মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা। ঈদের সকালে নামাজ আদায় করে দিন শুরু হয়। এরপর কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময় আর মিষ্টিমুখ। সকালের প্রথমভাগ এভাবেই কেটে যায়। ঈদের খাবারে তাই বিশেষ আয়োজন বরাবরই থাকে। থাকে মিষ্টি পদের বাহার। বিশেষ করে সকালের আয়োজনে মিষ্টি পদ দিয়েই সাজানো হয় খাওয়ার টেবিল। এই দিন সবাই মিষ্টিমুখেই উত্সব শুরু করেন।
ঈদের মিষ্টি পদের আয়োজনে এই বছর কী বানাচ্ছেন? লাচ্ছা-সেমাই তো বাঙালির প্রধান মিষ্টি পদ। এছাড়াও আয়োজন হয় জর্দা, ফিরনিসহ আরও অনেক বিশেষ পদ। ঈদের সকালে মিষ্টি খাবারের কয়েকটি রেসিপি নিয়ে থাকছে এবারের আয়োজন_
নবাবী লাচ্ছা
নবাবী লাচ্ছা বানাতে যা যা লাগবে
- লাচ্ছা সেমাই-২৫০ গ্রাম
- দুধ-১ কেজি
- মিল্ক পাউডার-২০০ গ্রাম
- চিনি-প্রয়োজন মতো
- কর্নফ্লাওয়ার-তিন চামচ
- কনডেন্সড মিল্ক-৫০ গ্রাম
- ক্রিম-৫০ গ্রাম
নবাবী লাচ্ছা যেভাবে বানাবেন
প্রথমে কড়াইতে ঘি দিয়ে লাচ্ছা সেমাইভাজুন। এবার চিনি গুড়া এবং মিল্ক পাউডার দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন। অন্য কড়াইতে ঘন করে দুধ জ্বাল দিন। ৫ মিনিট পর কনডেন্স মিল্ক দিয়ে তারপর চিনি দিন।
৫ মিনিট নাড়ার পর ক্রিম দিন। এবার কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে ঘন হয়ে ক্রিম ভাব এলে চুলা বন্ধ করে দিন। এবার একটি পাত্রে ভাজা সেমাই দিন। তার উপরে ক্রিম দিন। তার উপর সেমাই দিন। উপরে বাদাম কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
জর্দা সেমাই
জর্দা সেমাই বানাতে যা যা লাগবে
- সেমাই-আধা প্যাকেট
- চিনি-স্বাদমতো
- ঘি-৩/৪ টেবিল চামচ
- পানি-১/১.৫ কাপ
- এলাচ-২/৩ টি
- দারুচিনি-১ টি
- তেজপাতা-১ টি
- বাদাম ও কিসমিস-পরিমাণ মতো
- জর্দা রং-সামান্য
জর্দা সেমাই যেভাবে বানাবেন
প্রথমে সেমাই গুলোকে ভেঙে টুকরো করে নিতে হবে। একটি নন স্টিক প্যানে মাঝারি আঁচে ঘি দিয়ে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও কিশমিশ দিয়ে সামান্য ভেজে নিন। এরপর তাতে সেমাইগুলো দিয়ে ভাজতে হবে। সেমাই বাদামি হয়ে আসলে এক কাপ পানি দিন।
এখন সামান্য পানিতে জর্দা রং গুলিয়ে সেমাইয়ে মিশিয়ে দিন। এরপর চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষন রাখুন। ৩ থেকে ৪ মিনিট পর ঢাকনা খুলে তাতে বাদাম ছড়িয়ে দিন। সেমাইয়ের পানি শুকিয়ে গেলে এবং সেমাই সেদ্ধ হয়ে আসলে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। রান্না শেষে সামান্য ঘি দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
জর্দা
জর্দা বানাতে যা যা লাগবে
- পোলাওয়ের চাল-২ কাপ
- পানি-দেড় কাপ
- চিনি-স্বাদমতো
- ঘি-৪ টেবিল চামচ
- দারুচিনি,লবঙ্গ, এলাচ-কয়েকটি করে
- জর্দার রঙ-সমান্য
- পানি-পরিমাণ মতো
- বাদাম কুচি ও কিশমিশ-কয়েকটা
জর্দা যেভাবে বানাবেন
প্রথমে চাল ধুয়ে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এতে পরিমাণ মতো মত পানি, দুটি তেজপাতা, সামান্য লবণ, ১চা চামচ তেল ও জর্দার রঙ দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করুন। খেয়াল রাখতে হবে যেনো চাল বেশি সেদ্ধ বা শক্ত না হয় । প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে চালটা ট্রেতে বা বড় প্লেটে ছড়িয়ে দিন।
এখন একটি প্যানে ঘি গরম করে মাঝারি আঁচে গরম মশলাগুলো ভাজুন। ফুটে উঠলে কিশমিশ, বাদাম, চিনি দিন। এখন এতে সেদ্ধ চাল দিয়ে নাড়তে থাকুন। তারপর অল্প আঁচে ২০ মিনিট রান্না করুন। চাল একদম সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে বাটিতে নিয়ে কিশমিশ, পেস্তা-বাদাম কুচি ও ছোট লাল-সাদা মিষ্টি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
পেস্তাবাদাম ক্ষীর
পেস্তাবাদাম ক্ষীর বানাতে যা যা লাগবে
- দুধ-১ লিটার
- পোলাউর চাল-৩ টেবিল চামচ (৩ ঘণ্টা ধরে ভিজিয়ে মিহি করে গুড়া)
- চিনি-পরিমাণ মতো
- পেস্তাবাদাম-১/৪ কাপ ( মিহি করে বেটে নিতে হবে)
- কাঠবাদাম-১/৪ কাপ (গরম পানিতে ভিজিয়ে ছোলা ফেলে মিহি করে বাটা)
- মাওয়া ১/৪ কাপ
