নদী কিংবা সাগরের পানিতে মাছ থাকে। আবার কোনো জলাশয়ে মাছের চাষ করা হয়। এসবই সাধারণ চিত্র। কিন্তু আকাশ থেকে যখন মাছের বৃষ্টি নেমে আসে, তখনই সেই চিত্র হয়ে যায় বিস্ময়কর। কোনো রূপকথার গল্প নয়, বাস্তবে ঘটেছে এ ঘটনা!
সম্প্রতি আমেরিকার টেক্সাসের টেক্সারকানা শহরে ঘটেছে এই ঘটনা। শহরের আকাশজুড়ে নেমেছে মাছের বৃষ্টি। সঙ্গে ছিল ছোট ব্যাঙ ও কাঁকড়া। শহরজুড়ে বৃষ্টির সঙ্গে এগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই চোখ ছানাভরা হয়ে যায় স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, ঝড়বৃষ্টির সময় আচমকা বিকট শব্দ শুনতে পায় তারা। এরপরই দেখল বৃষ্টির পানির সঙ্গে আকস্মিকভাবে আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে মাছ, ব্যাঙ আর কাঁকড়া। এক বিস্ময়কর দৃশ্য!
ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালে। টেক্সারকানা শহরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও ঘটনাটি বিস্তারিত জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, কোনো জলাশয়ের উপরিভাগে থাকা ছোট ছোট প্রাণীগুলো ঝড়ের দাপটে যখন ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে যায় তখনই প্রাণী বৃষ্টি হয়। পরে সেই প্রাণীগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।
টেক্সারকানা শহরের এই প্রাণী বৃষ্টির পেছনে কারণ হিসেবে অনেকে ধারণা করছেন, টর্নেডো বা সামুদ্রিক ঝড় আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন অংশের মাছ উড়িয়ে এনেছে, যা এই অঞ্চলে এসে পড়েছে।
প্রাণী বৃষ্টি নিয়ে বিজ্ঞানীরাও বহু যুক্তি দিয়েছেন। তাদের মতে, মাছবৃষ্টি অস্বাভাবিক মনে হলেও এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক ঘটনা। যদিও এটি আচমকাই ঘটে। মাছসমৃদ্ধ কম গভীরতার জলাশয়ের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্র বয়ে গেলে এমন জলঘূর্ণি ঘটে। সে থেকে মাছ বৃষ্টি হতে পারে।
টেক্সাসেই প্রথম নয়, ২০১৭ সালে দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরভিলেও ঘটেছিল এমনই ঘটনা। সেখানে এলিমেন্টারি স্কুলে মাছের বৃষ্টি হয়। স্কুলের মাঠে ও ছাদ ভরে যায় শতাধিক মাছে।
তবে বিস্ময়কর এ ঘটনা প্রথম ঘটে সিঙ্গাপুরে। ১৮৬১ সালে দেশটিতে মাছবৃষ্টি হয় এবং সবাই চমকে যায়। এরপর ১৮৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস সিটিতে হয় ব্যাঙবৃষ্টি।
শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০১২ সালে মাছবৃষ্টি হয়। ওই বছর ফিলিপাইনেও মাছবৃষ্টি দেখা যায়। এর আগে ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়াবাসীও মাছবৃষ্টির বিস্ময়কর দৃশ্য দেখতে পায়। তবে বাংলাদেশের বুকে এখনো এমন বিস্ময়কর দৃশ্যের দেখা মেলেনি। প্রকৃতির বদৌলতে শিলাবৃষ্টির মতো মাছবৃষ্টির বিস্ময়কর দৃশ্যও দেখা যাবে, এই দেশে সেই প্রত্যাশাই বাংলাদেশিদের।
সূত্র: সিএনএন