• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিশুর ভালো অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৯, ২০২২, ১২:৫৬ পিএম
শিশুর ভালো অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে

পরিবারের প্রতিটি শিশু আমাদের অত্যন্ত ভালোবাসার ও স্নেহের। বাসার প্রত্যেক মানুষের নজর থাকে ঘরের খুদে সদস্যটির দিকে। তার বেড়ে ওঠা, ভালো অভ্যাসগুলোর চর্চা সবকিছু নিয়েই চিন্তায় থাকে অভিভাবকেরা। শিশুর মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে উঠুক, সেটা কে না চায়? 

কিন্তু কীভাবে শিশুকে লালন পালন করলে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরি করা যায়, সেটা আমাদের অনেকেরই সঠিকভাবে জানা থাকে না। কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে খুব সহজেই শিশুর মধ্যে আদব-কায়দা, নিয়মশৃঙ্খলা ও ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। 

শিশুর ভালো অভ্যাস তৈরি করবেন যেভাবে—

পরিবারের সদস্যরা শিশুর জন্য অনুকরণীয় মডেল

দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশু অনুকরণ করতে ভালোবাসে। এ বয়সের শিশু বিভিন্ন ধরনের কাল্পনিক বা নাটকীয় খেলা খেলে। যেমন মায়ের মতো রান্না করে, বাবার মতো পেপার পড়ে আবার ড্রাইভার হয়, ভাবি সেজে মেহমানদারি করে কিংবা প্লেন চালায়। এ থেকে প্রমাণ মেলে যে, শিশু তার আশপাশে যা দেখে বা তার সামনে যা করা হয়, তা পর্যবেক্ষণ করে এবং তা হুবহু অনুকরণ করতে পারে। সুতরাং যে আচরণগুলো আমরা শিশুর মধ্যে দেখতে চাই বা শিশুর মধ্যে যেসব অভ্যাসগুলো তৈরি করতে চাই, পরিবারের সদস্যরা সেগুলো চর্চা করলে এ বয়সে শিশু আপনাআপনি তা অনুকরণ করবে এবং সে অভ্যাস ও আচরণগুলো শিশুর মধ্যে গড়ে উঠবে। 

শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া

যখন শিশু এমন কিছু করে, যা আমাদের বড়দের পছন্দ হচ্ছে না, তখন আমরা সাধারণত সেই কাজটি নিয়েই বলতে থাকি। যেমন ‘মেঝেতে খাবার ফেলা অথবা কোনো জিনিস নষ্ট করা। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সুন্দর সমাধান হলো শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। 

শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করা

ভালো অভ্যাস তৈরির জন্য শিশুকে ছোট ছোট ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। কোনো ভালো কাজের পর বুকে জড়িয়ে ধরা, চোখের দিকে তাকিয়ে হাসি, সে যা করছে তা আগ্রহ নিয়ে দেখা, বারবার ‘সাব্বাশ’, ‘চমৎকার’, ‘লক্ষ্মী’ বা এ ধরনের উক্তি করা, হাতে তালি দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে স্বীকৃতি দিলে শিশু ভালো কাজে উৎসাহিত হয় ও তাড়াতাড়ি শেখে। 

কোনো কিছু শেখানোর জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের, শাস্তি নয়

শিশুর শেখার জন্য সময়ের দরকার হয়। তাদের কোনো কিছু শেখাতে মা-বাবার তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। সময় নিলে ফলাফল ভালো পাওয়া যায়। তাড়াহুড়া করলে শিশুর মধ্যে হতাশা চলে আসতে পারে। সে মনে করে যে সে শিখতে পারছে না, এতে তার মন খারাপ হয়। শিশুকে খাওয়া, ঘুমানো, টয়লেটের জন্য জোরাজুরি বা চাপাচাপি করা যাবে না। আমরা বেশির ভাগ মা-বাবাই সন্তানদের শেখানোর ক্ষেত্রে খুব ধৈর্যের পরিচয় দিই না। অল্পতেই আমরা রেগে যাই, চিৎকার করি, ভয় দেখাই, চড়থাপ্পড় মারি। এতে শিশুর শেখাটা আরও পিছিয়ে যায়।

শিশুকে যা শেখানো হবে সেটায় অবিচল থাকা

শিশুকে যখন কোনো নিয়মশৃঙ্খলা শেখানোর চেষ্টা করা হয়, তখন সেই নিয়ম যেন ভঙ্গ না হয়, সে জন্য সচেতন থাকতে হবে। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল—এটা যেন শিশুর সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একই কাজকে কোনো সময় ভালো, কোনো সময় খারাপ বলা যাবে না। যেমন মিথ্যা বলা ঠিক না। ছোট বা বড় যেকোনো কাজ বা যেকোনো সময়েই করা অনুচিত বা খারাপ, সেটা যেন শিশু বুঝতে পারে। তাহলে তার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয় না। শিশুকে যা শেখানো হবে, তা যেন কথার কথা না হয়। শিশুদের জন্য সঠিক আচরণ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা যেন যুদ্ধের মতো মনে হয়। 

শিশুকে মিলেমিশে থাকার শিক্ষা দিতে হবে

শিশুকে পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার, আগত অতিথি আপ্যায়নে সাহায্য করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দরজা খুলে দেওয়া, খাবার এগিয়ে দেওয়া থেকে হতে পারে সূচনা। বয়স্কদের সাহায্য করার শিক্ষা দিতে হবে। কারও হাত থেকে অসাবধানে কোনো কিছু পড়ে গেলে তাকে বস্তুটি তুলে দিয়ে সাহায্য করার প্রয়োজনীয়তা শিশুদের বোঝাতে হবে। 

এভাবেই  আপনার সন্তানদের মানবিকতার, সুশৃঙ্খলার শিক্ষা দিতে পারেন, তবে আপনার বাচ্চা এটি প্রয়োগ করে কি না, তা দৈনন্দিন জীবনে বাবা-মা হিসেবে আপনি কতটা ভালো তার ওপরই নির্ভর করবে। 

Link copied!