• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে ‘রক্ষা’ করা কেন কঠিন!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে ‘রক্ষা’ করা কেন কঠিন!
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন- এটি বহুল প্রচলিত এক বাক্য। এই একটি বাক্যে অনেক বড় অর্থের প্রকাশ পায়। ব্যক্তিগত, জাতিগত, সমষ্ঠিগতভাবে স্বাধীনতা সবারই কাম্য। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ, জাতি, গোষ্ঠী স্বাধীনতার পক্ষে লড়েছে বহুকাল। স্বাধীনতা অর্জনও করেছে অনেকে। কিন্তু স্বাধীনতা ধরে রাখতে পেরেছে কজনে!

স্বাধীনতা অর্জনে যে লড়াই হয়, তা থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করার লড়াই আরও কঠিন। পরাধীন জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর তা রক্ষা করতে আরও যুদ্ধের প্রয়োজন হয়। এই যুদ্ধ প্রতিপক্ষের সঙ্গে নয়। স্বাধীনতা রক্ষা করার যুদ্ধ হয় নিজেদের সঙ্গে। পরিবার, সমাজ, দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সামলে নিতেই চলে এই যুদ্ধ। জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা, জাতিকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা, ভবিষ্যত প্রজন্মকে আলোর পথ দেখানো-এসবই হচ্ছে স্বাধীনতা রক্ষা করার চাবিকাঠি। যে জাতি এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারে সেই দেশেই বহাল থাকে স্বাধীনতার সূর্য।

স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ স্বাধীনতা পেয়ে হঠাত্ করেই বিগড়ে যেতে পারে। ভালো মন্দের ভেদাভেদ ভুলে সমাজে তাণ্ডব চালাতে পারে গুটি কয়েক মানুষ। হয়তো দীর্ঘদিন পরাধীন থাকার ক্রোদেই এই তাণ্ডবে অংশ নেয় তারা। যা থেকে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। প্রশ্নের সম্মুখীন হয় প্রাপ্ত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানান, অত্যাচারিত জাতি সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পায়। এরপর  দেশের পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার লড়াই শুরু হয়। যার জন্য সদা প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। বলিষ্ঠ ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে স্বাধীনতাকে অম্লান রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। যেন অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও একই চিত্র। নতুন স্বাধীনতাকে স্বাগতম করেছে গোটা দেশ। এই স্বাধীনতাকে ভূলুন্ঠিত করলে পিছিয়ে পড়বে জাতি। বরং কর্মপ্রেরণা, চিন্তাধারা ও শৃঙ্খলাবোধ বজায় রেখেই প্রমাণ দিতে হবে সভ্য জাতির কাঙ্ক্ষিত-স্বাধীনতার।

স্বাধীনতা রক্ষায় যা যা করা যেতে পারে_

নিয়মশৃঙ্খল জীবন

সবাইকে নিয়মশৃঙ্খলতার মধ্যে আসতে হবে। জীবনযাত্রার গতিকে তরান্বিত করতে নিয়মশৃঙ্খলতা অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা কাজের ক্ষেত্রে নিয়মশৃঙ্খলতা বজায় রাখতে হবে।

নিরাপত্তার নিশ্চিত

স্বাধীনতার পর দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। স্বাধীন জাতি যখন নিরাপত্তা পাবে তখনই এর স্বাদ নিতে পারবে। বাড়ি ঘরের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, বাচ্চাদের নিরাপত্তা, পথে চলতে নিরাপত্তাসহ সবক্ষেত্রে জাতিকে নিরাপত্তা দিতে হবে। তবেই জাতি স্বাধীন দেশের স্বাদ পাবে।

শিক্ষিত জাতি

শিক্ষিত জাতি উন্নত দেশের প্রথম শর্ত। তাই দেশের উন্নতির জন্য জাতিকে শিক্ষিত করা প্রয়োজন। সর্বস্তরের মানুষের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে হবে। নূন্যতম পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে। শহর, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে।

শিক্ষার ব্যবস্থার উন্নতি

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিও করতে হবে। স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুকূলে পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে। সর্বজনিন স্বীকৃতি শিক্ষার কারিকুলাম প্রনণয় করা অত্যন্ত জরুরি।

কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগালে দেশের উন্নতি হবে দ্রুত। প্রতিবছরই বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ে। চাকরির পেছনে ছুটছে অনেকেই। কিন্তু চাকরি না পেয়ে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। সেই সঙ্গে কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে। এসব মানুষকে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না ঘুরে, নিজেদের আলাদা কর্মসংস্থান গড়া সম্ভব- এই বিশ্বাস তরুণদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। যে যে কাজে পারদর্শী সেই কাজেই কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে পারে। আর এসব কাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সুচিকিত্সার নিশ্চয়তা

দেশের জনগণের স্বাস্থ্যের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশেই আধুনিক চিকিতসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। ভিনদেশে গিয়ে উন্নত চিকিত্সা পাওয়া যায়-এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চিকিত্সা খাতের দুর্নীতিকে বিদায় জানাতে হবে। ভালো চিকিত্সকের কাছে যেন সবস্তরের রোগীরা চিকিত্সা নিতে পারে সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।

গতিশীল অর্থনীতি

দেশের উন্নতি ধরে রাখতে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখা অত্যন্ত জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলো কীভাবে সুগঠিত করা যায় তার জন্য সুনির্দিষ্ঠ  পরিকল্পনা করতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন তাও পরিকল্পনায় রাখতে হবে। যেকোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের সামঞ্জস্যতা

জীবনযাত্রার মানকে স্বাভাবিক রাখতে দ্রব্যমূল্যের সামঞ্জস্যতা থাকা প্রয়োজন। চাহিদা অনুযায়ী যোগানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। বাজার পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে দ্রব্যমূল্যের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করা যায়।

ইন্টারনেটের স্বদব্যবহার

ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। ইন্টারনেট সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে হবে। সবক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার সুনিশ্চিত করা গেলে কাজের গতিও বাড়বে। জেনারেশন জেড প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহারের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশকে আধুনিকায়ক করতে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিকল্প নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই ইন্টারনেট ব্যবহার যেন নেতিবাচক না হয়। এর জন্য সুষ্ঠু আইনের ব্যবস্থাও থাকা প্রয়োজন।

পর্যটন খাতে উন্নতি

দেশের পর্যটনখাতের উন্নতি হলে বিদেশি পর্যটকের আগ্রহ বাড়বে। দেশের পর্যটন স্পটগুলোকে আকর্ষণীয় করে সাজাতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের জানমালের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।

বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা

উন্নত দেশের জন্য বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে প্রতিটি ধর্মের মানুষগুলোকে সমানভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

Link copied!