জীবনসঙ্গী সঙ্গে ষোলআনা মিল হবে না, তা কিন্তু নয়। একেক মানুষ একেক ধরণের হয়। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মানসিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও আলাদা হয়। আবার কেউ কেউ টক্সিক হন। অর্থাৎ সঙ্গীর অনুভূতি, মতামতের কদর না করা, সঙ্গীকে অবহেলা করা, সঙ্গীকে সম্মান না করাসহ সম্পর্কের মূল বিষয়গুলোই হয়তো টক্সিক সঙ্গীর মধ্যে অনুস্থপিত থাকে। এমন সঙ্গীকে নিয়েও মানিয়ে চলতে হয়। কারণ একসঙ্গে থাকতে হবে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। যা আপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু জানেন কি, সেই টক্সিক সঙ্গীর জন্য আপনিই হয়তো পারফেক্ট। কিংবা আপনার মধ্যে থাকা কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই সে আপনার সঙ্গে থেকে আনন্দ পাচ্ছেন। আপনি তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন। আপনার সঙ্গে টক্সিক আচরণ করেও তার মধ্যে কোনো অনুভূতি হয় না। বরং দিনের পর দিন একই আচরণ করে যাচ্ছেন। যেসব আচরণ শারীরিক, মানসিক বা আবেগপ্রবণভাবে আপনার ক্ষতি করছে। তাই টক্সিক সঙ্গীকে শুধরে নেওয়ার আগে নিজের বৈশিষ্ট্যগুলো জানুন, যার কারণে আপনি তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন।
সাধারণত টক্সিক সঙ্গী আপনাকে মূল্যায়ন করবে না, সবসময় সমালোচনা করবে, ভুল বের করবে, কর্তৃত্ব দেখাবে, অপমান করবে, মতামতের মূল্য দিবে না, সাপোর্ট সিস্টেম থেকে আপনাকে দূরে রাখবে, আপনাকে দোষ দেবে, সৎ থাকবে না, আপনার চাহিদা- ইচ্ছার মূল্যায়ন করবে না, মানসিক চাপে রাখবে। এমন সঙ্গীর কাছে আপনি কেন প্রিয় জানেন? কারণ—
আপনি নিজেকেই মূল্যায়ন করেন না
যেকোনো পরিস্থিতিতে কিংবা সম্পর্কে নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। যদি নিজেকে নিজেই মূল্যায়ন না করেন, ছোট করে রাখেন-তবে আপনার সঙ্গীও তাই করবে। তাই নিজে আত্মবিশ্বাসী না হলে, মূল্যায়ন করেন না, নিজেকে ছোট ভাবলে, হীনম্মন্যতায় ভুগলে-অন্যরাও আপনার সঙ্গে তাই করবে। আপনার টক্সিক সঙ্গীর কাছে এসব বৈশিষ্ট্যের জন্যই আপনি প্রিয় হয়ে উঠছেন।
আবেগ, অনুভূতিতে নিয়ন্ত্রণ না থাকা
নিজের আবেগ- অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলেই অন্যরা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। নেতিবাচক মানুষরা আপনাকে সহজেই টার্গেট করতে পারেন। কারণ আপনি অনেক বেশি আবেগতাড়িত। তাই নিজের অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। টক্সিক সঙ্গীও আপনাকে অবহেলা করতে পারবেন না।
অতীতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা
অনেকেই অতীতের নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে নিজের মধ্যে লালন করে রাখেন। ছোটবেলার কোনো অভিজ্ঞতা, পুরোনো সম্পর্কের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। বলা যায়, রীতিমতো ট্রমার মধ্যেই থাকেন। যা নিজের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে। অতীতের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে নতুন করে শুরু করার মানসিকতা না থাকলে আবারও বিপদে পড়বেন। কারণ ভীত থাকা মানুষের বেশি পছন্দ করেন টক্সিক সঙ্গীরা। এতে আপনার উপর কতৃর্ত্ব স্থাপন সহজ হয়।
সম্পর্কের পরিষ্কার না থাকা
যে সম্পর্ক আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, আপনার মানসিক অশান্তির কারণ হচ্ছে-তা থেকে বেরিয়ে আসুন। কার সঙ্গে মিশবেন, কার থেকে দূরে থাকবেন, কোন সম্পর্ক এগিয়ে নেবেন আর কোনটাতে ইতি টানবেন-এসব বিষয়ে পরিস্কার ধারণা রাখতে হবে। নয়তো টক্সিক সঙ্গী আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং আপনার জীবনের জটিলতা বাড়াবে।
কেয়ারগিভার ফ্যান্টাসি
টক্সিক সঙ্গীর নেতিবাচক আচরণকে এড়িয়ে যাচ্ছেন? তাকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নেবেন, তার আচরণগুলো শুধরে নেবেন। কেয়ারগিভার ফ্যান্টাসিতে থেকে টক্সিক সঙ্গীকে বারবার ক্ষমা করে দিচ্ছেন। আপনার এমন উদারতাই টক্সিক সঙ্গীর কাছে প্রিয়। এই চক্রে আটকে আপনি আপনার জীবনটাকে নষ্ট করছেন। কিন্তু টক্সিক সঙ্গী আদৌ বদলাবে কিনা তা অনিশ্চিত। তাই সময় থাকতেই সব ঠিক করুন।
অক্ষমতা ও অত্যধিক নির্ভরশীলতা
আপনার অক্ষমতা আর সঙ্গীর ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতাও টক্সিক সঙ্গীর কাছে প্রিয়। কারণ আবেগতাড়িত হয়ে কিংবা অর্থনৈতিকভাবে হলেও আপনি অন্যের ওপর নির্ভরশীল। যার কারণে টক্সিক সঙ্গী আপনার সঙ্গে যেকোনো ধরণের আচরণ করতে পারেন। আর নেতিবাচক আচরণই বেশি করছেন। তাই আপনার যেকোনো অক্ষমতা তার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া