বিষাক্ত যেকোনো কিছুই আতঙ্কের। তারমধ্যে বিচ্ছু অনেকের কাছেই ভয়ংকর এক পতঙ্গ। যা হঠাৎ করে দেখা মাত্রই গা শিউরে ওঠে। এদের একটি কামড়ে যে যন্ত্রণা, তা সহ্য করা খুবই কঠিন। এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে এইরকম হাজার হাজার বিষাক্ত বিচ্ছুর সঙ্গে মাত্র ১২ স্কয়ার ফুটের একটি কাচের ঘরে ৩৩ দিন কাটিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেন এক নারী।
থাইল্যান্ডের বাসিন্দা কাঞ্চনা কেতকাউ এমন সাহসী কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে এই রেকর্ডটি করেন কাঞ্চনা। ২০০২ সালে করা নিজের রেকর্ডটিই ভাঙেন তিনি। এরপর নতুন করে এখনো কেউ এই রেকর্ড করতে পারেনি।
সরাইখানা ও রাত যাপনের জন্য জনপ্রিয় থাই শহর পাতায়াতেই তিনি ওই রেকর্ড গড়েছিলেন। সেখানে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির বিচ্ছু ছিল, যার মধ্যে ৪০টি এত বিষাক্ত যে, তাদের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এসব বিচ্ছু পোকা থেকে ইঁদুর পর্যন্ত খেয়ে থাকে। তবে এক বছর কোনো পানি বা খাবার না খেয়েও এরা বাঁচতে পারে।
১২টি চোখ থাকলেও এসব বিচ্ছুর দৃষ্টিশক্তি কম। তাই শিকার ধরার জন্য এরা ঘ্রাণশক্তির ওপর নির্ভর করে। অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এলে তারা কেন উজ্জ্বল সবুজ আলো নির্গত করে, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। শক্ত কিছু খেতে পারে না বলে শিকারকে তরলে পরিণত করতে এরা নিজের বিষ ব্যবহার করে। কাঞ্চনার সঙ্গে ৫ হাজার বিচ্ছু প্রথমে দেওয়া হয়েছিল। এরপর এই ৩৩ দিনে অনেক বিচ্ছু মারা গেছে আবার অনেক বিচ্ছুর জন্মও হয়েছে। এরমধ্যে আরও ১ হাজার বাড়তি বিচ্ছু সেই কাচের ঘরের মধ্যে দেওয়া হয়েছিল।
কাঞ্চনাকে মোট ১৩ বার বিচ্ছু কামড়েছিল। তবে বহু বছর ধরে তিনি শরীরে বিচ্ছুর কামড় সহ্য করার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ফলে বিষ তার ওপর খুব কম প্রভাব ফেলেছিল।
কাঞ্চনার রেকর্ডটির আয়োজন করেছিল রিপলির বিলিভ ইট অর নট! পাতায়ার রয়্যাল গার্ডেন প্লাজা শপিং মলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে অনেক পর্যটক এবং মিডিয়ার মানুষ জড়ো হয়েছিল কাঞ্চনাকে দেখতে।
কাচের ঘরটিতে দেওয়া হয়েছিল একটি টেলিভিশন, একটি বিছানা, বই এবং একটি রেফ্রিজারেটর। সেখানে খাবার শুধু কাঞ্চনার জন্যই নয় বিচ্ছুদের জন্যও দেওয়া হতো। প্রতিদিন বিচ্ছুদের কাঁচা ডিম এবং শূকরের মাংসের মিশ্রণ খেতে দিতো কাঞ্চনা। তাকে প্রতি ৮ ঘণ্টায় ১৫ মিনিটের টয়লেট বিরতির অনুমতি দেওয়া হতো।
এছাড়া কাঞ্চনা বেশিক্ষণ বিচ্ছু মুখের মধ্যে নিয়ে রাখার রেকর্ডও করেছিলেন। তিনি একটি বিষাক্ত বিচ্ছুকে ২ মিনিট ৩ সেকেন্ড তার মুখের ভেতর রেখেছিলেন। কাঞ্চনার আগে সর্বপ্রথম এই রেকর্ড করেন মালয়েশিয়ার নর মালেনা হাসান। তিনি ৩০ দিন থাকতে পেরেছিলেন। তাকে বিচ্ছুরা ৭ বার কামড় দিয়েছিল। শুরুতে বিষের প্রভাব কম হলেও ধীরে ধীরে তার শরীরে ছড়িয়ে পরে তা। ৩০ দিন পর তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে বের করে আনা হয়।