বাঙালি নারীদের সৌন্দর্য্যের শোভা বাড়ে শাড়িতেই। আলমারি জুড়ে থাকে বাহারি শাড়ি। জামদানি,কাতান, সুতি তাঁত, বাংলার সিল্ক শাড়ির বাহারি মেলা থাকে। ফ্যাশনে নানা স্টাইলের শাড়ি এসেছে। তবে শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও জামদানি কিংবা বালুচরি বাঙালি নারীদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
যুগ যুগ ধরে বালুচরি নারীদের প্রিয় শাড়ি। এই শাড়ির প্রতি নারীদের দুর্বলতা একটু বেশিই হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উত্থান হয় বালুচরির। যা এখনও হারিয়ে যায়নি। নানী-দাদীরা তাদের তরুণ বয়সেও এই শাড়ি যেমন জড়িয়ে রাখতেন। এই যুগে এসেও শাড়ি পাগল নারীরা বালুচরির কদর করেন।
বছরের পর বছর ধরে আলমারিতেও বিশেষ সম্মানে রয়েছে এই শাড়ি। সিল্ক ফেব্রিকে বুনন হয় এই শাড়ির। যার আঁচলে ভেসে উঠে পৌরাণিক নানা কাহিণি। সুতোর টানে নানা গল্প তুলে ধরেন কারিগররা। সিল্কের উপর এমন কারুকার্যের জন্যেই বিখ্যাত হয় বালুচরি শাড়ি।
অনেকের মতে, বালুচরি শাড়ি প্রথম তৈরি হয় জিয়াগঞ্জের বাণিজ্যকেন্দ্রে। সেই সময়ই বালুচরে গড়ে ওঠে বয়নশিল্প। ১৭০৪ সালের কথা। সেই সময় মুর্শিবিদ কুলি খাঁ তার স্ত্রীদের জন্য নতুন শাড়ি তৈরির হুকুম দেন। বালুচরের তাঁত শিল্পীরা নতুন শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শাড়িতে নতুনত্ব আনতেই মুনশিয়ানা দেখান কারিগররা। বানিয়ে ফেলেন বালুচরি। পরে গঙ্গার বন্যায় সেই গ্রাম বিধ্বস্ত হয়ে যায়। শিল্পীরা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তখনই টেরাকোটার মন্দিরসহ অন্যান্য শিল্প উঠে আসে শাড়ির নকশায়।
বালুচরি শাড়িও বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মীনাকারি বালুচরি। যা ১৫ ফুট লম্বা ও ৪২ ইঞ্চি চওড়া হয়। তবে শাড়ির আঁচলের অংশেই থাকে বেশি কারুকাজ। চওড়াও হয় বেশি। প্রায় ৩২ ইঞ্চির আঁচল হতে পারে বালুচরির এই শাড়ির।
আরও রয়েছে চিত্রা দেব বালুচরি। যার নকশায় থাকে চিত্র, কল্কা। অন্য শাড়ি থেকে এই চিত্রই আলাদা করে বালুচরি শাড়িকে। বর্তমান সময়ে বাঁশ, কলা ইত্যাদি গাছ থেকে সুতো নিয়ে জৈব বালুচরি বানানো হয়। তবে ট্র্যাডিশনাল বালুচরি বলতে সিল্কের বালুচরিকেই বোঝানো হয়।
আঁচলের কারুকাজের ভিন্নতাই আসল বালুচরির পরিচয়। বালুচরি তৈরি করতে অন্তত এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময়ও লাগে। তাই এই শাড়ি বেশ দামীও হয়।
শখের বালুচরি শাড়ির ঠিকঠাক যত্ন না নিলে তা অচিরেই নষ্ট হয়ে যায়। শাড়ি ধোয়ার কৌশল, এটি রাখার কায়দা সবকিছুতেই বাড়তি যত্ন প্রয়োজন।
যেভাবে যত্ন হবে বালুচরি শাড়ির
- বালুচরি শাড়ি ভুলেও বাড়িতে ধুতে যাবেন না। ড্রাই ওয়াশ করে নিন।
- শাড়ি পরলেই ধুতে হবে এমনটা নয়। বালুচরি শাড়ি বার বার ধোয়ার কথা ভাববেনও না। এতে রং নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। বরং নিয়মিত না পরে বিশেষ অনুষ্ঠানেই পরুন।
- বালুচরি শাড়ির সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে রাখবেন না। ঘষা লেগে সিল্ক ফেব্রিক খারাপ হয়ে যেতে পারে।
- বালুচরি শাড়ি একটি পাতলা সুতি কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন। অনেকদিন ভালো থাকবে।