সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফোনে কথা বলতে আগে দূর দূরান্তে যেতে হতো। এখন সবার হাতেই মোবাইল ফোন। যা দিয়ে মুহূর্তেই বিশ্বের এই প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। এখন চাইলেই প্রিয়জন, পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের খোঁজ নেওয়া যায়। শুধু কথা বলা হয়, ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেখাও যায়। প্রযুক্তিগত বিকাশের কারণেই জীবনযাত্রা এতোটা সহজ হয়েছে। সূচনা হয় ডিজিটাল যুগের। অথচ এই ডিজিটাল যুগে বড় হওয়া জেন জি প্রজন্মই ফোনে কথা বলতে নারাজ। এই প্রজন্ম ফোনে কথা বলার চেয়ে অন্যান্য কাজেই ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই তথ্য জানা যায়। যেখানে উঠে আসে, জেন জি প্রজন্মে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো ফোন ধরতেই চান না। তারা ফোন ধরে কথা বলার চেয়ে, ফোনে ম্যাসেজ আদান প্রদান করাকেই বেশি পছন্দ করে। শুধু তাই নয়, জেন জি প্রজন্মের মতো মিলেনিয়ালরাও একই ইচ্ছে পোষণ করে বলে জানা যায়।
প্রাযুক্তিক বিকাশের নিরিখে সর্বশেষ প্রজন্ম জেন জি। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যেই তাদের জন্ম। তারা বিগত প্রজন্মের মানুষ থেকে অনেকটাই এগিয়ে। চৌকস, মেধাবী ও উৎপাদনশীল চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষগুলোকে মিলেনিয়ালস প্রজন্ম ধরা হয়। দুই প্রজন্মের মধ্যে চিন্তাভাবনা বা আচরণগত পার্থক্য রয়েছে। তবে ফোনের বিষয়ে দুই প্রজন্মের চিন্তাভাবনা প্রায় একই। এই দুই প্রজন্মের মানুষই ফোন ধরতে এবং ফোনে কথা বলতে অপছন্দ করেন।
সম্প্রতিো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আসউইচ ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী দুই হাজারের বেশি ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর জরিপ চালায়। জরিপে উঠে আসে, বয়স ৩৫ এর নীচে এমন মানুষগুলো ফোনে কথা বলতে কিংবা ফোনকল ধরতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ৩৫ বছর বয়সীরা কিন্তু ঠিকই স্বাভাবিকভাবে ফোনে কথা বলে থাকেন।
গবেষকেরা জানান, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের এক–চতুর্থাংশ কখনোই ফোনকল গ্রহণ করেন না। অর্থাৎ ফোনে কথা বলেন না। তারা লিখিত বার্তার মাধ্যমে উত্তর বা প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশি পছন্দ করেন। অধিকাংশ তরুণ অপ্রত্যাশিত ফোনকলকে খারাপ খবর বলে মনে করেন।
জরিপে দেখা গেছে, ৩৭ শতাংশ তরুণ সরাসরি ফোনকলের পরিবর্তে যোগাযোগের জন্য ভয়েস মেসেজ আদান-প্রদান বেশি পছন্দ করেন। অন্যদিকে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মাত্র ১ শতাংশই ভয়েস ম্যাসেজ পছন্দ করেন।
ফোনে কথা বলা কেন পছন্দ করেন না জেন জি’রা
যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞানী এলেনা টুরোনি জানান, অল্প বয়সীদের ফোনে দীর্ঘসময় কথা বলার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। এটি অদ্ভুত বিষয়। আরও অবাক করছে, তরুণরা ফোন বাজলে ভীত হয়ে পড়েন। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফোন সাইলেন্ট বা নিশব্দ রাখেন। কম বয়সীদের মোবাইল ফোনে জোরালো কোনো রিংটোনও থাকে না।
মনোবিজ্ঞানী এলোইস স্কিনার জানান, ‘তরুণরা ফোনকলকে খারাপ কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন। তাই তারা ফোন কলে কথা বলতে ভয় পান। তাছাড়া এখন সবাই অনেক ব্যস্ত। কাজের সময়সূচীতেও পরিবর্তন এসেছে। তাই বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা বলা বা কল করার জন্য সময় কম রয়েছে এই প্রজন্মের।’
গবেষকরা জানান, ভয়েস ম্যাসেজ ফোনে কথা বলার মতোই, তবে আরও ভালো বলে মনে করেন জেন জি ও মিলেনিয়ালসরা। কারণ এই উপায়ে কোনো চাপ ছাড়াই বন্ধুদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। আবার অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোনগুলো অধিকাংশই স্ক্যাম বা বাণিজ্যিক হয়। যা ফোন সাইলেন্ট রেখে উপেক্ষা করা সহজ হয় বলেও ধারণা জেন জি’দের।
তবে কি, এই দুই প্রজন্মের মানুষগুলো বন্ধু আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না? জেন জি ও মিলেনিয়ালসরা বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সবসময়ই। তবে তা ফোন কলে কথা বলে নয়, বিভিন্ন গ্রুপ চ্যাটে সক্রিয় থেকে। কারণ খুদে বার্তায় ভেবেচিন্তে উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকে।
অন্যদিকে এই দুই প্রজন্মের মানুষগুলো অবসরের বেশিরভাগ সময় মোবাইল ফোনেই কাটাচ্ছেন। মোবাইলফোনের মাধ্যমে সৃজনশীল কাজে অংশও নিচ্ছেন অনেকে। ভিডিও দেখা, পছন্দের বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন। অথচ মোবাইল ফোনের কল ধরতেই তাদের আপত্তি থাকে। আর ফোনে দীর্ঘসময় কথা বলার অভ্যাস তাদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী হেনরি নেলসন কেস জানান, ফোনে সরাসরি কথা বলা উদ্বেগ সৃষ্টি করে। যা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিও তৈরি করে। তাই ফোনকল এড়িয়ে চলার অভ্যাস গড়ে উঠেছে এই দুই প্রজন্মের।