দেশের আধুনিক শিল্পকলা চর্চার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। যাঁর চিত্রকলা মানবতার আর্তির এক অনবদ্য ক্যানভাস। তাঁর ক্যানভাসে অসামান্য হয়ে আছে বাংলার মানুষের মুখ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কলাকেন্দ্রে ‘লোক ঐতিহ্য জয়নুল আধুনিকতা’ শিরোনামে চলছে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী সুমন ওয়াহিদ।
গত ১ জানুয়ারি বিকেলে তিন সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জয়নুল আবেদিনের ছেলে খায়রুল আবেদিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন।
প্রদর্শনীটির কিউরেট শিল্পী সুমন ওয়াহিদ বলেন, “একজন মাস্টার পেইন্টার হলেও লোকশিল্প নিয়ে জয়নুল আবেদিনের ছিল বিশেষ ভাবনা। সে কারণেই সোনারগাঁ লোক জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় তিনি রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। মূলত এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে লোকশিল্পের অনুরাগী জয়নুল আবেদিনকে মেলে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই শিল্পায়োজনের মাধ্যমে লোক ঐতিহ্যের অনুরাগী জয়নুল আবেদিনের সুলুক সন্ধান করা হয়েছে।”
গ্রাম বাংলার পথে-প্রান্তরে ঘুরে সংগৃহীত লোকশিল্পের নানা অনুসঙ্গের সমাহারে সেজেছে প্রদর্শনালয় কলাকেন্দ্র। শুধু জয়নুলের সংগৃহীত লোকশিল্প নয় সেসব শিল্পের অনুপ্রেরণায় তাঁর সৃজিত ড্রইং ও পেন্টিং নিয়ে সজ্জিত হয়েছে এই শিল্পায়োজন।
শিল্পাচার্যের পরিবারের সংগ্রহশালা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রদর্শনীতে ঠাঁইপ্রাপ্ত চিত্রকর্ম থেকে কারুশিল্পসমূহ। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোনারগাঁও লোক জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় জয়নুলের উদ্যোগী ভূমিকার বিভিন্ন নথিপত্র।
প্রদর্শনীতে শিল্পাচার্যের রেখাচিত্রের সঙ্গে চিত্রকর্মের দেখা মিলেছে। তবে প্রদর্শনীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে জয়নুলের বিভিন্ন চিত্রকর্মের লে আউটের স্কেচ ও নোটগুলো। জয়নুল আবেদিন ছিলেন বাংলার লোকশিল্পের একনিষ্ঠ সংগ্রাহক। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পাচার্যের সংগ্রহ করা সেসব লোকশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। এর বাইরে বাংলাদেশের সংবিধানের বইতে ব্যবহার করা বাংলার চিরায়ত যে কাঁথার ডিজাইন তিনি ব্যবহার করেছিলেন সেই মূল কাঁথাসহ তাঁর সংগৃহীত বেশ কিছু কাঁথাও উপস্থাপিত হয়েছে প্রদর্শনীতে। রয়েছে মূল সংবিধানের কপি। এছাড়া বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময় সেখান থেকে জয়নুলের সংগ্রহ করা লোকজ উপকরণও ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এই আয়োজনে।
প্রদর্শনীতে লোকশিল্পের নানা অনুষঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জয়নুল আবেদিনের আঁকা ৫২টি চিত্রকর্ম। এসব শিল্পকর্মের সঙ্গে তাঁর স্মৃতিবহ বিভিন্ন ধরনের ২০০টি প্রিন্ট রয়েছে। আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।