আর মাত্র পনেরো দিন! তারপরেই পাল্টে যাবে সব। পুরো জীবনটাই। ছয় ফুট বাই ছয় ফুট মাপের ঘুপচি ঘরের তক্তপোশে এপাশ-ওপাশ করতে করতে ঘাম মুছে নিল নিভা। এক টুকরো জানালা দিয়ে বাতাস পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। শুধুই ভ্যাপসা চাপা গরম। ঘামে ভিজে জ্যাবজ্যাব করছে সারাটা শরীর। সায়া বুক পর্যন্ত টেনে রাতে শোয়ার অভ্যাস তার।
বাবা-মা দাওয়ায় শোয়। সে আর বোন ঘরে। নিরাপত্তার কারণে। পল্লি অঞ্চল। বসতি গা ঘেঁষে ঘেঁষে।
—দিদি! আর মাত্র পনেরো দিন, না?
চমকে উঠেছে নিভা, বলল, ঘুমাসনি বোন?
ললিতা অস্ফুটে বলল, এই গরমে ঘুম আসে বল? তুই কি বিয়ের কথা ভাবছিলি?
—হুম।
—মন খারাপ করছে? না আনন্দ?
—দুটোই! তোদের ছেড়ে যাব…!
—হ্যাঁ! আমি আর তুই একসঙ্গে শুই। আমার তো আরও বেশি হবে। তোর সাথে গল্প করতে করতে ঘুমোই।
—হুম। তোরও বিয়ে দিয়ে দেব। আমি একটু গুছিয়ে নিয়েই তোর জন্য ছেলে দেখব। তোর বিয়ে ধুমধাম করে দেব।
—তাই?
—হ্যাঁ। বাবা-মাকেও নিয়ে যাব। দেখি যদি অন্য কোথাও…
—জামাইবাবু ভালো তো রে?
রাজকুমারের মুখটা মনে হলেই বুকের ভেতর ধড়াস করে শব্দ ওঠে। শরীরের স্নায়ুগুলো দিয়ে রক্ত ছোটে তীব্র গতিতে, সে টের পায়। স্ত্রী অঙ্গগুলোতে বিদ্যুৎ নাচে। জলোচ্ছ্বাস হয়। সিটিতে কোম্পানির হয়ে খাবার ডেলিভারি দেয় সে। প্রিন্স নাম কাজের জায়গায়। কোড নেম নাকি! ট্রেনে ফিরতি পথে আলাপ একদিন। বেশি রাতে ফাঁকা লোকাল ট্রেনে যাত্রী কম থাকে। মেয়েরা আরও কম। ভয় যদিও লাগে না তার। তার আর হারাবার কী। সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল সে যেদিন থেকে কাজে নেমেছে, ধর্ষণের ঘটনা হলে যদি বিপদ বোঝে তাহলে প্রতিবাদ করবে না। আগে জীবন। তার ওপর পুরো পরিবার নির্ভর করে আছে। বাবা কোমর ভেঙে পড়ার পর থেকে অক্ষম। স্নানের জলটাও মাকে তুলে দিতে হয়। মা দুই বাড়ি কাজ করে। তাতে সংসার চলে না। সমাজ ভালো নয় সে জানে। মেয়েদের শরীরের বিপদ অজানা নয়। প্রতিদিন যে মানুষগুলোকে সে সঙ্গ দিচ্ছে, তাদের দেখেই বোঝা যায়।
—দিদি! কী ভাবছিস?
—তোর জামাইবাবুর কথা রে। ভগবান আছেন বল? না হলে ওর সঙ্গে ট্রেনে ওই রকমভাবে দেখা হবে কেন? এখনো ভাবলেই ভয়ে বুকটা কেমন করে ওঠে! একটা ডেলিভারি দিতে সেদিন দশটা হয়ে গেল! ফেরার ট্রেন পৌনে এগারোটায়। ট্রেনে চেপে দেখি কামরাতে আমি ছাড়া আর ওই লোকটা। ডাকাতের মতো দেখতে। আমি সিটে বসেই যখন ভাবছি উঠে অন্য কামরায় চলে যাব, লোকটা এসে আমার সামনে বসল। বিড়ি ধরিয়ে আমার দিকে ধোঁয়া ছেড়ে দিল। চোখ দুটো…উফফফ! বলতে বলতে বিছানায় উঠে বসেছে নিভা। গামছা দিয়ে বুক তলপেট ঘাড় গলা মুছে নিল। বলল, আমি উঠে পড়েছি তখন। লোকটা বলল, সব কামরা ফাঁকা গো সুন্দরী! আমাকে ভয় পেয়ে পালাচ্ছ?
