• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

মায়েরা কেন হিংস্র হয়ে উঠেন! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
মায়েরা কেন হিংস্র হয়ে উঠেন! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ছবি: সংগৃহীত

মা মানেই আদর্শ মমতাময়ী রূপ। যিনি নিঃস্বার্থভাবে সন্তান ও পরিবারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। কিন্তু কখনো কখনো সেই মমতাময়ী মা-ই হয়ে উঠছেন অপ্রত্যাশিতভাবে রুক্ষ, রাগী, এমনকি হিংস্র। সন্তান, স্বামী কিংবা আশপাশের মানুষদের প্রতি আচরণ হয়ে যাচ্ছে ধৈর্যহীন ও আক্রমণাত্মক। কিন্তু, কেন এমন হয়? কীভাবে একজন মা এমন হিংস্র আচরণে পৌঁছে যান?

এই প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানীরা, সমাজবিজ্ঞানীরা ও পারিবারিক পরামর্শদাতারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে_

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দায়িত্বের ভার

বিশেষজ্ঞরা জানান, গৃহিণী বা কর্মজীবী, প্রতিটি মায়ের জীবনেই থাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। ঘরের কাজ, সন্তান পালনের দায়িত্ব, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানসিক চাহিদা পূরণ সব কিছু সামাল দিয়ে মায়েরা প্রায়শই নিজেদের অবহেলিত মনে করেন। এই চাপ দীর্ঘ সময় ধরে জমতে থাকে। যা এক সময় বিস্ফোরণের মতো হিংস্র রূপ নিতে পারে। বিশেষত যারা পরিবারে সহযোগিতা পান না বা স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হন, তাদের মধ্যে এই মানসিক চাপ আরও তীব্রভাবে কাজ করে।

সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা

মা তার সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু অনেক সময় এই নিরাপত্তা-চিন্তা অতিরিক্ত মাত্রায় চলে যায়। বিশেষ করে যদি সন্তান কিছু ভুল করে বা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে মা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন, তখন অনেক মায়ের আচরণ হয়ে পড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে কড়া ও রাগান্বিত। এ ধরনের আচরণ প্রায়ই হিংস্রতার রূপ নেয়। চিৎকার, ধমক এমনকি শারীরিক শাস্তির মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়।

আত্মপরিচয়ের সংকট ও অবমূল্যায়ন

অনেক মা সন্তান জন্মের পর নিজের পরিচয়, আগ্রহ ও স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। তারা কেবল একজন ‘মা’ হয়ে ওঠেন। একজন স্ত্রী, এক গৃহকর্ত্রী নিজস্ব সত্তাকে হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে মনের ভেতরে এক ধরনের হতাশা জন্ম নেয়। কেউ যদি তাকে বোঝার চেষ্টা না করে বা তার অনুভূতির মূল্য না দেয়, তখন সেই দুঃখ, ক্ষোভ এবং অপূর্ণতা হিংস্র রূপে প্রকাশ পেতে পারে।

সাহায্যের অভাব ও একাকিত্ব

বিশেষজ্ঞরা জানান, অনেক মা একা হাতে সংসার ও সন্তান সামলান। এই একাকিত্ব, কারো সাহায্য না পাওয়া এবং কথা বলার মতো কেউ না থাকার অভিজ্ঞতা একজন মাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। কারও সঙ্গে নিজের অনুভূতি শেয়ার করতে না পারার হতাশা কখনো কখনো হিংস্র আচরণে রূপ নেয়। বিশেষ করে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কিংবা হরমোনাল পরিবর্তনের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।

শৈশবের অভিজ্ঞতা ও সামাজিক শিক্ষা

যেসব নারী নিজের শৈশবে সহিংসতা, অবহেলা বা অত্যধিক শাসনের মধ্যে বড় হয়েছেন, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে সেই আচরণ পুনরাবৃত্তি হওয়ার প্রবণতা থাকে। এটি অনেকটা “ট্রমা সাইকেল” এর মতো কাজ করে। তারা নিজের অজান্তেই সেই রুক্ষ আচরণ তাদের সন্তানদের উপর প্রয়োগ করেন। যা সামাজিকভাবে হিংস্রতার রূপ নেয়।

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

মায়েদের হিংস্র আচরণের পেছনে থাকতে পারে অজানা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। যেমন, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা পোস্টপার্টাম সাইকোসিস। অনেক সময় এগুলোর লক্ষণ স্বাভাবিক রাগ বা হতাশা হিসেবে ধরা পড়ে না। তাই এর চিকিৎসাও হয় না। তবে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলিত থাকলে আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, মায়েদের মানসিক চাপ হালকা করতে পরিবারকে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে। শুধু সন্তান নয়, মায়েরও ভালোবাসা, যত্ন এবং  প্রশংসা প্রয়োজন। স্বামী, পরিবার ও সমাজের উচিত প্রতিটি মাকে মানুষ হিসেবে দেখা। মনে রাখতে হবে, মায়েরা কেবল ত্যাগের প্রতীক নয়। আবার তারা ‘ইচ্ছা করে’ হিংস্র হয়েও ওঠেন না । হয়তো তাদের হিংস্রতা দীর্ঘদিনের চাপে জন্ম নেওয়া এক বিক্ষুব্ধ আত্মার প্রকাশ। তাই মায়েদের বোঝা, পাশে থাকা এবং ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখা উচিত।  সুস্থ, মানসিকভাবে প্রশান্ত মা-ই পারে সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে।

Link copied!