আসছে ঈদ উল আযহা। মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভে প্রিয় পশুকে ত্যাগের মাধ্যমে এই ঈদ উদযাপন হবে। কোরবানির জন্য় গরু, ছাগল, ভেড়া, উট কিনবেন মুসল্লিরা। পশু কোরবানি দেবেন এবং তা গরীবসহ আত্মীস্বজনদের মধ্যে ভাগ করে দেবেন। সবমিলিয়ে এই ঈদে থাকে প্রচুর ব্যস্ততা।
কোরবানির ঈদের প্রস্তুতিতেও থাকে অনেক ঝামেলা। পশু কোরবানি, মাংস সংরক্ষণ, সঠিক পরিমাণে বন্টন এবং কোরবানির স্থানটিকে পরিস্কার করা-সবমিলিয়ে এই ঈদ কাটে নানা ব্যস্ততায়। পশু কোরবানির জন্য় বিভিন্ন সরঞ্জামাদিও কিনতে হয় আগেই। নতুন করে চাটাই কেনা, দা-ছুড়ি,চাপাতি, খাটিয়া কেনা হয়। আবার পুরোনোগুলোকে নতুন ধারিয়ে নেওয়া হয়। যেসব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গেছে এখন থেকেই। কোরবানির মাংস কাটার দরকারি সরঞ্জামগুলো আপনিও আগেই কিনে রাখুন। জেনে নিন কী কী কিনতে হবে এবং কোথায় পাওয়া যাবে এসব সরঞ্জাম।
ছুরি-চাকু
কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছুরি-চাকু ব্যবহার হয়। চাকু যত ধারালো হবে ততই দ্রুত চামড়া ছাড়ানো যাবে। হাড় থেকে মাংস ছাড়াতে ছুরি বেশ কাজ দেয়। ছোট-বড় যেকোনও আকারের ছুরি ও চাকু পাবেন বাজারে। প্রয়োজনমতো কিনে নিন। পুরোনো ছুরি বা চাকু থাকলেও ধারিয়ে নিতে পারেন। সবচেয়ে বড় ছুরির দাম পড়বে ৩০০০ টাকা। এরপর আছে ২০০০, ১৫০০, ১০০০, ৫০০, ৩০০ টাকা দামের বাহারি ছুরি।
চাপাতি
পশু কোরবানির জন্য ব্যবহার হয় চাপাতি। এছাড়াও গরুর চামড়া ছাড়াতে চাপাতি ব্যবহার করা হয়। বাজারের বিভিন্ন সাইজের চাপাতি পেয়ে যাবেন। রেডিমেড কিনতে পারেন। নয়তো অর্ডার করেও বানিয়ে নিতে পারেন। চাপাতি ওজন মেপে দরদাম করুন। বিক্রেতারা লোহার ওজনের উপর চাপাতির দাম নির্ধারণ করেন। প্রতি কেজির দাম ৬০০-৭০০ টাকা। তিন কেজি ওজনের চাপাতির দাম ১৮০০-২১০০ টাকা। দুকেজি ওজনের চাপাতির দাম ১২০০-১৪০০ টাকা। দেড় কেজি ওজনের চাপাতির দাম ১০০০ টাকা।
বটি
মাংস টুকরো করার জন্য় বটি কিনে নিতে পারেন। এই সময় ধারালো বটি না হলে মাংস কাটা কষ্টকর হয়ে যায়। নতুন বটি কিনুন। পুরোনো বটিও ধার করে নিন। বাজারে সবচেয়ে ভালো বড় বঁটির দাম পড়বে ২০০০ টাকা। এরপর আছে ১৫০০, ১২০০, ১০০০, ৮০০, ৫০০ টাকা দামের বটি।
দা
কোরবানি পশুর মাংস বানানোর কাজে ব্যবহার হয় দা। সাধারণ দা এবং রামদা দুটোই কোরবানির জন্য় জরুরি। রামদা চাপাতির মতো কাজ করে। আর সাধারণ স্টাইলের দা দিয়ে মাংস বানানো যাবে। সাইজে ভিন্ন রকমও রয়েছে। দায়ের হাতল কাঠ বা লোহার তৈরি হয়। পছন্দ ও সুবিধামতো কিনে নিন।
কুড়াল
কোরবানির পশুর মোটা হাড়কে টুকরো করতে কুড়াল ব্যবহার হয়। কুড়ালের পরিবর্তে দা দিয়েও কাজ সেরে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভারী দা ব্যবহার করতে হয়।
কাঠের গুঁড়ি
কোরবানির মাংস কাটার জন্য় জরুরি সরঞ্জাম হলো কাঠের গুঁড়ি। এর উপর মাংস রেখে টুকরো করা হয়। গাছের গোলাকার কাঠ খণ্ডই হচ্ছে কাঠের গুঁড়ি। বাজারে ছোট-মাঝারি-বড় আকারের কাঠের গুঁড়ি পাবেন। দরদাম করে কিনে নিন। মণ হিসেবে এটি বিক্রি হয়। প্রতি মণের দাম পড়বে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
চাটাই বা হোগলা
চাটাই বা হোগলা বিছিয়ে এর উপর কোরবানি পশুর মাংস রাখা হয়। মাটিতে মাংস রাখলে ময়লা ভরে যায়। তাই চাটাই বিছিয়ে এর উপর টুকরো মাংস রাখা হয়। একটি বান্ডেলে ৫০টি হোগলা থাকে। প্রতিটি বান্ডেলের দাম ৩০০০-৫০০০ টাকা। ৬ ফুট প্রস্থ ও ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এক একটি হোগলার দাম পড়বে ৮০-৯০ টাকা। ৫ ফুট প্রস্থ ও ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের হোগলার দাম পড়বে ৬০-৬৫ টাকা। ৪ ফুট প্রস্থ ও ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের হোগলার দাম হবে ৫০-৬০ টাকা। তবে চাহিদা বেশি থাকায় কোথাও কোথাও ৪০০-৫০০ টাকাতেও হোগলা বিক্রি হয়।
পশুর খাবার
পশুর খাবার হিসেবে খড় ব্যবহার হয়। প্রতি মুঠো খড় ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা করে। গমের ভুসি পাওয়া যাবে ৬০ টাকা কেজি, ধানের কুঁড়া ২০ টাকা এবং সরিষার খইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।
মোটা পলিথিন, দাঁড়িপাল্লা ও দড়ি
কোরবানির পশুর মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ, বিলিয়ে দেওয়ার জন্য় মোটা পলিথিন লাগে। তাছাড়া মাংস সমান পরিমাণে ভাগ করে দেওয়ার জন্য়ও দাড়িপাল্লার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া দড়িরও প্রয়োজন হবে পশু কোরবানির সময়।
কোরবানির সরঞ্জাম যেখানে পাবেন
কারওয়ান বাজারের কামার পট্টি, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে কামারপট্টি, কাপ্তানবাজার, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকার চকবাজারে এসব কোরবানির সরঞ্জাম পাওয়া যাবে। কমমূল্যে কিনতে চাইলে কারওয়ান বাজার ও কাপ্তানবাজার ঘুরে দেখতে পারেন। অবশ্যই কেনার আগে দরদাম করে নিন। যত আগে কিনবেন দাম ততই কম পাবেন। ঈদের আগ মুহূর্তে প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়ে যায়।