সাধারণত উন্নত লেখাপড়া, জীবনযাপনের জন্য গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসে মানুষ। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আর গ্রামে ফিরে যান না। শহরেরই থেকে যান। পরিবার গঠন করেন। স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে দেখা যায়, বিশাল জনগোষ্ঠির চাপ পড়ছে রাজধানীতে। আর লোকশূন্য হয়ে পড়ছে গ্রামগুলো। এমন চিত্র প্রায় বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার অভিনব উদ্দ্যোগ কম দেশেই দেখা যায়। সেখানে এই পরিস্থিতির সামঞ্জস্যতা আনতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে জাপান।
সম্প্রতি জাপান সরকার ঘোষণা দিয়েছে, টোকিয়ো থেকে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে বিয়ে করলেই নারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকবে। সেই নারীদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হবে। বিয়ের যাবতীয় খরচ সরকার থেকে বহন করা হবে।
জাপান সরকারের বিশ্বাস, এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষা কিংবা কর্মক্ষেত্রের অজুহাতে জাপানি নারীদের টোকিয়োতে থাকার প্রবণতা কমবে। কারণ জাপানের গ্রামাঞ্চলে দিন দিন নারীদের সংখ্যা কমছে। তাই গ্রামাঞ্চলে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্যই এই অভিনব উদ্যোগ।
জাপানের গ্রামাঞ্চলের নারীরা পড়াশোনার জন্য কিংবা চাকরি সূত্রে টোকিয়োতে এসে থাকেন। কাজ শেষেও আর গ্রামে ফিরে যান না। সেই কারণে গ্রামের দিকে পুরুষ ও নারীর সংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এই কারণে জনসংখ্যার হারও কমছে। তাই জাপান সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জাপান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টোকিয়ো থেকে যে নারীরা গ্রামের দিকে গিয়ে সংসার শুরু করবেন আর্থিক পুরস্কারসহ যাতায়াতের খরচ, বিয়ের খরচ পুরোটাই বহন করা হবে।
এদিকে জন্মহার কমে যাওয়ার নেপথ্যে টোকিয়োর কড়া অভিবাসন নীতিও অন্যতম কারণ বলে মনে করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি করা ২০২১ সালের সমীক্ষার ফলাফলে জন্মহারের অনুপাত সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সমীক্ষা অনুসারে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সি ১৭.৩ শতাংশ পুরুষ এবং ১৪.৬ শতাংশ নারীরা বিয়েতে অমত জানান। সেই সুবাদে ২০২২ সালে জাপানে ৮ লক্ষেরও কম শিশু জন্ম নিয়েছে। অন্য দিকে, সেই বছর জাপানে মৃত্যু হয়েছে ১৫ লক্ষ ৮০ হাজার। অর্থাৎ, জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুর হার প্রায় দ্বিগুণ। এই ফলাফল জাপান সরকারকে ভাবনায় ফেলেছে। তাই জনসংখ্যার সামঞ্জস্যতা রক্ষার্থে নতুন এই সিদ্ধান্তে নিয়েছে দেশটির সরকার।
সূত্র: আনন্দবাজার