—দিদি!
—ভুলতে পারি না রে বোন! আমি বললাম আমার স্বামী অন্য কামরায় উঠেছে। লোকটা হাসছে তখন। ঠিক সেই মুহূর্তে তোর জামাইবাবু এলো। আমি ওকে দেখে বললাম, তুমি কোথায় উঠেছিলে এভাবে আমাকে একা ফেলে? রাজকুমার ঠিক বুঝে নিয়েছিল। খুব বুদ্ধি ওর। বলল, আরে তুমিই তো আমাকে না বলে এই কামরায় উঠেছ? আমি তো উঠেই আমার বন্ধুকে পেয়ে দুটো কথা বলেই চলে এলাম। কত দিন বাদে দেখা ওর সাথে। রেলেই পুলিশ এখন! ওর ডিউটি শেষ। বাড়ি ফিরছে।
—জানি বলেছিলি। ভগবান বাঁচিয়েছে সেদিন।
অন্ধকারেই মাথা নাড়ছে নিভা, বলল, হুম। আমার জীবনের সাথে এভাবে জড়িয়ে পড়বে বুঝিনি! ভগবান মুখ তুলে না চাইলে কি আর হতো?
—অনেক কষ্ট করেছিস দিদি! অনেক কষ্ট করেছিস ছোটবেলা থেকে।
—ঘুমো। একফালি জানালা গলে যেটুকু বাতাস আসছে, উদোম পিঠটা সেদিকেই দিয়ে বসে রইল নিভা। বাতাসে ঘাম শুকোচ্ছে। প্রতিটি রোমকূপ পথে বাতাস খেলে যাচ্ছে। কী আরাম! জানালার ফালি পথে যত দূর চোখ যায়, শুধুই ঘর। ঘুপচি ঘর আর ঘর! সোঁদা সরু পথ। একশ ঘরের বসতি। খেটে খাওয়া মানুষের মাথা গোঁজার আশ্রয় মাত্র। আকাশে আজ অদ্ভুত আলো! সেই আলো ঘরের চালগুলোতে এলিয়ে পড়ে আছে। কয়েকটি ঘর থেকে কথাবার্তার ক্ষীণ শব্দ আসছে। মায়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে নিভা। আর মাত্র কটা দিন। তারপর ফ্ল্যাট বাড়িতে উঠে যাবে সে। রাজকুমার বলেছে, আর কাজ করবে না তুমি। আমার বউ বাড়িতে বসে ভালোমন্দ এটাসেটা রাঁধবে আর আমি কাজ করে ফিরে খাব। ঘর সাজাবে সুন্দর করে বুঝলে? আমার খুব শখ আমার বাড়িটা বড়লোকদের মতো সাজাব। রোজগার কম এখন। কিন্তু এই চাকরি তো আর সারা জীবন করব না। ধারদেনা করে ফ্ল্যাটটা কিনেছি।
নিভার মুখজুড়ে খুশির আলো খেলে যাচ্ছে। সেই সকাল থেকে উদয়াস্ত খেটে শরীর আর দেয় না তার। রাতে যখন ঘরে ফেরে একটা মৃত শরীর টেনে টেনে আনে সে। মাঝেমধ্যে ভয় হয়। খুব ভয়। কত দিন এভাবে চলবে, এই ভেবে ভয়। রাজকুমার আসার পর সেই ভয় অনেকটা চলে গেছে। চোখ বন্ধ করলেই যেন দেখতে পায় সে, সকাল সকাল স্নান সেরে পুজোপাঠ চুকিয়ে রান্নাঘরে ঢুকছে সে। মনের মতো রান্না করছে। রাজকুমার খাচ্ছে তৃপ্তি করে। আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে তাকে। প্রতিটি রোমকূপে আনন্দধ্বনি অনুভব করছে সে। চোখের পাতাজুড়ে স্বপ্ন গাল চুইয়ে শরীরের গোপনে নেমে যাচ্ছে। ঘুম জড়িয়ে আসছে এইবার।
মোবাইলেই কাজকর্মগুলো আজকাল হয়। কাস্টমারের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম অসুবিধা হতো। অস্বস্তি হতো।
সকালে স্নানের আগেই দেখে নিল মোবাইলে মেসেজ। ছয়জন কাস্টমার যোগাযোগ করেছে।
মুখে পাউডার মাখতে মাখতে দেখে নিল সে নিজেকে ভালো করে। লিপস্টিক হালকা করেই লাগায়। পরে কাজের জায়গায় গিয়ে গাঢ় করে নেয় রং। প্রথম প্রথম এত সেজে বেরোতেও লজ্জা লাগত। মেয়ে বউ থেকে দাদু জ্যাঠার বয়সী লোকগুলোও প্রশ্ন নিয়ে তাকাত। সে নিজেই কৈফিয়ত দিয়েছিল, সেলসের কাজ পেয়েছি। কোম্পানি বলে দিয়েছে ফিটফাট হয়ে কাস্টমারের কাছে যেতে। তাই…!
