দেবীদুর্গার আগমনে শুভ মহালয়া শুরু হয়ে গেছে। ষষ্ঠী থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। পূজার কেনাকাটা শুরু হয়েছে অনেক আগ থেকেই। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা।
পরিবারের স্বজনদের জন্য নতুন পোশাক কেনা শেষ ইতোমধ্যেই। কেউ আবার এখনও নতুন পোশাক কেনায় ব্যস্ত।কারো আবার পোশাক কেনা শেষে চলছে জুতো, কসমেটিকস, জুয়েলারিসহ পূজার অনুষঙ্গের কেনাকাটা।
ষষ্ঠী থেকে দশমী, কেনাকাটার তালিকাটাও তাই বেশ লম্বা। বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে পছন্দের পোশাক কিনছেন। দেশিয় ব্র্যান্ডের দোকানেও পূজার কেনাকাটায় ভিড় রয়েছে। লাল রঙসহ বাহারি রঙের পোশাকে সেজেছে ফ্যাশন হাউজগুলো। রঙচটা পোশাক বেছে নিচ্ছেন তরুণরা, অন্যদিকে গরমে হালকা রঙকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন মধ্য বয়সী ও বয়স্করা।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, চাঁদনী চক, মেট্রো শপিং মল, অরচার্ড পয়েন্ট, ইস্টার্ন প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোড, অরচার্ড প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্স, সীমান্ত স্কয়ার, রাপা প্লাজাসহ বেশ কয়েকটি শপিং মলের বিক্রেতারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোর মধ্যে আড়ং, ইয়োলো, ক্যাটস আই, ইনফিনিটি, লুবানান, স্মার্টেক্স, ফ্রিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দোকানেও রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়।
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, বয়স্ক থেকে তরুণ-তরুণীরা কেনাকাটায় ব্যস্ত। ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে শাড়ির দোকানগুলোতে। বেনারসী, সিল্ক শাড়ির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। গাঢ় রঙের সুতি শাড়িও কিনে নিচ্ছেন অনেকে। মোটা পাড়ের শাড়ির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। বিভিন্ন ফেব্রিকের শাড়ির দাম ভিন্ন। যা ১৫০০ থেকে ১২০০০ মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সাদা-লাল শাড়ির চাহিদা বেশি থাকায় এই ধরণের শাড়ির দাম তুলনামূলক বেশি।
তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সারারা, ফ্লোরটাচ গাউন বা ব্রাইডাল গাউন, ক্যাপ গাউন, নরমাল পার্টি গাউন, লং গাউন বুটিকস, লং কামিজসহ বাহারি রং ও নানা ডিজাইনের চোখধাঁধানো পোশাক।
ব্যস্ততা রয়েছে পাঞ্জাবির দোকানেও। সাদার মধ্যে বিভিন্ন রঙের কারুকাজ করা পাঞ্জাবির মেলা দেখা গেছে দোকানগুলোতে। গরম বলে হালকা রঙকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ছোট-বড় সবার জন্যেই রয়েছে ম্যাচিং পাঞ্জাবি। রকমভেদে পাঞ্জাবির দাম ১০০০ থেকে ৪৫০০ মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। পূজার আমেজের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন ধুতিও।
ছোটদের পোশাকে রয়েছে টি-শার্ট, কুর্তি পায়জামা, থ্রি-কোয়ার্টার, ফোর-কোয়ার্টার প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবি, ফ্রক, টপস, স্কার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। নবজাতক থেকে শুরু করে যেকোনও বয়সী শিশুদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। বাজেট হাজার দুই হলেই ছোটদের জন্য পছন্দের পোশাকটি কিনতে পারবেন।
শেষ মুহূর্তে জুতোর দোকানে বেশি ভিড় থাকে। পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতো কিনে নিচ্ছেন অনেকে। এক্ষেত্রে আরামদায়ক জুতোর চাহিদা বেশি। কারণ পূজার দিনগুলোতে মন্ডপে ঘুরে বেড়াতে আরামদায়ক জুতোই বেশি পরা হয়।
কসমেটিকসের দোকানে ভিড় করেছেন মেয়েরা। আলমারি ভর্তি ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক থাকলেও পূজা উপলক্ষে নতুন করে কিনে নিচ্ছেন অনেকে। শাড়ি, কামিজের সঙ্গে নতুন শেডের লিপস্টিক তো চাই। লুকে নতুনত্ব আনতে হাইলাইট , আইশ্যাডো, ব্লাসারের নতুন শেডও কিনছেন অনেকে।
পূজায় শাড়ি পরবে আর চুড়ি থাকবে না তা কি হয়? হাত ভর্তি চুড়ি আর কপালে টিপ। তবেই তো সাজের পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়া যাবে। তাই চুড়ির দোকানেও নারীদের উপচে পড়া ভিড়। ম্যাচিং চুড়ি মিলিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। কাঁচের চুড়ির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন নারীরা। সেই সঙ্গে সিঁদুর ও লাল টিপের পাতা কিনতেও ভুলছেন না।
পূজার দাওয়াতে যেতে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং জুয়েলারি তো চাই। হালকা-ভারি ডিজাইনের জুয়েলারি কিনতেও ব্যস্ত ক্রেতারা। মেটাল, অক্সি, স্টোন এবং গোল্ডপেলেটের গহণা কিনছেন। অনেকে তো সোনার গহণাও কিনে নিচ্ছেন পূজা উপলক্ষে।
এসবের বাইরে ঘর সাজানোর জন্য নতুন চাদর, পর্দা, কার্পেট, পূজার ঘরের জন্য নতুন সরঞ্জাম কিনতেও ভুলছেন না ক্রেতারা।
শাঁখারীবাজারের দোকানে দোকানে জমজমাট বেচাকেনা চলছে। পূজার বিভিন্ন উপকরণ ও জিনিসপত্র পাইকারি দরে কিনে নিচ্ছেন অনেকে। শাখা, শঙ্খ, প্রতিমা কাপড়, কিত্তনের মালা, কদম মালা, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরদানি, ঠাকুরের মালা, জবের মালা, মুকুট, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ পূজার নানা জিনিসপত্রের কেনাকাটা চলছে। সুলভমূল্যে এগুলো কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
এছাড়াও পূজায় পেট পূজো তো রয়েছেই। নানা পদের খাবার বানাতে সরঞ্জাম কিনতেও দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই দুর্গোৎসব আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী শুরুর মধ্য দিয়ে শুরু হবে। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে।