পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিনটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে। শ্রমিকদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও অর্জনের কথা স্মরণ করে দিতেই দিনটি উদযাপন করা হয়।
শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ ও নানা রকম অবিচারের প্রতিবাদের মুখেই দিনটি উদ্ভব হয়। এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক দিবস পহেলা মে পালন করা হয় না। বরং সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার দিবসটি পালিত হয় সেখানে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই দিনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকরা এই দিনটি কাজের বাইরে থাকবেন। নিজেদের মতো দিনটি পালন করবেন। আবার অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন অবিচারের প্রতিবাদের জন্য এই দিনটি শ্রমিকরা বেছে নেন। তারা কাজের পরিবেশকে আরও উন্নত করার দাবি জানান। কাজের নিশ্চয়তা চান।
যেভাবে শুরু হয়
১৮৮৬ সালের ঘটনা। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় কোন নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ছিল না। বিশ্রাম ছাড়াই টানা কাজ করতেন শ্রমিকরা।
ব্রিটিশ সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর শ্রমিকরা দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি তোলে। দাবি পূরণে প্রতিবাদ শুরু হয়। `আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন এবং আট ঘণ্টা বিশ্রাম`- এই স্লোগানে প্রতিবাদ চলতে থাকে।
শিকাগো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানা ও ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর কেন্দ্র। পহেলা মে সেখানে বড় আন্দোলন করে শ্রমিকরা। প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক সেখানে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানান। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকে ব্যবসায়ী ও রাজনীতি মহল। এরপর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে যায় হাজার হাজার শ্রমিক। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়। সংঘর্ষে প্রাণ হারান এক শ্রমিক এবং আহত হোন প্রায় শতাধিক। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা ৪ মে শিকাগোর বিখ্যাত হেমার্কেট স্কয়ারে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। সেখানে সংঘর্ষ হয় এবং ৪ বিক্ষোভকারী ও ৭ পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন ৬৭ জন কর্মকর্তা এবং জন ৩০ বিক্ষোভকারী।
ওই ঘটনায় আট জন নৈরাজ্যবাদী খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাদের অনেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এভাবেই শ্রমিকদের ওই আন্দোলন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ওই ঘটনার স্মরণেই ১৮৮৯ সালে ২০ দেশের সমাজকর্মী, শ্রমিক নেতা ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর এক আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে পহেলা মে তারিখকে `মে দিবস` পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
যেভাবে পালিত হয় দিনটি
বিশ্বজুড়ে শ্রমিক দিবসের এই দিনে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মস্কোর রেড স্কয়ারে বিশাল সমাবেশের আয়োজন হতো। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিরা সেখানে যোগ দেন। মে দিবসের দিন সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়। দিনটি উদযাপনে মিছিল ও সামরিক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক ও ইউনিয়নগুলো ভালো কাজের পরিবেশের দাবিতে র্যালি ও সমাবেশ করে। বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়।