- এলাচ-৫টি
পেস্তাবাদাম ক্ষীর যেভাবে বানাবেন
প্রথমে একটি পাত্রে দুধ, সবুজ এলাচ ও চালের গুড়া নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন যাতে চাল দলা না পাকায়। চুলায় দিয়ে ৩০ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন। কিছুসময় পরপর নাড়ুন।
এবার দুধ কিছুটা ঘন হলে চিনি, সব বাদাম বাটা দিয়ে ১৫ মিনিট রান্না করুন। এখন মাওয়া গুড়া করে ক্ষীরে দিয়ে আরো ৫ মিনিট রান্না করে বাদামকুঁচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
গুলকাণ্ড লাড্ডু
গুলকাণ্ড লাড্ডু বানাতে যা যা লাগবে
- গোলাপের পাপড়ি-২ কাপ
- চিনি-আধা কাপ
- মধু-১ চা চামচ
- ঘি-আধা কাপ
গুলকাণ্ড লাড্ডু যেভাবে বানাবেন
প্রথমে একটি নন স্টিক প্যানে ঘি গরম করে সব উপকরণ দিয়ে গাঢ় হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। চুলা বন্ধ করে দিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে গোল গোল করে লাড্ডু বানিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
মালাই চপ
মালাই চপ বানাতে যা যা লাগবে
- তরল দুধ-১ লিটার
- এলাচি-২টি
- গুঁড়া দুধ-১ কাপ
- চিনি-পরিমাণ মতো
- বেকিং পাউডার-আধা চা চামচ
- ঘি-এক টেবিল চামচ
- ডিম-১টি
মালাই চপ যেভাবে বানাবেন
প্রথমে সসপ্যানে তরল দুধ, এলাচি ও চিনি দিয়ে সিরা তৈরি করুন। বাটিতে গুঁড়া দুধ, বেকিং পাউডার, ঘি ও ডিম নিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে ডো তৈরি করুন। এবার ডো দিয়ে চপ আকারে বানিয়ে গরম সিরায় দিয়ে রান্না করুন। সব শেষে ঘন দুধ দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে নামিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ স্বাদের মালাই চপ।
ম্যাংগো ক্ষীর
ম্যাংগো ক্ষীর বানাতে যা যা লাগে
- দুধ-দেড় লিটার
- কিশমিশ-তিন চামচ
- ঘি-২ চামচ
- পাকা আম-১/২টি,
- খোয়া ক্ষীর-৩ টেবিল চামচ,
- চিনি-৮ টেবিল চামচ
- পোলাউ চালের গুঁড়া-৪ চামচ
- সুজি-২ টেবিল চামচ
ম্যাংগো ক্ষীর যেভাবে বানাবেন
প্রথমে আম ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। কিশমিশ ঘি দিয়ে ভেজে নিন। কড়াইয়ে দুধ দিয়ে হালকা আঁচে ফুটিয়ে ঘন করুন। অন্যদিকে সুজি শুকনো করে ভাজুন। ঘন দুধের মধ্যে ভাজা সুজি দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। যতক্ষণ না মিহি হয়ে মিশে যাচ্ছে ততক্ষণ নাড়তে থাকুন।
এবার চালের গুঁড়া দুধের মধ্যে দিয়ে একইভাবে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটিতে চিনি ও খোয়া ক্ষীর মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি খুব ঘন হয়ে এলে তাতে আমের পেস্ট দিয়ে নাড়তে থাকুন, যতক্ষণ না পেস্ট দুধের সঙ্গে মিশে যায়।
সবশেষে ঘিয়ে ভাজা কিশমিশ মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। আম দুধের মিশ্রণটি ১০ মিনিট ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। মিশ্রণটি জমে গেলে ফ্রিজ থেকে বের করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
মাহালাবিয়া
মাহালাবিয়া বানাতে যা যা লাগবে
- তরল দুধ-২৫০ মিলিলিটার
- চিনি-আধা কাপ
- লো ফ্যাট হুইপিং ক্রিম-২৫০ গ্রাম
- ভ্যানিলা এসেন্স-৫ গ্রাম
- কর্ন ফ্লাওয়ার-১৫ গ্রাম
- কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম -পরিমাণ মতো
মাহালাবিয়া যেভাবে বানাবেন
একটি ননস্টিক প্যান বা কড়াইয়ে তরল দুধ অল্প আঁচে গরম করুন। এবার এর ভেতরে লো ফ্যাট হুইপিং ক্রিম ও চিনি দিয়ে অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন। দুধ ফুটে এলে এর ভেতরে কর্ন ফ্লাওয়ার গুলে দিয়ে দিন। এবার ভ্যানিলা এসেন্স মেশান। সব উপাদান খুব ভালোভাবে মিশিয়ে অল্প আঁচে বারবার নাড়ুন এবং ঘন মিশ্রণের মতো করে ফেলুন।
ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মাহালাবিয়া। এবার বাটিতে ঢেলে নিয়ে ওপরে কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম ও কাঠবাদাম ছড়িয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। জমে গেলে পরিবেশন করুন সুস্বাদু মাহালাবিয়া।