মেয়ে বউরা সন্দেহ নিয়ে তাকাত। এদের সবেতেই সন্দেহ। নিন্দেচর্চা আর উঁকিঝুঁকি দেওয়া এই বসতির লোকেদের অভ্যাস। সেসব গায়ে মাখলে চলবে কেন? খেটে খেতে হবে তাকে। পয়সা রোজগার না করলে হাঁড়ি চড়বে না। বাবার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভাবতে ভাবতেই ঘরের বাইরে পা দিতেই অনিমা বলল, এখন এই কয়টা দিন না বাহির হইলেই নয় নিভা? এই কয়টা দিন একটু শরীলটার যত্ন-আত্তি করলে হতো না? অমন ধপধপে রং পুরাই জ্বইলা গ্যাছে।
মাথা নাড়তে নাড়তে চটি পরল সে, বলল, নাহ্। এই কয়টা দিন আরও বেশি কইরা খাটতে হইব মা। তোমার জামাই তো আর কাজে বাহির হইতে দেবে না! রোজগারপাতি যা করার এই কয়টা দিন…।
—কেনাকাটা বাকি আছে। তাড়াতাড়ি ফিরবি তো? তোর বেনারসিটাই তো বাকি। জামাইয়ের টুকটাক বাকি।
—দেখছি। চেষ্টা করব।
কাজ সারতে সারতে সেই সন্ধে রাত। শরীরও দেয় না আজকাল আর। যত না শরীরে ক্লান্তি তার চেয়েও মানসিক ক্লান্তি বেশি! সুখের চিন্তা করতে করতেই হয়তো এই ক্লান্তি আসে তার মনে হয়। তার নিজেরও তো ইচ্ছে করে না দুপুর থেকে সন্ধে একই কাজ করতে!
আজ ফেরার পথেই রাজকুমারকে নিয়ে তার পছন্দমতো জুতা জামা গগলস পারফিউম কিনে দিয়েছে। মনে মনে খুশি সে। কাল থেকে আর কাজে বেরোবে না ঠিক করে নিয়েছে। রাজকুমারেরও সম্মতি তাতে। বিয়ের পর বাবা-মাকে দেখবে সে কথা দিয়েছে, এইটুকু বড় শান্তি।
বকুলপাড়ার এই মাঠটা তার বড় প্রিয়। খানিক দূর হাঁটলেই নদী সুরঞ্জনা। তার শীর্ণ শরীরে জলের ভার কম। তবু বয়ে যায় আনন্দে। এই মাঠেই ছাগল চরিয়েছে সে কিশোরী বেলায়। এইখানে বসেই সুখ-দুঃখের গল্প করেছে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে। কত দুপুর লুকিয়ে আচার খেয়েছে আর পাড়াতুতো দাদাদের নিয়ে প্রেমের গল্পে মজে গেছিল তারা।
কাল বিয়ে তার। ট্রেনে চেপে ও তিন ঘণ্টার পথ শ্বশুরবাড়ি। আজ দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সে চলে এসেছে সুরঞ্জনা নদীর ধারে। মন খারাপ নদীর পাড়জুড়ে! বুড়ো বটের নিচে দাঁড়াল সে। এই বট ও তার কত কথা জানে! এই বটের নিচেই শাড়ির আঁচল পেতে কত সকাল-দুপুর শুয়ে থেকেছে সে আর বন্ধুরা! বটের শাখায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সে বলল, মনে রেখো।
