দুর্গা পূজার অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পূজা। সাধারণত অষ্টমী বা নবমী তিথিতে বহু সাড়ম্বরে কুমারী পূজা হয়ে থাকে। এই পূজায় ১ থেকে ১৬ বছর কুমারীদের দেবীরূপে পূজা করা হয়। তবে সাধারণত ৫-৭ বছর বয়সী কুমারীদের দেবী রূপে মনোনিত করে পূজা করা হয়। আর এজন্যই এই পূজা মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করে। সবার মনেই ঘুরপাক খায়, কেন করা হয় কুমারী পূজা?
কুমারী পূজা কেন হয়
পুরাণ মতে মুনি ঋষিরা প্রকৃতিকে নারীর সমান মনে করতেন। তাই কুমারী পুজোর মাধ্যমে প্রকৃতিকে পূজা করতেন তারা। কারণ, তারা মনে করতেন মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বর।
বিশেষ করে যাদের মন সৎ, যারা নিষ্পাপ তাদের মধ্যেই ভগবানের প্রকট সবথেকে বেশি। এই গুণ কেবলমাত্র কুমারীদের মধ্যে থাকতে পারে, এই ভেবে তাদের দেবীরূপে পূজা করা হয়।
বৃহদ্ধর্মপুরাণে রামের জন্য ব্রহ্মার দুর্গাপূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। তখন শরৎকাল, দক্ষিণায়ণ। দেবতাদের নিদ্রার সময়। তাই, ব্রহ্মা স্তব করে দেবীকে জাগরিত করলেন। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্ববৃক্ষমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি তপ্তকাঞ্চন বর্ণা বালিকা। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। তিনি বোধন স্তবে তাঁকে জাগরিত করলেন। ব্রহ্মার স্তবে জাগরিতা দেবী বালিকামূর্তি ত্যাগ করে চণ্ডিকামূর্তি ধারণ করলেন। তন্ত্রসার মতে, ‘১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত। তাদের অবশ্যই ঋতুমতী হওয়া চলবে না।
আবার, সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী, কোলাসুর কে বধ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কুমারী পূজার। গল্পে বর্ণিত রয়েছে যে, কোলাসুর যখন স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করেন, তখন কোলাসুর এর থেকে মুক্তি পেতে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন।
দেবতাগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারীরূপে কোলাসুর কে বধ করেন। এর থেকে মর্ত্যে কুমারীপূজার প্রচলন শুরু হয়। তবে যেভাবেই শুরু হোক নাই কেন নতুন বস্ত্র, ফুলের মালা, মুকুট, পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুরের টিপ ও তিলক পরিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় কুমারীদের। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। যেমন- ১ বছর বয়সি কন্যাকে সন্ধ্যা, ২ বছর বয়সি কন্যাকে সরস্বতী, ৩ বছর বয়সি কন্যাকে কালিকা, ৫ বছর বয়সি কন্যাকে সুভগা, ৬ বছর বয়সি কন্যাকে উমা, ৭ বছর বয়সি কন্যাকে মালিনী, ৮ বছর বয়সি কন্যাকে কুব্জিকা, ৯ বছর বয়সি কন্যাকে অপরাজিতা, ১০ বছর বয়সি কন্যাকে কালসন্ধর্ভা, ১১ বছর বয়সি কন্যাকে রুদ্রাণী, ১২ বছর বয়সি কন্যাকে ভৈরবী, ১৩ বছর বয়সি কন্যাকে মহালক্ষ্মী, ১৪ বছর বয়সি কন্যাকে পীঠনায়িকা, ১৫ বছর বয়সি কন্যাকে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ১৬ বছর বয়সি কন্যাকে অম্বিকা বলা হয়।