• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পর্কে এত জটিলতা বাড়ছে কেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৪, ১১:৩৪ পিএম
সম্পর্কে এত জটিলতা বাড়ছে কেন
ছবি: সংগৃহীত

এক সময় ছিল চিঠির যুগের প্রেম। প্রেমিক প্রেমিকার যোগাযোগ হতো চিঠির মাধ্যমে। ভালোলাগা আর ভালোবাসার কথা জানাতে পার হতো কয়েক বছরও। প্রিয়জনকে একঝলক দেখতে কত চড়াই উত্ড়াই না পেরুতে হত। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগ। প্রেমও হয়ে গেছে ডিজিটাল। প্রেম নিবেদন করতেও সময় লাগছে না। আবার প্রেমের বিচ্ছেদও হচ্ছে দ্রুত। ইন্টারনেটের বদৌলতে প্রিয়জনের সঙ্গে সারাক্ষণই কথা বলা যাচ্ছে। দেখাও করা যাচ্ছে ভিডিও কলে। সবই হয়ে যাচ্ছে সহজেই। সেই সঙ্গে বাড়ছে জটিলতাও। সম্পর্কে যোগাযোগ যত সহজ হয়েছে জটিলতাও ততই বেশি বেড়েছে। বলা যায়, প্রেমের বড় আকাল পড়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার ম্যাচমেকার ও সার্টিফায়েড লাইফ কোচ পল ক্যারিক ব্রানসন তার ‘ফাইন্ড লাভ: হাউ টু নেভিগেট মডার্ন লাভ অ্যান্ড ডিসকভার দ্য রাইট পার্টনার ফর ইউ’ বইয়ে বর্তমান সময়ের  প্রেমের অবস্থা নিয়ে লিখেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, এই যুগে প্রেমের আকাল চলছে!

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ হয় বইটি। প্রেমের আকাল নিয়ে ব্রানসনের সঙ্গে পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ডেভিড রবসন নানা বিষয়ে আলোচনাও করেন। আলোচনায় ডেভিড রবসন জানতে চান,  সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন মানুষের সম্পর্কে কেমন প্রভাব ফেলছে? প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা যৌনসঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে- এতে মানুষের মনোভাব বদলেছে কি না তাও জানতে চান।

উত্তরে ব্রানসন জানান, সঠিক সঙ্গী খোঁজা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে প্রেম-ভালোবাসা ধরে কঠিন। এটি মানব ইতিহাসের যেকোনো কাজের চেয়েও কঠিন। এখন গ্রহণযোগ্য সম্পর্কে বৈচিত্র্য এসেছে। কেউ একগামী বা বহুবিবাহ সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পারেন। কেউ আবার সঙ্গীর সঙ্গে বিয়ে ছাড়াই থাকছেন। আবার আলাদাও থাকছেন। সঙ্গীর কাছে আমাদের প্রত্যাশাও আগের চেয়ে বেশি বেড়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এলি ফিঙ্কেলও প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। এক গবেষণায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা “আত্ম-বিবর্তনের” এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে আমরা সঙ্গীর কাছে সম্পর্কের বাইরে সবকিছু খুঁজছি। আমরা চাই, বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে তারা আমাদের সমান হোক। আমরা চাই, নিজেদের চালু করা প্রতিষ্ঠানে তারা সিইও হোক, আমরা চাই তারা একজন দুর্দান্ত অভিভাবক হোক এবং আমরা চাই তারা একজন অসাধারণ যৌনসঙ্গী হোক।’


বর্তমান সময়ের সম্পর্ক নিয়ে পল ব্রানসন আরও বলেছেন, ‘প্রযুক্তির কারণে অনেকেই নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই সঙ্গী নির্বাচনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি। আমরা নিজেদের বোকা বানিয়ে ফেলছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কাছে একজনের অসংখ্য বিকল্প আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি যদি ১০০টি ডেটিং অ্যাপ ডাউনলোড করেন, তাহলে এক সপ্তাহে কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার কতগুলো তারিখ পাওয়া সম্ভব? বিষয়টি অনেক সীমিত। তাই আমরা যতটা বিশ্বাস করি, ততটা বিকল্প আমাদের হাতে নেই।’

ব্রানসন তার বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘মানুষ তাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রকৃতপক্ষে কম খুশি। ২০ শতাংশ মানুষ, যারা সঙ্গীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলেন, তারা আরও বেশি সন্তুষ্ট হচ্ছেন। সম্পর্কের ভেতর অহেতুক সন্দেহ ঢুকে যাচ্ছে। কিছু মানুষ আবার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য অসন্তুষ্টি খুঁজে বের করেন। সম্পর্কের ভেতরের শূন্যতা খুঁজে বের করেন। তাই সম্পর্কে সন্তুষ্ট রয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা সত্যিই নগণ্য।”

সম্পর্কের প্রকারভেদ করে ব্রানসন আরও বলেন, “শৈশবে যত্ন পেলে, সান্নিধ্য পেলে শিশু নিরাপদ বোধ করে। এটি নিরাপদ সম্পর্ক। আবার লালন–পালনকারী যদি ঘর ছেড়ে চলে যান এবং পরে ফিরে আসেন, তাদের প্রতি মানসিকতা আগের অবস্থানে আসা কঠিন। শিশুরা উদ্বিগ্ন থাকে যে লালন–পালনকারী আবার চলে যেতে পারেন। আরেকটি হলো, পরিহারকারী সম্পর্ক। লালন–পালনকারী যদি ঘর ছেড়ে যান এবং  আবার ফিরে আসেন, এতে শিশুটি আর নিরাপদ মনে করে না। শিশুটি  নিজের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। আর চতুর্থ সম্পর্ক হলো ‘বিশৃঙ্খল’। এটি পরিহারকারী ও উদ্বিগ্নতার সংমিশ্রণ।”

তাই শৈশবের এমন সম্পর্ক একইভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দৃশ্যমান হয়। যখন কারও উদ্বিগ্ন সম্পর্ক বা পরিহারকারী সম্পর্ক থাকে, তারা সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা হয় না। তাই নিরাপদ সম্পর্কই স্বাস্থ্যকর হয়।

সম্পর্কের জটিলতার জন্য অনেকাংশে দায়ী অনলাইন ডেটিংয়ের বেশকিছু ত্রুটি। কেউ দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য সঙ্গী খুঁজছেন। আবার কেউ স্বল্পমেয়াদি সঙ্গী খুঁজছেন। ওই দুজন অ্যাপের মাধ্যমে যুক্ত হলো কিন্তু তা টেকসই হবে না। কারণ তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন থাকে।

দেশ বা শহরভেদে মানুষও ভিন্ন হয়। আবার প্রজন্মগত পার্থক্যও থাকে। সঙ্গীর মধ্যে বয়সের বা প্রজন্মের পার্থক্য থাকার কারণেও সম্পর্কগুলো জটিল হয়ে উঠেছে। আগের সময়ে এই জটিলতা খুব একটা চোখে ধরা না গেলেও এখন সঙ্গীর সঙ্গে অমিলের প্রবণতা বেড়ে গেছে। তাই সম্পর্কের জটিলতা দিন দিন বাড়ছেই। সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণের স্থায়ীত্ব কমছে। আবার সঙ্গী বিকল্প উপায়গুলো সম্পর্ককে আরও জটিল করছে। তাই প্রযুক্ত ও প্রজন্মের বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে  স্বাস্থ্যকর সম্পর্কও।

 

সূত্র: বিবিসি

Link copied!