সন্ধে হতেই ঘরে ফিরে এসেছে। মেহেন্দি পরাতে আসবে পাশের ঘরের বউদি। ঘরে তত্ব সাজানো চলছে। বসতির মেয়ে বউরা সবাই এসে জুটেছে। পাড়ার ছেলেরা টুনি লাইট দিয়ে সাজাচ্ছে গোটা বসতিটাকেই। এটা তারই ইচ্ছে ছিল। অনেক অন্ধকার কাটিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশপথ যেন আলোয় আলোয় সেজে ওঠে। তাকে দেখেই প্রবীণারা রসিকতা শুরু করে দিয়েছে। অল্প বয়সী মেয়ে বউরাও যৌনগন্ধী রসিকতায় মেতেছে। লজ্জায় আনন্দে এক অনাবিল সুখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। রাত কাবার হলেই বিয়ের আচার অনুষ্ঠান শুরু হবে। আজ সারা রাত কেউই ঘুমোল না।
অনিমা আজ কত বছর পরে তার নিজের বিয়ের বেনারসিখানা বের করে পরেছে। প্রতিবেশীরাই জোর করে পরিয়ে দিয়েছে। তার ভারি লজ্জা, মেয়ের মা আবার এত সাজের কী আছে? তার ভাব। বাবা কৃষ্ণপদ ও নতুন ধুতি শার্ট পরেছে। স্ত্রীকে গভীর চোখে দেখছে যে লক্ষ করেছে। কত দিন পর তাদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান! ললিতার অনেক দিনের শখ একটা লেহেঙ্গা পরার। কিনে দিয়েছিল সে। ললিতা বারবার চুল বাঁধছে আর খুলছে। কিছুতেই যেন মনমতো হচ্ছে না তার। খুশির আবহাওয়া এইভাবেই বুঝি ছড়িয়ে পড়ে! গোটা বসতিতেই উৎসব। এখানে যেমন ঝগড়া লাগে পায়ে পায়ে, তেমন আপদ-বিপদে একে অন্যের পাশে থাকে। উৎসবে পরবে সবাই মেতে ওঠে। বসতিতেই ভিয়েন ঠাকুর রান্নার ভার নিজে নিয়েছে। ছেলেছোকড়ার দল কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে প্যান্ডেল বাঁধা থেকে বাজার করা, কুটনো কোটায় সবেতেই। সে এক মহাযজ্ঞ!
রানী রঙের বেনারসিতে সেজেছে সে বিকেলে। এত দিনের রোজগারের টাকা একটু একটু করে সঞ্চয় করেছিল নিজের বিয়ের জন্য। খুব সাধ ছিল, সাধ্যমতো উৎসব করে বিয়ে হবে তার। অথচ বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বাবার নেই। যেটুকু সঞ্চয় করেছিল কৃষ্ণপদ, তা তার অসুখেই খরচ হয়ে গেল।
পাশের ঘরের বউ তাকে সাজাতে সাজাতে বলল, কী লাগছে তোমায় জানো না! আমি ছেলে হলে… উফফ! ফুলশয্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম না।
—ধ্যাৎ! লজ্জায় লাল সে। যদিও রাজকুমার অনেকবার চেয়েছে তার সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হতে, কিন্তু সে রাজি হয়নি। বলেছে, থাক না। সবই তো তোমার। তুমিই তো পাবে। জানো তো শুধু শরীর তো অনেকেই পেতে পারে। জোর করেও পেতে পারে… তাতে আনন্দ নেই। মন যখন নিজে থেকে খুশি হয়ে শরীর দেয়, তখনই স্বর্গের আনন্দ!
