ঈদ মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা সারাবিশ্বে অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। ঈদ মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। ঈদের অন্যতম ঐতিহ্য হলো একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করা। এটি শুধু একটি শারীরিক অভিব্যক্তি নয়; বরং এর মধ্যে রয়েছে গভীর ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য। ঈদে কোলাকুলি করার পেছনে রয়েছে ইসলামি আদর্শ, ভ্রাতৃত্ববোধ, সামাজিক সংহতি এবং মানবিক সম্পর্ক দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পটভূমি
ইসলামে কোলাকুলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার সাহাবীদের সঙ্গে পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, যখন দুই মুসলমান পরস্পর কোলাকুলি করেন, তখন তাদের গুনাহ ঝরে পড়ে (তিরমিজি, হাদিস ২৭৩২)।
ঈদ মূলত আনন্দ ও শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। মাসব্যাপী রমজানের রোজার পর ঈদুল ফিতর উদযাপনের মাধ্যমে মুসলমানরা পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানায়। এই শুভেচ্ছা বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম হলো কোলাকুলি, যা আন্তরিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক
কোলাকুলি করার মাধ্যমে মানুষ একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের প্রকাশ ঘটায়। ঈদের দিন সবাই নতুন পোশাক পরে, একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করেশ। এতে পারস্পরিক দূরত্ব ও মনোমালিন্য দূর হয় এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
একটি সমাজ তখনই উন্নত হতে পারে, যখন সমাজের মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সদয় হয়। ঈদের কোলাকুলি সেই সহানুভূতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। ঈদের সময় ধনী-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তারপর কোলাকুলি করে। এতে সামাজিক বৈষম্য দূর হয় এবং সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
সামাজিক সংহতির প্রতীক
ঈদের কোলাকুলি সমাজে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। এটি আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আজকের সমাজে যেখানে অনেকেই ব্যস্ততার কারণে একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে না, সেখানে ঈদের কোলাকুলি একটি মিলনের সুযোগ তৈরি করে।
ঈদের কোলাকুলি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি ইসলামের সৌন্দর্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। তাই ঈদের এই সুন্দর ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে মানুষ পালন করে আসছে।