বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুলের পাক ধরা অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু ইদানীংকালে অল্প বয়সে চুল পেকে যায় অনেকের। এই অকালপক্বতা লজ্জার পাশাপাশি কষ্টেরও কারণ। চল্লিশ পার হওয়ার পরপরই দেখা দিতে পারে সাদাচুল। কারণ এই সময় থেকেই শরীরে মেলানিন উৎপানের হার কমতে থাকে। তবে তরুণদের ক্ষেত্রে মেলানিনের স্বল্পতা থাকে না।
গবেষণা বলছে, মানসিক চাপ, উদ্বেগ অথবা খাদ্যাভ্যাসে সঠিক ভারসাম্যের অভাবে অকালে চুল পেকে যেতে পারে। তবে এই সমস্যা রোধে রয়েছে প্রাকৃতিক পন্থা। প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক অকালপক্বতা দূর করতে আমাদের করণীয় দিকগুলো সম্পর্কে।
কারিপাতা ও নারিকেলের তেল
নারিকেল তেলের সঙ্গে কারিপাতা মিশিয়ে, মাথার ত্বকে মালিশ করুন। এটা চুল কালো রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে এক কাপ নারিকেল তেলে এক মুঠ কারিপাতা ছয় থেকে আট মিনিট ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে এলে নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করুন।
গাজরের রস
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে গাজরের রস বেশ উপকারী। সে ক্ষেত্রে গাজর প্রথমে পানি ও চিনি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। গাজরের যে জুস পাওয়া যাবে, সেটি নিয়মিত পান করুন। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে গাজরের রস পান করলেই আপনার পাকা চুলের সমস্যা সমাধান হবে।
তিলের বীজ এবং বাদাম তেল
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে তিলের বীজ এবং বাদাম তেল কাজে দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চিকিৎসায় সবচাইতে বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব। প্রথম তিল বীজ গুঁড়ো করে নিন। এরপর তা বাদাম তেলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি চুলে ও মাথার চামড়ায় লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঝিঙা ও জলপাইয়ের তেল
অকালপক্ব চুলের সমস্যা এড়াতে ও চুলের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনতে ঝিঙার ব্যবহার বেশ প্রচলিত। ঝিঙা ছোট ছোট টুকরা করে কেটে তা শুকিয়ে নিন। এরপর জলপাইয়ের তেলে তিন চার দিন ভিজিয়ে রাখুন। এই তেল গাঢ় রং না হওয়া পর্যন্ত আবার ফুটান। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে অন্তত দুদিন এই তেল ব্যবহার করুন।
পেঁয়াজ ও লেবুর রসের প্যাক
প্রাচীনকাল থেকেই অকালে সাদা হয়ে যাওয়া চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেঁয়াজ ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।
মেহেদি ও ডিমের প্যাক
মেহেদি রঙ করার পাশাপাশি চুলের সুস্থতা দান করে। এটা চুলের অকালপক্বতা দূর করে। পাশাপাশি চুল রাখে মসৃণ। দুই টেবিল-চামচ মেহেদিপাতার গুঁড়ার সঙ্গে একটি ডিম ও এক টেবিল-চামচ সাধারণ দই নিয়ে তা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত লাগিয়ে ঢেকে রাখুন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার
চুল অকালে পেকে যাওয়া রোধ করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস চমৎকার কাজ করে। ভিটামিন বি ১২’য়ের অভাব অকালে চুল পাকে ও রুক্ষ হয়ে যায়। মুরগির মাংস, ডিম, দুধ, আখরোট, ব্রকলি ও সামদ্রিক মাছ দৈনন্দিন খাবার তালিকায় যোগ করুন। এগুলো শরীরে ভিটামিন বি ১২’য়ের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
সরিষার তেল
কেবল খাবারের স্বাদ বাড়াতে নয় সরিষার তেল চুলের যত্নেও ভালো কাজ করে। এটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সেলেনিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ। যা চুল কালো করতে এবং অকালপক্বতা দূর করতেও সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে দুই টেবিল-চামচ খাঁটি সরিষার তেল গরম করে মাথার ত্বকে ভালো মতো মালিশ করে লাগান। এই তেল অনেকটা ভারী ও চিটচিটে হয়। তাই তেল ব্যবহারের পরে মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক ঘণ্টা বা সারা রাত অপেক্ষা করে চুল পরিষ্কার করে নিন।