রাজকুমার সামান্য আশাহত হলেও বলেছিল, আমার বউটা যে সতীলক্ষ্মী বুঝতে পারছি। আমাকে ভালোবেসেও যখন শুতে চায় না বিয়ের আগে তখন…একগাল হেসে চুমু খেয়েছিল।
কপালে মস্ত টিপ, চন্দনের কারুকাজ গলায় সোনার নেকলেস, হাতে কিছু ঝুটো সোনালি চুড়ির সঙ্গে সোনার চুড়ি পরেছে সে। এর বেশি সামর্থ্য তার নেই।
রাত আটটায় লগ্ন বিয়ের। বসতি সেজেগুজে অপেক্ষায় বরযাত্রী আসবে বলে।
সাতটার সময়েই বরযাত্রী এসে পড়ল হইহই করে। সারা মহল্লার মেয়ে বউ উলুধ্বনি শঙ্খ বাজিয়ে স্বাগত জানাল। পৌনে আটটার সময় ছাদনাতলায় নিয়ে এলো নিভাকে বউ মেয়েরা। কৃষ্ণপদ আর ললিতার আনন্দ দেখে কে!
আচমকাই শোরগোল, প্রথমে ফিসফিসিয়ে ক্রমশ তা হল্লায় পরিণত হলো।
—হবে না। হবে না। এ বিয়ে হবে না। এ বিয়ে এখনই বন্ধ করে দাও। বরপক্ষ থেকে তীব্র চিৎকার।
মুহূর্তে স্তব্ধ সবাই। প্রশ্ন, কেন? কেন?
বরের খুড়োশ্বশুর ততক্ষণে এগিয়ে এসেছে মারমুখী হয়ে, এই মেয়ে বেশ্যা। শহরে এসে বেশ্যাবৃত্তি করে। এই মেয়ে আমরা ঘরে তুলব না।
পাড়ার একজন দাদা এগিয়ে এসে বলল, প্রমাণ? প্রমাণ কী? আমাদের মেয়েকে আমরা চিনি না? বললেই হবে?
রাগে কাঁপতে কাঁপতে খুড়োশ্বশুর বলল, আমি জানি। ও আমার সাথে শুয়েছে! উত্তেজনায় কথাগুলো বলেই একহাত জিব কাটল সে। নিমেষে শুধরে নিয়ে বলল, আমি দেখেছি ওকে খদ্দেরের সাথে। চলো চলো এক্ষুনি চলো এখান থেকে। অ্যাই রাজকুমার চল। আর যাহোক বেশ্যাকে ঘরের বউমা করা যায় না।
ঘণ্টাখানেকও লাগল না বরপক্ষের বেরিয়ে যেতে।
যাওয়ার আগে রাজকুমার নিভার মুখোমুখি হয়ে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল, সত্যি? বলো সত্যি কি না। তোমাকে অনেক বিশ্বাস করেছিলাম। তোমার মুখের কথা আমি বিশ্বাস করব। বলো নিভা।
শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিভা।
—তাহলে সত্যিই! ছিঃ! আমাকে…আমি যখন চেয়েছিলাম, ঢং করেছিলে! হ্যাঁ? খানকির বাচ্চা! তুমি আমার সব নষ্ট করে দিলে! সব। সব। আর মুহূর্ত দাঁড়াল না রাজকুমার।
সমস্ত আলো বাতি নিভে গেল। সমস্ত আয়োজন পড়ে রইল। বড় এক দুর্যোগে সব লন্ডভন্ড। শ্মশানের নিস্তব্ধতা গোটা মহল্লাজুড়ে।
আজ চাঁদ পশ্চিম আকাশে বেশ বড় ডিঙি ভাসিয়েছে। সমস্ত আকাশজুড়ে নক্ষত্ররা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছে। ঝকঝকে নীল আকাশ জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে।
পায়ে পায়ে বটবৃক্ষের কাছে এসে দাঁড়াল নিভা বধূ বেশে। ওড়নাটি বটের ডালে বেঁধে দিয়ে বলল, তাহলে তুমিই নাও আমাকে। তুমিই নাও৷
সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র চাঁদ একসাথে দেখল বটের ডাল ধরে ঝুলছে এক বধূর দেহ। যখন হাওয়া দিচ্ছে জোরে মেয়ে দুলে দুলে হাসছে যেন। আর তার কোনো দুঃখ নেই! বটবৃক্ষ তাকে ফিরিয়ে দেয়নি বেশ্যা বলে!