন আমাকে ত্যাগ করতে চাচ্ছো?

আমার হৃদয়ে তুমি একমাত্র আশার বসতি-

তোমার স্মৃতি বেঁচে থাকবে বাইবেলের অক্ষরে-

গির্জার উঠোনে, কবরস্থানের সৌধে।

কেন তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?

রাস্তায় হাঁটছি, তোমার এয়ারপোর্ট রোডের দিকে চেয়ে-

যেখানে আমাদের প্রেমের শুরু, যেখানে সবকিছু মুক্ত সতেজ-

বিশ্বাস করতে পারছি না-

কি  করে সম্ভব প্রতারণা আর মিথ্যা ভাষণের-

এটা হতে পারে না আমার জীবন থেকে,

জীবন বিলিয়ে দিয়েছি যখন নদীর বুকে।

প্রেম পেয়েছে শুধু নিশানা একই পথের।

বুনোহাঁস এখনও নিজের ভিতরে নদীর শরীর দেখে, ওর কণ্ঠস্বর শোনে।

ওর ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় অনবরত।

নদী, তুমি বুনোহাঁসকে যেসব কথা বলেছো, তা সময় গেলেও কখনো বদলাবে না-

কারণ আমরা দু’জনে বলতে চেয়েছি-

আলোকধারার প্রেম ফিরে এসেছে আমাদের কাছে-

তুমি আমার কষ্ট দেখতে পারবে বলে-

তোমার হাসিমুখ চিরদিনের হোক বুনোহাঁসের নদীমাখা মন তাই চায়।

 

৬. 

বৃষ্টিমাখা নদী

 

তুমুল বৃষ্টিতে নদীকে বিদায় দিতে ইচ্ছে করছিল না-

নীরবে তাকিয়ে চলে গেলো। অদ্ভুত আবেগে বারবার মথিত, হতচকিত।

এয়ারপোর্ট রোডের দিকে তাকিয়ে সমস্ত শিরা-উপশিরা কাঁদছিল তখন-

মনে হচ্ছিল ও আমাকে যাচ্ছে ছেড়ে-

যাচ্ছে চলে- আর ফিরে চাইবে কি?

খুনসুটি আবেগের এ এক ব্যাকুল আবেশ-

এ যাতনা সংসার, পরিবার, যুক্তির অতীত।

পাতা ভেজা সন্ধ্যা গেল, রাত এলো কিন্তু নদী তরঙ্গে মন উতলা।

হোয়াটসআপে চোখ যায়, কখনো বা মধুর একটি শব্দ দিয়ে বারতা আসে, আসে কি?

প্রতীক্ষা কেবল, প্রতীক্ষার কান্না মেখে করুণ চেয়ে থাকা।

তুচ্ছ মনে হতে থাকে জীবনের অন্য কিছু, রাষ্ট্র ও সমাজের দায়-

মন চায় নদীর দায় নিয়ে চলি, কথা বলি, ভালোবাসার পালক মাখি গোপনে-

ঘুরে ফিরে থাকি তার সাথে।

ভালোবাসি, ভালোবাসি পুরনো এই কোটি মানুষের সংরাগে-

আবার বলি ভালোবাসি বৃষ্টিমাখা নদীকে।

 

৭. 

বুনোহাঁসের কাতর চাওয়া

 

ইদানিং বুনোহাঁসের আদর পেতে খুব ইচ্ছে জাগে,

ইচ্ছে করে নদীর চুলে ইলিবিলি কেটে মুখ লুকিয়ে ডাকতে।

অফিসে ও বড্ড জেদি, কেবল কাজে ডুবে থাকা-

অফিসে ওর জানালা দিয়ে আলো এসে মুখ করে সমুজ্জ্বল-

অফিস তাকে করে রাখে নীরব পাথর-

অফিস তাকে দেখতে ফিরে করেছে বোধ হয় নিষেধ-

অথচ কুটির থেকে বের হয়ে নদীতীরে বসে হংস নিরাকার।

গাছের ছায়া এসে আদর বুলিয়ে দেয়-

মাটির গন্ধ ভিজিয়ে শান্ত করে শরীর-

পাখির কলরবে মুগ্ধ ধ্যানমগ্ন,

তার পিপাসা অতল জলে ফেলে সাড়া,

নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আকুলি-বিকুলি চলা,

নদী টানে কাছে; পরশ বুলিয়ে বলে কথা,

কিন্তু হায় বুনোহাঁস জংলা; কালো তার পালক-

নিজের ঠিকানা নিয়ে ভয় বড়, বড় সংশয়।

তবু নদীর স্রোত অবিরাম, ভাঙে বুক, টলে অনিঃশেষ-

আর আশা নিয়ে, প্রেম যেচে প্রহর গোনে কালো সে হাঁস।

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!